Advertisement
০৭ মে ২০২৪

অম্বুবাচিতে জনারণ্য কামাখ্যার নীলাচল পাহাড়

সব পথ এসে মিলে গেল শেষে নীলাচল পাহাড়ের প্রবেশদ্বারে। সারা ভারত তো বটেই ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, আমেরিকা, হল্যান্ড, ইংল্যান্ড থেকেও সন্ন্যাসী আর পর্যটকের ভিড়ে এখন গমগমে অম্বুবাচির কামাখ্যা।

...দিয়ে যায় চেনা। বুধবার গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দির চত্বরে। ছবি: এএফপি।

...দিয়ে যায় চেনা। বুধবার গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দির চত্বরে। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৮:৪৭
Share: Save:

সব পথ এসে মিলে গেল শেষে নীলাচল পাহাড়ের প্রবেশদ্বারে।

সারা ভারত তো বটেই ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, আমেরিকা, হল্যান্ড, ইংল্যান্ড থেকেও সন্ন্যাসী আর পর্যটকের ভিড়ে এখন গমগমে অম্বুবাচির কামাখ্যা।

মৃগশিরা নক্ষত্রের শেষ পাদ ও আর্দ্রা নক্ষত্রের সূচনার সন্ধিক্ষণ হিসেব করে আজ সকাল সাতটা দু’মিনিটে শুরু হয়েছে অম্বুবাচি। বন্ধ হয় কামাখ্যা মন্দিরের দরজা। আগামী ২৫ জুন রাত সাতটা ২৬ মিনিটে অম্বুবাচির নিবৃত্তির পরে ফের মন্দিরের দরজা খুলবে। দর্শন শুরু হবে ২৬ জুন সকাল সাতটায়।

কামাখ্যার সবচেয়ে বড় উৎসব অম্বুবাচি উপলক্ষে এই চারদিনে দশ লক্ষাধিকের ভিড় জমবে নীলাচল পাহাড়ে। মুখ্য সেবায়েত তথা দলৈ কবীন্দ্রপ্রসাদ শর্মা জানান, পুজো করে আনুষ্ঠানিক ভাবে কামাখ্যায় প্রবেশ করেছেন বিভিন্ন আখড়ার সন্ন্যাসীরা। জগৎগুরু শ্রীপঞ্চানন গিরি মহারাজের নেতৃত্বে শাহী শোভাযাত্রা করে দশনামি আখড়ায় প্রবেশ করেন সাধুদের দল। শোভাযাত্রায় ছিল তিনটি হাতি, ২১টি রথ, ২১টি ব্যান্ডপার্টি এবং বেনারসের ডম্বরু-বাহিনী। পঞ্চানন গিরি জানিয়েছেন, পরবর্তীকালে কামাখ্যার এই অম্বুবাচি মেলা পূর্ণকুম্ভের মতোই আন্তর্জাতিক হয়ে উঠবে। অবশ্য এর আগে কামাখ্যার অম্বুবাচিকে সন্ন্যাসীদের একাংশ ‘মিনি কুম্ভ’ আখ্যা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়েছিলেন।

দশনামী আখরায় প্রতিবারই মন্ত্র আর গঞ্জিকার ধোঁয়ায় বিদেশি সাধুরা জমিয়ে বসেন। এবারের ‘শো-স্টপার’ মস্কোর সন্ন্যাসিনী কামাখ্যা ভারতী। নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়ার চেনা গর্জন আর ভুবনেশ্বরী মন্দিরের সামনের বাউল আখড়ায় বাংলার সুর মিলেমিশে অম্বুবাচির থিম গড়ে দিয়েছে প্রথম দিনেই। রাস্তা থেকে কামাখ্যা, ভৈরবী, তারাদেবী, বগলা ও ভুবনেশ্বরী পর্যন্ত বিভিন্ন আকার-প্রকার-রঙের দাড়ির মেলা। কোথাও বিশ ফুট দাড়ি দেখতে খুচরো পয়সার পাহাড় জমছে, কোথাও আবার উল্টে থাকা ছেলের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ব্যায়ামবীর মা। ভক্তদের মোবাইলে রকমারি সাধু ফ্রেমবন্দি হয়ে চলেছেন দিনভর।

গোটা প্রাঙ্গনে নজরদারি চালাচ্ছে তিন শতাধিক সিসি ক্যামেরা। কামাখ্যা স্টেশন, পুরনো পাণ্ডু স্টেশন, সোনারাম ফিল্ড, নাহারবাড়ি ও বংশীবাগান এলাকায় ভক্তদের জন্য খোলা হয়েছে পাঁচটি শিবির। প্রতিটি শিবিরে আছেন একজন করে অতিরিক্ত জেলাশাসক ও বিভিন্ন দফতরের কর্তা। ১২ জন খাদ্য নিরাপত্তা আধিকারিকের নেতৃত্বে ১৯টি স্থানে খাবার বিতরণের জন্য খোলা হয়েছে ভাণ্ডারা। সব শিবিরে আছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দল। প্রবেশদ্বার থেকে কামাখ্যা ধামে যাওয়ার জন্য এএসসিটি শতাধিক বাসের ব্যবস্থা করেছে। বিদ্যুৎ পর্ষদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২১-২৬ জুন যেন কামাখ্যা ধামে বিদ্যুৎ সরবরাহ অবিচ্ছিন্ন থাকে।

অসহিষ্ণুতার আবহে কামাখ্যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তাও দিচ্ছে। অসম গরিয়া যুব ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে সংখ্যালঘু সংগঠনের তরফে ভক্তদের পানীয় জল বিতরণ করা হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে মেলায় আসা-যাওয়ার জন্য কামাখ্যা থেকে মালদহ ও হাওড়া পর্যন্ত দু’জোড়া বিশেষ যাত্রিবাহী ট্রেন চালানো হচ্ছে। খোলা হয়েছে অতিরিক্ত বুকিং কাউন্টার, শৌচাগার। কামাখ্যা থেকে বৈষ্ণোদেবী পর্যন্ত নতুন ট্রেন চালু করার পরে এ বার উত্তর ভারত থেকে কামাখ্যায় ভক্তের ঢল নেমেছে। উত্তর-পূর্ব রেল সূত্রে খবর, শেষ তিনটি ডাউন ট্রেনে একটিও আসন খালি ছিল না। বৈষ্ণোদেবীতে প্রণাম সেরে কামাখ্যায় রওনা হওয়া সন্ন্যাসীর দল এ বার সবাই ট্রেনে চেপে বসেছেন। নাগা সন্ন্যাসীদের বড় একটা অংশও কাটরা স্টেশন থেকে নতুন চালু হওয়া ট্রেনের যাত্রী হয়েছেন। বিশেষ করে তীর্থযাত্রীদের নিয়ে ঘোরানো ভ্রমণ সংস্থাগুলির কাছে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে কামাখ্যা-কাটরা সরাসরি ট্রেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kamakhya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE