Advertisement
E-Paper

মুখ পোড়াল কারা, ধুন্ধুমার সিবিআইয়ে

প্রধান তদন্তকারী অফিসার হিসেবে বিবেক প্রিয়দর্শী দিনের পর দিন এ রাজা, কানিমোঝিদের জেরা করেছিলেন। ২০১৫-য় তাঁকেই আচমকা বদলি করা হয় মধ্যপ্রদেশে। ব্যপম কেলেঙ্কারির তদন্ত-ভার দিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪০
বিক্ষোভ: টুজি কাণ্ডে দেশের মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে বিজেপি— এই অভিযোগ তুলে কংগ্রেস কর্মীদের প্রতিবাদ। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

বিক্ষোভ: টুজি কাণ্ডে দেশের মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে বিজেপি— এই অভিযোগ তুলে কংগ্রেস কর্মীদের প্রতিবাদ। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

আদালতে দাঁড়িয়ে হাজারো অভিযোগ করেছেন। কিন্তু সেটাই লিখিত আকারে দিতে বলা হলে বিবৃতিতে সই করতে রাজি হননি সিবিআইয়ের আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার।

প্রধান তদন্তকারী অফিসার হিসেবে বিবেক প্রিয়দর্শী দিনের পর দিন এ রাজা, কানিমোঝিদের জেরা করেছিলেন। ২০১৫-য় তাঁকেই আচমকা বদলি করা হয় মধ্যপ্রদেশে। ব্যপম কেলেঙ্কারির তদন্ত-ভার দিয়ে।

আর এক তদন্তকারী অফিসার সন্তোষ রাস্তোগির কাজে সন্তুষ্ট হননি তদানীন্তন ডিরেক্টর রঞ্জিত সিন্হা। রাস্তোগিকে বদলি করেন তিনি। মামলা গড়ায় আদালতে। পরে সিন্হাকেই টু-জি তদন্তে নাক না গলানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত ছিল এসার ও লুপ টেলিকম সংস্থা। সিবিআইয়ের অভিযোগ ছিল, লুপ আসলে এসার-এর মুখোশ হিসেবে কাজ করছিল। কিন্তু আদালতে সিবিআই অফিসারদের এক জনও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

সিবিআইয়ের অনেক সাক্ষীই জেরায় যা বলেছেন, কাঠগড়ায় তা স্বীকার করেননি। অনেকের সাক্ষ্য আবার সরকারি নথির বিপরীত।

টু-জি কাণ্ডে বিশেষ আদালতের রায়ের সূত্র ধরে এখন সিবিআইয়ের অন্দর থেকে এমন অনেক ‘কেলেঙ্কারি’ বেরিয়ে আসছে।

এ রাজা, কানিমোঝি থেকে আমলা-কর্পোরেট জগতের এক জনকেও দোষী সাব্যস্ত করতে পারেনি সিবিআই। এ নিয়ে তুলকালাম বেধেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। হাইকোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আর্জি জানানোর আগে কার ‘সৌজন্যে’ এমন হল, তা খুঁজতে ময়নাতদন্ত শুরু করেছেন সিবিআই অধিকর্তা অলোক বর্মা। তাতেই নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্তাদের মতে, রাজা-কানিমোঝিদের খালাস করে দিয়ে বিচারক ওমপ্রকাশ সাইনি কার্যত সিবিআইকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি রায়ে বলেছেন, সিবিআই কী তদন্ত করছিল, কী প্রমাণ করতে চাইছিল, সেটাই স্পষ্ট নয়।

টু-জি কেলেঙ্কারির প্রধান প্রতিপাদ্য ছিল, নামী টেলি-সংস্থাগুলি ভুয়ো সংস্থা গড়ে সস্তায় স্পেকট্রাম আদায় করেছে। তা প্রমাণ করতে হলে সিবিআই-কে প্রমাণ করতে হতো, এই সংস্থাগুলি সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করেছে। কিন্তু বিচারক রায়ে লিখেছেন, নির্দেশিকার ভাষাই অফিসারদের কাছে স্পষ্ট ছিল না।

আদালতের রায়ের পরে প্রাক্তন অধিকর্তা রঞ্জিত সিন্হা বলছেন, ‘‘আগেই বলেছিলাম, তদন্ত ভুল পথে চলছে।’’ কিন্তু তাঁর কথা মানছেন না প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্তারা। কারণ অভিযুক্ত টেলি-সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি নিজেই এখন সিবিআই তদন্তের আওতায়।

সিবিআইয়ের আইনজীবীদের নিয়েও প্রশ্ন তুলে বিচারক সাইনি বলেছেন, সিবিআইয়ের সরকারি আইনজীবী ও বিশেষ আইনজীবী গ্রোভারের মধ্যে কোনও সমন্বয় ছিল না। গ্রোভার যা মুখে বলতেন, সেটাই লিখিত বিবৃতি হিসেবে দিতে বলা হলে তিনি তাতে সই করতে চাইতেন না।

সিবিআইয়ের প্রাক্তন কর্তারা মানছেন, টু-জি রায় সিবিআইয়ের দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। এর আগেও অসংখ্য মামলায় সাড়া জাগিয়ে তদন্তে নেমেও শেষ পর্যন্ত আদালতে মুখ পুড়িয়েছে সিবিআই। বফর্স মামলায় হিন্দুজা ভাইদের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ। রাজীব গাঁধী হত্যা থেকে আরুষি-খুন বা কর্নাটকের বেআইনি খনন কেলেঙ্কারি তদন্ত— সিবিআইয়ের ব্যর্থতার তালিকা দীর্ঘ। সাম্প্রতিক কয়লা খনি বণ্টন দুর্নীতি থেকে লালু প্রসাদের গোখাদ্য কেলেঙ্কারি— চার্জশিট দায়ের করায় ঢিলেমি নিয়ে আদালত প্রশ্ন তুলেছে।

সিবিআইয়ের সেই ব্যর্থতার তালিকায় এ বার যুক্ত হল টুজি— যা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বড় অস্ত্র ছিল বহু দিন।

2G spectrum case failures CBI Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy