Advertisement
E-Paper

ছবি-কলেজ, বাজার ও ব্যান্ডপার্টি

জ্যৈষ্ঠশেষে ‘গুরু গুরু’ বাদ্যি বাজিয়ে আকাশের দরজা-জানালা খুলতে শুরু করেছে। গরমের ছুটি ফুরোতে স্কুল-কলেজের দরজাও খুলেছে, খুলছে। কেউ পরীক্ষায় পাশ দিয়ে নতুন উঁচু ক্লাসে উঠছে। কেউ বা রীতিমতন সাবালক হয়ে, স্কুলের গণ্ডি ডিঙ্গিয়ে ঢুকে পড়ছে কলেজে। আমাদের সময়ে বেশির ভাগ ছাত্ররাই ‘বড়’ হওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুল প্যান্টের অবাক দুনিয়ায় ঢুকে পড়ত।

মিলন মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০০:০৩

জ্যৈষ্ঠশেষে ‘গুরু গুরু’ বাদ্যি বাজিয়ে আকাশের দরজা-জানালা খুলতে শুরু করেছে। গরমের ছুটি ফুরোতে স্কুল-কলেজের দরজাও খুলেছে, খুলছে। কেউ পরীক্ষায় পাশ দিয়ে নতুন উঁচু ক্লাসে উঠছে। কেউ বা রীতিমতন সাবালক হয়ে, স্কুলের গণ্ডি ডিঙ্গিয়ে ঢুকে পড়ছে কলেজে। আমাদের সময়ে বেশির ভাগ ছাত্ররাই ‘বড়’ হওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুল প্যান্টের অবাক দুনিয়ায় ঢুকে পড়ত। এখনকার তো কথাই নেই। বলতে গেলে, এ রাজ্যের আধুনিক মায়েরা তো ‘সখের প্রাণ-গড়ের মাঠ’ হিসেবে প্রসূতি সদন থেকে বেরোলেই ‘দোনলা পেন্টুল’ পরিয়ে দেন সন্তানদের।
সে যাক গে। স্কুল-কলেজের কথায় মনের তাজমহলে প্রকট হল শিক্ষা-দীক্ষার বিষয়। পাঠশালা, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন না হয় ছেড়ে দেওয়া গেল। তার পরেই ভাবনা শুরু হয় সন্তানকে কোন লাইনে ঠেলতে হবে? কোনও বিশেষ ব্যাপারে আগ্রহ থাকলে প্রথমে সে দিকে ঠ্যালা দেবার কথাই মাথায় আসে। আজকাল, যেহেতু বালক-নাবালকদের কৌতূহল দিগ্বিদিকে, তাই সকলেই দিকভ্রান্ত হয়ে টেকনোলজি, ডাক্তারি-বিদ্যা, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি লাইনের দিকে গুঁতো মারেন। কারণ এদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল—রোজগারপাতি অধিকতর। সাদামাটা সায়েন্স বা কমার্স লাইনের চাহিদা বেশ কম। ‘আর্টস’ তো প্রায় তপসিলি জাতির পর্যায়ে। সবচেয়ে কম নম্বরে পাশ করলে—আর কোথায় বাছা! ওই আর্টসই অগতির গতি।

দন্ত্য-‘স’টি বাদ দিয়ে ‘আর্ট’ লাইনের দশা ছিল আরও করুণ। ইদানীং ‘শিল্পকলা’ মনে হয় আগের থেকে উন্নত হয়েছে। ‘‘আইএ, বিএ পাশ করলে কোনও লাইন ধরা মুশকিল। আঁকার হাত ভাল। ঢুকে যাক আর্ট কলেজে।’’

বর্তমান যুগের ‘আর্ট লাইন’ সম্পর্কে জ্ঞানগম্যি বেশি নেই। দু’চার দশক আগের দশা ব্যক্ত করা যাক।.... শিল্প-বিদ্যা-শিক্ষার দরজায় কড়া নাড়ার আগে কিঞ্চিৎ প্রস্তাবনা প্রয়োজন। ‘চিত্রকলাশিল্প’ বিষয়ে বিশদ হবার চেষ্টা করতে গেলে, প্রথমেই পাহাড় প্রমাণ প্রশ্নটি পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কোথাকার চিত্রশিল্প বা ‘ছবি’ নিয়ে লেখা হবে? স্ব-প্রদেশের, স্বদেশের না বিশ্বের? নাড়ির টানে অথবা গভীর মমত্ববোধ থেকে যদি শুধু বঙ্গদেশের শিল্প প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রবৃত্ত হই, তাহলে ‘একপেশে’ আখ্যায় ভূষিত হবার সম্ভাবনা। যা আদপেই বাঞ্ছনীয় নয়। অপর পক্ষে, নিখিল বিশ্বের দিগন্ত বিস্তৃত ক্যানভাসের ইতিহাস-ভূগোল তো অকূলপাথার! প্রস্তাবনা বা নান্দীমুখ হিসেবে এই ইতিহাস বা প্রাক-ইতিহাস থেকে কিঞ্চিৎ ‘সময়’ তুলে নেওয়া যাক—ধার হিসেবে।

জীবজগতের শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষই বোধহয় সর্বপ্রথম নানান অঙ্গভঙ্গি ও ধ্বনির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশের চেষ্টায় প্রবৃত্ত হয়। যাকে ইংরেজিতে এককথায় ‘কমিউনিকেশান’ বলা যায়। গোষ্ঠীবদ্ধ আদি মানব বাস করত গুহায়। দলপতি তথা সাঙ্গোপাঙ্গরা দিবসান্তে শিকার করে ফিরে এসে উত্তেজিত ভঙ্গিতে শিকার-কাহিনি প্রকাশের চেষ্টা করত দলের অন্যান্যদের কাছে। প্রাক-ইতিহাস মতে সেই সময়েই সম্ভবত প্রথম ‘কমিউনিকেশানের’ উন্নততর মাধ্যম সৃষ্টি হয়। ‘কথা’ বা ‘বুলি’ নয়। ‘ছবি’। ছবি এঁকে এঁকে আপন বীরত্বের, সাহসের তথা উত্তেজনাময় ঘটনাবলির গল্প শোনাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত আদি মানব। সুতরাং গুহাচিত্রে গল্প বা কাহিনি এক দিকে যেমন পৃথিবীতে প্রাথমিক চিত্রশিল্পকলার নিদর্শন বলে গ্রাহ্য, অপর দিকে তেমনই এই ‘ছবি’ বা ‘ইলাস্ট্রেশন’ই কমিউনিকেশানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ধরে নিতে কোনও বাধা নেই। এই প্রসঙ্গে লক্ষণীয়, পাশাপাশি আরও একটি বা দুটি শিল্পের প্রাথমিক সূত্রপাত ঘটেছে সমসময়ে। গল্পরচনা ও অভিনয়। সে আবার অন্য পৃথিবী।

স্বদেশের বা ‘মেরা ভারত মহানে’র চিত্রশিল্পী ইত্যাদি বিষয়ে ভাবতে গেলে দিশেহারা দশা হওয়া স্বাভাবিক। এ যেন সেই মধ্যযুগের পঞ্চান্ন-ব্যঞ্জন-পরিবৃত ভাতের থালা। না। ঠিক বোঝানো গেল না। বরং বলা যায়, ‘লাবড়া’ বা নানাবিধ ব্যঞ্জন- সমৃদ্ধ ‘জগা-খিচুড়ি’। ভারতীয় কলার বর্তমান চেহারাটিকে একটি মস্ত ক্যানভাস বা পটে কল্পনা করুন, দেখবেন, কেমন যেন বিশৃঙ্খল দৃশ্যাবলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মনে হতেই পারে, একটি বহু বর্ণে রঞ্জিত, বহু রাজ্য বা প্রদেশের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির তালগোল পাকানো চেহারা। তাবৎ ভারতীয় ভাষাগুলিকে যদি সহসা একসঙ্গে শুনতে হয়—তাহলে যে গোলমাল শ্রুতিগোচর হবে—সেই রকমই অনেকটা।

আজকের ভারতীয় শিল্পকলা হয়তো রেগেমেগে পেছন ফিরে দেখতে চাইছে। চোখে যথেষ্ঠ রাগ, কিড়মিড় করছে দাঁত—অথচ একই সঙ্গে বোকা-বোকা হাসি দিয়ে বলতে হচ্ছে— ‘থ্যাংক ইউ’’। যেন অতীত মুচকি হেসে বলেই ফেলেছে, ‘‘খোকা তোমার ইজেরের বোতাম খোলা—’’!

ফলে, আমরা, মডার্ন আর্টিস্টরা বোতাম-টোতাম শক্ত করে লাগিয়ে, পশ্চিমকে অথবা দূরতর প্রাচ্যকে নকল করতে তৎপর হই দ্রুত পরিচিতি তথা অর্থনৈতিক লাভের আশায়। আমাদের কলকাতার সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে একটি বিভাগ ছিল—এখনও আছে— ইন্ডিয়ান স্টাইল অফ পেইন্টিং। বিভাগটির প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সহকারে প্রণাম জানিয়ে ব্যক্ত করা যায় যে, প্রতি বছর নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তির সময় ইনি চাতকপাখির মতন তৃষ্ণার্ত নয়নে চেয়ে থাকেন অন্যান্য বিভাগগুলির দিকে। কারণ, বাকি বিভাগগুলির চাহিদা ভাবী শিল্পীদের মহলে অনেক বেশি। ব্যবহারিক শিল্প বা অ্যাপলাইড তথা কমার্শিয়াল আর্ট বিভাগটির চাহিদা তখন তুঙ্গে। পাশ-টাশ দিয়ে বেরোলে অন্তত বিজ্ঞাপন কোম্পানিগুলিতে চাকরি পাবার সমূহ সম্ভাবনা বা আশা থাকে।

দু’নম্বরে ঠাঁই ফাইন আর্ট বা চারুকলা বিভাগের। প্রথম প্রথম আর্ট কলেজের বছরগুলিতে আমরা সবাই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বা মাইকেল্যাঞ্জেলো, গোগ্যাঁ, ভানগখ বা পিকাসো। সেই চোখ দিয়ে দেখলেই পরিষ্কার বোধগম্য হবে— ফাইন আর্ট ডিপার্টমেন্টের কদর। তা ছাড়া, দশক দুই দিন আগেও ভারতীয় চিত্রকলার যথেষ্ঠ আকর্ষণ ছিল সাগরপারে, পশ্চিমে। যদিচ, বিষয়বস্তু ছিল সীমিত। যথা, সাপুড়ে বা সাপ-খেলা, দড়ির ভোজবাজি, ডেকোরেটিভ হাতি বা মুঘল মিনিয়েচার। অথবা যামিনী রায়, নন্দলাল বসু জাতীয় জল রং, টেম্পারা ছবি।

তৃতীয় নম্বরে থাকে ভাস্কর্য বিভাগ। ভাবী ভাস্কররাও মনে মনে স্বপ্ন দেখে থাকেন ছাত্রজীবনে—রোদ্যাঁ, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো অথবা নিদেন দেশজ দেবীপ্রসাদ-রামকিঙ্কর হবার। ফলে, চারে বা তালিকার সবশেষে প্রায় তলানি হিসেবে ঊর্ধ্বমুখে চেয়ে থাকেন ইন্ডিয়ান স্টাইল অফ পেইন্টিং। ক’টি ছাত্র উক্ত তিন বিভাগ থেকে বাতিল হল—তারই প্রতীক্ষায়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান্তে পুরো দস্তুর শিল্পী হয়ে, ডিগ্রি, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট বগলদাবা করে তো বেরোনো গেল সদর্পে। তার পর? অতি প্রাচীন একটি ‘আধুনিক’ গান মনে পড়ে। ‘তার আর পর নেই, নেই কোনও ঠিকানা—’। সত্যিই ঘটনা অনেকটা সেই রকম। আলগা হিসেব করলেই চেহারাটি স্পষ্ট হবে। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে খান সাতেক শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা আর্ট স্কুল-কলেজ রয়েছে। সরকারি আর্ট কলেজ, ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ, রবীন্দ্র ভারতী, আকাদেমি, বিশ্বভারতী, বিড়লা আকাদেমি, বর্ধমান আর্ট কলেজ। এ ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের খয়ড়াগড় আর্ট ইউনিভার্সিটির একটি বড়-সড় শাখা কলকাতায় শুরু হচ্ছে শোনা গেল। গোটা বিশ্বের হিসেবে গিয়ে খেই ধরবার সাহস নেই। স্রেফ ভারতের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থেকে আন্দাজ করা যাক। ‘মেরা ভারত মহান’এর মাটিতে কম বেশি বিশ পঁচিশটি রাজ্যের প্রতিটিতে গড়ে যদি নিদেন পক্ষে তিন চারটিও আর্ট স্কুল-কলেজ বা শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে থাকে, তাহলে বালাই, ষাট থেকে শ’খানেক ছবি-আঁকা-বিদ্যে শেখার আখড়া স্রেফ এ দেশেই বর্তমান। প্রত্যেকটি বিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর গড়ে অন্তত পঞ্চাশ জন কৃতী ছাত্র ডিগ্রি-ডিপ্লোমা-সার্টিফিকেট নিয়ে রীতিমতন পাশ-করা শিল্পী আখ্যার প্রমাণপত্র-সমেত বের হন।

এখন কথা হচ্ছে, শিল্প-শিক্ষায়তনগুলি ফি বছর এই যে হাজার হাজার শিল্পীদের বিদ্যে গিলিয়ে উগড়ে দিচ্ছে বাজারে— তারা যান কোথায়? একসময় দূরদর্শন তথা নাট্যজগতে বেশ নামকরা মানুষ জোছন দস্তিদারকে মনে পড়ে। ওঁর পিতৃদত্ত নাম জ্যোৎস্নাময় ঘোষ দস্তিদারকে ছোট, সহজপাচ্য করা হয়েছিল। আর্ট কলেজের ভাস্কর্য বিভাগের ফাইনাল ইয়ারে ছিলেন, যখন বর্তমান কলমচি ফার্স্ট ইয়ারে নিতান্তই কিশোর। সেই জোছনদার কাছেই পরে একটি ঘটনা বা গল্প শুনেছিলুম ওর সহপাঠীর বিষয়ে। যদ্দুর মনে পড়ে, তাঁর নাম ছিল বোধহয় সত্যসাধন। তা এই সত্যবাবুর বিয়ে হতে হতে নাকি ভেঙে যায়। পাত্র ‘ছবি’ আঁকে শুনেই কন্যেপক্ষ আঁতকে ওঠে, বেঁকে বসেন। তাঁদের মোদ্দা দুশ্চিন্তাই ছিল যে, শিল্পীদের রোজগারপাতি সাধারণতই নেই। চাকরি-টাকরি জুটলেও বড় জোড় স্কুলের ড্রইং মাস্টার। আর স্কুলের মাস্টারদের চিরন্তন ছবি সেই মধ্য যুগ থেকে প্রায় একই রকম। জীবনযুদ্ধে হা-ক্লান্ত, বিধ্বস্ত সৈনিক। নাকের ওপরে নিকেল ফ্রেমের চশমা, বগলে জীর্ণ ছাতা—হেঁটমুণ্ড হেঁটে চলেছেন কবে থেকে! স্কুলের ড্রইং মাস্টারের মাসমাইনেতে নিজের খোরাক জোটে না। বউকে খাওয়াবে কি!

দূরে যাওয়ার দরকার নেই। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়। উকিল পিতৃদেবের মতে, আইনের ব্যবসা ভাল। ইচ্ছে ছিল প্রথম পুত্রকে না পারলেও দ্বিতীয়টিকে ল’ পড়াবেন। স্কুল ফাইনালের পর যখন শুনলেন, ‘‘আমি ছবি আঁকা শিখব’’—হতভম্ব চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে দেখলেন। কারণ, গত ষাটের দশকের গোড়ায় মধ্য বয়সি উকিল-ডাক্তাররা সকলেই তেমন ওয়াকিবহাল ছিলেন না এই বিষয়ে। অর্থাৎ ‘‘ছবি আঁকবে, আঁকো, ভাল কথা। কিন্তু কাজকর্ম বা রোজগারের লাইন কোনটা নেবে? সায়েন্স না কমার্স? বড় হয়ে কী হবে?’’

আর যাই হোক সে সময় পর্যন্ত অন্তত ছবি আঁকাকে কোনও মতেই সিরিয়াস উপার্জনের পথ হিসেবে ধরা হত না। ফলে, ফি-বছর শিল্পবিদ্যাপীঠগুলি যে হাজার হাজার প্রফেশনাল আর্টিস্ট বিয়োচ্ছে, তাঁদের হদিশ স্রেফ আর্ট-লাইনেও পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ইদানীং যদিচ, শিল্প তথা শিল্পীদের চাহিদা যথেষ্ঠ বেড়ে গেছে। এককথায় বলতে গেলে সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার ঊর্ধ্বে উঠে গেছে বাজার। তথাপি, যাঁরা তলিয়ে ছিলেন, তাঁদের শতকরা নব্বুই জন তলানিতেই রয়ে গেছেন। তবে আমরা সাবই জানি, মানুষের ‘সৃষ্টি’ যে কোনও শিল্পেরই ভালমন্দ বিচার নির্ভর করে ‘সময়ের’ হাতে। ‘সময়ে’র কষ্টিপাথরে যে ছবি টিকে গেল, সেটিকেই আমরা শুদ্ধ বা ভাল ছবি বলে ধরে নেব। কিন্তু আজ এই নব্য যুগে ভালমন্দ নির্ভর করছে ‘চিৎকারের’ ওপর। স্বকণ্ঠেও নয়, পরের মারফত ব্যান্ড বাজিয়ে। অর্থাৎ কিনা প্রচারমাধ্যম। ইংরেজিতে বলে ‘হাইপ’ সৃষ্টি করে। আহা! তা না হলে জীবিত অবস্থায় খেতেও পাব না। পরিশ্রম করলুম আমি, না খেতে পেয়ে মারাও গেলুম— মরণোত্তর মেডেল কি আমার ফোটোর গলায় ঝোলাবে পরবর্তী প্রজন্ম!...

কোনও এক প্রিয়জনের মৃত্যুর পর কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত লাইন মনে পড়ে—

‘‘মৃত্যুর আগের দিন তাহাকে কি সুন্দর দেখালো—’’!

কবরে শব হয়ে, শ্মশানে চিতাভস্ম হয়ে তো আর দেখতে যাব না ‘ক্রিস্টিজ’ বা ‘সথবিজে’র নিলামে আমার আঁকা ছবি বিক্রি হল কত কোটি টাকায় বা ডলারে? সুতরাং, হে শিল্পী বন্ধুগণ! সামান্য আড়াল নিয়ে নিজের ঢাক নিজেই পেটান। আপন স্বাক্ষরটিকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে বাজারে ছাড়ুন, তবেই তো বাড়ি-গাড়ি-এরোপ্লেন আপনার দোরগোড়ায় অহোরাত্র অপেক্ষায় থাকবে। দেখবেন পাবলিক আপনার ‘সই’ খাচ্ছে। বাজারে চড় চড় করে চড়ছে আপনার ‘সই’ করা ছবির দাম।

ভিন্ন রূপে ফিরে যাওয়া সেই অরণ্যে, সেই গুহায়। গুহা-মানবরা বুক চাপড়ে পাথুরে দেওয়ালে ছবি এঁকে নিজেদের অহঙ্কার প্রকাশ করত। এ যুগে, আমরা আসুন, ব্যান্ডপার্টির বাজনা-বাদ্যি পিটিয়ে বাজার জয় করি— এই পৃথিবী, হে ক্রেতা ভাই, ‘‘করছো তুমি কি? এই দেখো না কেমন আমি ছবি এঁকেছি’’!!

mumbai milan mukhopadhyay indian art
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy