গিরিরাজ সিংহের মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের ছায়ায় শুরু হওয়া বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে নতুন বিতর্ক দানা বাধল লালকৃষ্ণ আডবাণীকে ঘিরে।
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর আক্ষরিক অর্থে এটাই বিজেপির প্রথম জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। এর আগে সভাপতি পদে অমিত শাহকে বসানোর সময়ে একটি কর্মসমিতির বৈঠক হয়েছিল দিল্লিতে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর বৈঠকের লক্ষ্য দলের নীতি নির্ধারণ। যার শুরুতেই বিতর্কের শিরোনামে আডবাণী। ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদীকে লোকসভা ভোটের প্রচার কমিটির প্রধান করার সময়েই গোয়ায় কর্মসমিতির বৈঠক বয়কট করেছিলেন এই প্রবীণ নেতা। এ বার আর বৈঠক বয়কট করছেন না তিনি। কিন্তু দলের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, কর্মসমিতির বৈঠকে তিনি প্রতি বার যেমন বক্তৃতা দেন, এ বার আর দিতে চান না।
কেন? আডবাণীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নব্বই ছুঁইছুঁই এই নেতা সংসদে কিংবা দলের বৈঠকে আমন্ত্রণ পেলে হাজির হন ঠিকই, কিন্তু সর্বত্রই নীরব থাকেন। মোদী জমানায় তাঁকে সংসদীয় বোর্ড থেকে বাদ দিয়ে পথপ্রদর্শক কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সেই কমিটির কোনও বৈঠক আজ পর্যন্ত হয়নি। দলে প্রবীণতন্ত্রের অবসানের সুস্পষ্ট বার্তা পড়ে নিতে ভুল হয়নি আডবাণীর। যে বার্তা কর্মসমিতির বৈঠকেও স্পষ্ট।
অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন কর্মসমিতির বৈঠকের সমাপ্তি বক্তৃতা তিনিই দিতেন। তাঁর ঠিক আগে বলতেন আডবাণী। সক্রিয় রাজনীতি থেকে বাজপেয়ী সরে যাওয়ার পর আডবাণী সমাপ্তি বক্তৃতা দিতেন। কিন্তু নতুন জমানায় সেই জায়গা কেড়ে নিয়েছেন মোদী। তাই দলের সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রামলাল যখন কিছু দিন আগে আডবাণীর সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন তিনি জানিয়ে দেন, এ বার আর কোনও বক্তৃতা দিতে তিনি আগ্রহী নন।
দলের প্রাক্তন সভাপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু অবশ্য আজ ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, সাধারণত আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতাদের বক্তৃতা দেওয়ানোর জন্য দলের সভাপতির নিজে গিয়ে অনুরোধ করা উচিত। সভাপতি থাকার সময় বেঙ্কাইয়াও প্রতি বার তা করতেন। কিন্তু এ বার অমিত শাহ সেই অনুরোধ না করেই আজ বেঙ্গালুরু চলে আসেন। দিল্লিতে দলের জাতীয় পরিষদের গত বৈঠকে আডবাণী সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, অমিত শাহের অনুরোধেই তিনি রাজি হয়েছেন। তা না হলে তাঁর বক্তৃতা দেওয়া আর পছন্দ নয়। তবে শোনা যাচ্ছে, আজ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বোঝাতে পারেন অমিত। আজ রাতেই বেঙ্গালুরু পৌঁছেছেন আডবাণী।
দলের তরফে বলা হচ্ছে, আডবাণী যদি বক্তৃতা দিতে চান, তা হলে তাঁকে আটকাবে কে? দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেনের কথায়, “সব প্রবীণ নেতাই বক্তৃতা দেবেন। তবে এটা ঠিক, সমাপ্তি বক্তৃতা মোদীই দেবেন।” সন্ধ্যায় আডবাণী-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “দলের রাশ এখন মোদীর হাতে। এই প্রথম ঘটা করে বিদেশনীতি নিয়ে একটি প্রস্তাব আনা হচ্ছে। যেখানে গোটা বিশ্বে কী ভাবে ভারতের স্থান উন্নত হয়েছে, তা তুলে ধরা হবে। দল খুব বেশি জোর করলে হয়তো আডবাণী বলতে রাজি হতে পারেন। তা না হলে তাঁর বলার কোনও ইচ্ছে নেই।”
বিজেপির কিছু নেতার মতে, ভিতরে ভিতরে আডবাণীরা এখনও মোদীর ওপরে বেজায় চটে রয়েছেন। দিল্লিতে হারের পর আডবাণী দলের ভেতরের ক্ষোভকে সংগঠিত করার চেষ্টাও করেছিলেন। আরএসএস অমিত শাহকে কাঠগড়ায় তুলে সতর্কবাণী শুনিয়েছিল বটে, কিন্তু প্রকাশ্যে কোনও নেতা বিক্ষোভ দেখাতে পারেননি। বক্তৃতা দিতে না চেয়ে আডবাণী আসলে সেই অন্দরের ক্ষোভকেই উস্কে দিতে চেয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন। বস্তুত, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আজ বেঙ্গালুরুতে দলীয় পদাধিকারীদের বৈঠকে মোদী ভাল কাজের জন্য অমিত ও তাঁর টিমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আডবাণী যদি শেষ পর্যন্ত বক্তৃতা দেন এবং সেখানে দলীয় নেতৃত্বকে কোনও খোঁচা দেন, তা হলে কর্মসমিতির বৈঠকের লক্ষ্যটাই নড়ে যাবে। তাই আগেভাগেই মূল সুরটি বেঁধে দিলেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy