শব্দদানবের তাণ্ডব নিয়ে সর্বত্র হইচই চলছে। পুলিশ-প্রশাসন বারবার প্রচার করেও থই পাচ্ছে না। নিয়ম জারি করে, শাস্তির ভয় দেখিয়ে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না বহু জায়গায়। শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ বা হাসপাতালের শয্যায় রোগী— শব্দবাজির দাপটে নাজেহাল।
কিন্তু ওঁরা ব্যতিক্রমী। তাই ওঁরা পেরেছেন। আর চমকে দিয়েছেন সবাইকে। দীপাবলিতে ওঁরা কোনও বাজি ফাটান না। দীর্ঘ সতেরো বছর। তাতে ওঁদের আনন্দ এতটুকু কম পড়ে না। ইদানীং অবশ্য একটু আধটু আলোর বাজির ঝলক দেখা যায় গ্রামগুলোতে। তবে ওই টুকুই। গ্রামের বড়দের কড়া শাসনে ছোটরাও বুঝে গিয়েছে, আনন্দ মানে আলো। শব্দ থেকে ওরাও দূরে থাকতেই ভালবাসে।
তামিলনাড়ুর ভেলোর পাখিরালয়ের আশপাশের আটটি গ্রামের বাসিন্দা ওঁরা। অন্তত সাড়ে সাতশো পরিবারের বাস গ্রামগুলোতে। ওই আটটি গ্রামের কাছে ৮০ হেক্টর জমি জুড়ে ১৯৯৬ সালে তৈরি হয় এই পাখিরালয়। তার বছর তিনেকের মধ্যে গ্রামবাসীরা ঠিক করেন, আর তাঁরা শব্দবাজি ফাটাবেন না। কারণ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পাখিরালয়ে যে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি ভিড় জমায়, বাজির শব্দে তাদের অসুবিধা হবে।
অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড থেকে শয়ে শয়ে পাখি উড়ে আসে ওই সময়ে। বাসা বানায়। ডিম পাড়ে। তার পরে দু’-তিন মাস থেকে ছানাদের নিয়ে ফিরে যায় নিজেদের ঠিকানায়। চিন্নাস্বামী গৌন্ডের (৭৩) জানালেন, তাঁরাও দীপাবলির সময় আগে বাজি পোড়াতেন। কিন্তু পাখিরালয় প্রতিষ্ঠার পরে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিলেন, কাজটা ঠিক হচ্ছে না। পাখিদের অসুবিধের কথা চিন্তা করে তাঁরা উৎসবে না হয় একটু কম আনন্দ করলেন।
চিন্নাস্বামীর মতো ভেবেছিলেন বাকিরাও। আটটি গ্রামের মানুষ এককাট্টা হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় খুশি প্রশাসনও। আর এক গ্রামবাসী বললেন, ‘‘এর আগে আলোর বাজিও জ্বালাতাম না। তবে আজকাল বাচ্চারা এত আব্দার করে। তাই বাধ্য হয়ে অল্পস্বল্প ফুলঝুরি, রংমশাল জ্বালাতে দিতে হচ্ছে এখন।’’ আলোর বাজিতেও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ধোঁয়ায় যেন পাখিদের কষ্ট না হয়, বলেন ওঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy