Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মুম্বই হামলায় যাবজ্জীবন আবু সালেমের

১৯৯৩-এর ১২ মার্চ। দুপুর দেড়টা থেকে তিনটে চল্লিশের মধ্যে মোট বারো বার কেঁপে উঠেছিল দেশের বাণিজ্যনগরী।

আবু সালেম।

আবু সালেম।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫০
Share: Save:

গত জুনেই শেষ হয়েছিল দোষী সাব্যস্তের পালা। বাকি ছিল সাজার মেয়াদ ঘোষণা। ১৯৯৩ সালের মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ কাণ্ডে অবশ্য আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনেই ফাঁসি হল না ‘আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন’ আবু সালেমের। বিশেষ টাডা আদালত আজ সালেমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। তার সঙ্গেই যাবজ্জীবন জেল হয়েছে এই হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত করিমুল্লা খানের। ফাঁসির সাজা হয়েছে তাহের মার্চেন্ট আর ফিরোজ আব্দুল রশিদ খানের। আর এক অভিযুক্ত রিয়াজ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে অন্য অভিযোগে দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

১৯৯৩-এর ১২ মার্চ। দুপুর দেড়টা থেকে তিনটে চল্লিশের মধ্যে মোট বারো বার কেঁপে উঠেছিল দেশের বাণিজ্যনগরী। হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ২৫৭ জনের। আহত হন সাতশোরও বেশি মানুষ। চব্বিশ বছর আগে ‘টেররিস্ট অ্যান্ড ডিজরাপটিভ অ্যাক্টিভিটিস (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট’ বা টাডা আদালতে শুরু হয় এই জঙ্গি হামলার শুনানি। দাউদ ইব্রাহিম এবং টাইগার মেমনকে এই হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল সিবিআই। এঁরা দু’জনেই পলাতক। কিন্তু আবু সালেম, ফিরোজ আব্দুল রশিদ খান, তাহের মার্চেন্ট, করিমুল্লা খান, মুস্তাফা দোসা, রিয়াজ সিদ্দিকি-র মতো চক্রীদের গত জুন মাসে দোষী সাব্যস্ত করে টাডা আদালত। মাস খানেক আগে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় মুস্তাফার। ২০১৫ সালে ফাঁসি হয় এই মামলায় অপর অভিযুক্ত ইয়াকুব মেমনের। বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূল চক্রী টাইগারের ভাই ছিল ইয়াকুব।

আরও পড়ুন:খুনি কে, একমত নন ভাইবোনই

হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র গুজরাত থেকে মুম্বই আনার দায়িত্ব ছিল আবু সালেমের। এ ছাড়াও বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকে একে-৪৭-এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছিল সালেম। বেআইনি অস্ত্র মামলায় আগেই জেল খেটেছেন সঞ্জয়। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ভারত থেকে পালিয়ে গিয়েছিল সালেম। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে ধরা পড়ে সে। ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে পর্তুগাল থেকে প্রত্যর্পণ করা হয় তাকে। ২০০৬ সালে আলাদা করে সালেমের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়। কিন্তু সালেমের মতো জঙ্গিকে ফেরানোর সময় কিছু শর্তে রাজি হতে হয়েছিল ভারত সরকারকে। সালেমের প্রত্যর্পণের দু’বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০০৭ সালে পর্তুগাল আর ভারত সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যার মূল শর্ত ছিল, এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণ মামলায় সালেম দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে না। সিবিআইয়ের আইনজীবীরা সেই মতোই সালেমের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ যাবজ্জীবনের জন্য সওয়াল করেন। চুক্তি অনুযায়ী সেই যাবজ্জীবনের সর্বোচ্চ মেয়াদও হবে ২৫ বছর।

রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি। কেন্দ্রে ইউপিএ জমানায় সালেমকে প্রত্যর্পণ করা হয়েছিল। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ এস সুরজেওয়ালা টুইটারে আজ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে সেই ‘কৃতিত্ব’ও নিয়েছেন। লিখেছেন, ‘‘অবশেষে সুবিচার হল। এ বার দাউদ আর মেমনের পালা।’’ একই সুরে আজকের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। দলীয় মুখপাত্র জিভিএল নরসিমা বলেছেন, ‘‘মোদী সরকার এক দিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই রায়ই দেখিয়ে দিল সন্ত্রাসবাদীরা যাতে কোনও মূল্যে ছাড় না পায়, তার জন্য এ দেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abu Salem Mumbai Blast আবু সালেম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE