Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ওবামার পর সহিষ্ণুতার পাঠ কেরির মুখে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ‘চায়ে পে চর্চা’-য় ফুটে উঠেছিল সম্পর্কের উষ্ণতা। কিন্তু ঠিক তার পরেই ভারতীয় সমাজে অসহিষ্ণুতার প্রসা নিয়ে কড়া কথা শুনিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

দিল্লি আইআইটিতে ছাত্রদের সঙ্গে জন কেরি। ছবি: পিটিআই।

দিল্লি আইআইটিতে ছাত্রদের সঙ্গে জন কেরি। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৪
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ‘চায়ে পে চর্চা’-য় ফুটে উঠেছিল সম্পর্কের উষ্ণতা। কিন্তু ঠিক তার পরেই ভারতীয় সমাজে অসহিষ্ণুতার প্রসা নিয়ে কড়া কথা শুনিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

ঠিক দেড় বছর আগের ঘটনা। তার পর আজ আবার প্রায় একই চিত্রনাট্যের সাক্ষী রইল নয়াদিল্লি। গত কাল ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৌশলগত সমন্বয় ও সহযোগিতার বার্তা দিয়েছিলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। আর আজ তিনি সমাজে সম্প্রীতি রক্ষা করার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিলেন মোদী সরকারকে। কোনও দেশের নাম না করেও কেরি এ দিন দিল্লি আইআইটি-র মঞ্চে এক আলোচনাচক্রে সৌজন্যের মোড়কে যা বলেছেন, তা যেন মোদী সরকার ও সঙ্ঘের কট্টরপন্থীদের কথা মাথায় রেখেই। অন্তত এমনটাই মনে করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।

কী বলেছেন কেরি?

‘‘মেরুকরণ কোনও জায়গাতেই ভাল নয়। এর ফলে অসহিষ্ণুতা আর হতাশা বেড়ে যায়।’’ বিরোধী শিবিরের নেতারা একে মোদী সরকারের প্রতি বার্তা বলেই মনে করছেন। যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ‘‘কেরি এক বারও মোদী সরকারের কথা বলেননি। সার্বিক ভাবে মেরুকরণ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, যা তাঁর নিজের দেশেরও সমস্যা।’’

এটা ঘটনা, ধরতাইটা ছিল আমেরিকায় অসহিষ্ণুতার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে। সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ভাবে বারবার বিদেশি ও অভিবাসীদের সম্পর্কে অসহিষ্ণু মন্তব্য করে যাচ্ছেন, তা গোটা বিশ্বে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। ট্রাম্পের প্রচার ঘটাচ্ছে মেরুকরণও। এই প্রসঙ্গের মুখে পড়ে মার্কিন বিদেশ সচিব আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে জানান, দেশের ভোট-রাজনীতি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে আমেরিকার জনগণের শুভবুদ্ধির উপরে আস্থা রাখার আর্জি জানান তিনি। একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন আমেরিকার গণতন্ত্র অনেক দেশে‌র চেয়ে বেশি সহিষ্ণু। আমেরিকায় যে কথা বলে পার পাওয়া যায়, অন্য দেশে সে কথা বলার জন্য জেলে পোরা হয়। এখানেই মোড় ঘুরে যায় আলোচনায়। কেরি মনে করিয়ে দেন, মেরুকরণ ও অসহিষ্ণুতা সব দেশের পক্ষেই বিপজ্জনক। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের উচিত নাগরিকদের অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া, তিনি যে গোষ্ঠীরই হোন। শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার সকলের থাকা উচিত, এতে যেন কারাবন্দি হওয়ার ভয় না থাকে।’’

কংগ্রেস এটাকে মোদী সরকারের সমালোচনা হিসেবেই দেখছে। গত দেড় বছরে দাদরির ঘটনা ছাড়াও হায়দরাবাদে রোহিত ভেমুলা পর্ব, গুজরাতে উনা-সহ বিভিন্ন জায়গায় গো-রক্ষার নামে তাণ্ডব, কানহাইয়া-কাণ্ড, সাহিত্যিক এম এম কালবুর্গির হত্যার মতো ঘটনা ঘটে গিয়েছে।

মোদী অবশ্য তাঁর সর্বশেষ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সহিষ্ণুতারই বার্তা দিয়েছেন ভারতরত্ন মাদার টেরিজার সেবার আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। ভ্যাটিকানের তরফে ৪ সেপ্টেম্বর যে তাঁকে সন্তের স্বীকৃতি দেওয়া হবে, তাকে ভারতীয় হিসেবে ‘গর্বিত’ হওয়ার মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। সঙ্ঘ-বিজেপির কোনও নেতা আজ পর্যন্ত যা করেননি। কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, মোদীর কথা ও কাজের মধ্যে কোনও মিল থাকে না। আমেরিকাও সঙ্ঘ-বিজেপির অসহিষ্ণুতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এই সূত্রে কংগ্রেসের মনীশ তিওয়ারির তির্যক মন্তব্য, ‘‘যখনই কোনও মার্কিন নেতা ভারতে আসেন, মোদীকে খোঁচা মেরে যান। অথচ মোদী আর ওবামা নাকি বেস্ট ফ্রেন্ড!’’

রাজনীতি ও কূটনীতির জগতের অনেকে বলছেন, এটাই মার্কিন কূটনীতির দস্তুর। ওয়াশিংটনের পক্ষে ভারতের বিশাল বাজারকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সমন্বয়ের পাশাপাশি ভারতে ধর্মীয় অধিকার রক্ষার ব্যাপারেও মতপ্রকাশ করে থাকেন মার্কিন কর্তারা। সেই ধারাবাহিকতা মেনেই দাঁড়িয়ে কেরির এই সামাজিক সহিষ্ণুতার বার্তা।

গত অক্টোবরে ওবামা প্রশাসনের ধর্মীয় অধিকার বিষয়ক দফতরের কর্তা ডেভিড স্যাপেরস্টাইন দাদরির প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, ‘‘গোমাংস খাওয়ার ঘটনা নিয়ে বিতর্কের পর দেখা যাচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিষ্ণুতা ও সুসভ্য আচরণের ডাক দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকারের এই আদর্শ যাতে বাস্তবে পরিণত হয়, আমরাও সে ব্যাপারে উৎসাহী।’’ স্যাপেরস্টাইন এই মন্তব্য করার এক মাসে আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ওবামার সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক করেন মোদী। সেই বৈঠকে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যিক এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্কের বিস্তার নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়।

আজ এক দফা সহিষ্ণুতার পাঠ দেওয়ার পরেই কেরি দেশের বাণিজ্য সচিব পেনি প্রিট্জকারকে নিয়ে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে। দিল্লিতে কাল দ্বিতীয় ‘ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য সহযোগিতা আলোচনা’ শেষ হয়েছে। তার অগ্রগতি ও এ ব্যাপারে আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গির কথা মোদীকে জানান তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীর দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্কিন দুই সচিবকে মোদী জানিয়েছেন, চিনে আগামী জি-২০ বৈঠকের সময়ে ওবামার সঙ্গে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

কেরির আজ জার্মানি ও তার পরে চিন যাওয়ার কথা ছিল। ঠিক হয়েছে, দিল্লি থেকে শুক্র বা শনিবার সরাসরি তিনি চিনে যাবেন। সেখানেই জি-২০ বৈঠকে ওবামার সঙ্গে যোগ দেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

John kerry Tolerance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE