Advertisement
E-Paper

ট্রেনের স্টপ নিয়ে খাজনা ও বাজনার তত্ত্ব

বাজনা বাজানোর খাই-খরচা যতক্ষণ কব্জায়, ততক্ষণ ঠিক আছে। কিন্তু তা খাজনার আয়কে ডিঙিয়ে গেলেই মুশকিল। তখন আর স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে না!

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৩

বাজনা বাজানোর খাই-খরচা যতক্ষণ কব্জায়, ততক্ষণ ঠিক আছে। কিন্তু তা খাজনার আয়কে ডিঙিয়ে গেলেই মুশকিল। তখন আর স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে না!

ওড়িশার মারকোনা স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে অবরোধ ও তার জেরে যাত্রী-ভোগান্তির ঘটনার পরে রেল এমনই যুক্তি দিচ্ছে। তাদের হিসেবে, কোনও মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনকে একটা স্টেশনে দাঁড় করাতে খরচ পড়ে অন্তত ১৮ হাজার টাকা। রেল বোর্ডের নির্দেশিকা অনুযায়ী, নতুন ভাবে কোনও স্টেশনে মেল-এক্সপ্রেস থামাতে গেলে স্টেশনটিতে টিকিট বিক্রি বাবদ আয়ের অঙ্ক এর বেশি হতে হবে।

অর্থাৎ, খাজনা হতে হবে বাজনার বেশি। রেল-কর্তাদের দাবি, মারকোনায় টিকিট বেচে ট্রেন দাঁড় করানোর খরচ উঠছে না। আর খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাচ্ছে বলেই বালেশ্বরের কাছে ওই স্টেশনটিতে নতুন ট্রেন দাঁড় করানো যাচ্ছে না বলে যুক্তি সাজিয়েছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। যা শুনে যাত্রীমহল তো বটেই, রেলের অন্দরেও প্রশ্ন উঠেছে।

মারকোনায় গোড়া থেকেই আট জোড়া মেল-এক্সপ্রেস দাঁড়ায়। নতুন আরও ছ’জোড়া ট্রেন থামানোর দাবি তুলে শনিবার সকালে স্থানীয় কয়েক হাজার বাসিন্দা লাইন অবরোধে নামেন। তাঁদের টানা আট ঘণ্টার অবরোধে বাইশটি ট্রেন মাঝ পথে আটকে পড়ে। খাবার, পানীয় জল, এমনকী এক সময়ে টয়লেটেও জল ফুরিয়ে যায়। চরম দুর্ভোগের শিকার হন হাজার হাজার যাত্রী।

ঘটনা হল, অবরোধের আগাম ঘোষণা ছিল। তা সত্ত্বেও রেল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এখন দায় গিয়ে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের উপরে। বিড়ম্বনা এড়াতে কর্তারা রেল বোর্ডের নিয়ম আওড়াতে শুরু করে করেছেন বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তা ট্রেন থামানোর খরচের হিসেবটা কী ভাবে পাওয়া গেল?

রেল ব্যাখ্যা দিয়েছে: ন্যূন্যতম ১৮-২০ কামরার এক্সপ্রেস ট্রেন থামাতে গেলে আগেভাগে ব্রেক কষতে হয়। তাতে বিস্তর শক্তি বেরিয়ে যায়। স্থির অবস্থা থেকে আবার যাত্রা শুরু করে নির্দিষ্ট গতিবেগে পৌঁছাতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়, তাতে আরও শক্তি ব্যয় হয়। সবটাই আসে ডিজেল পুড়িয়ে বা বিদ্যুৎ থেকে, টাকার অঙ্কে তার খরচ কম নয়। উপরন্তু একটা ট্রেন থামলে অনেকগুলো ট্রেনের গতি ধাক্কা খায়। বাড়তি সময় লাইন রুদ্ধ হয়ে থাকে, যার মধ্যে ওখান দিয়ে মালগাড়ি চালিয়ে পণ্য পরিবহণ করা গেলে আয়ের সুযোগ থাকত। খরচের মধ্যে সেই ‘হাতছাড়া’ আয়ের হিসেবটাও জোড়া হয়। ‘‘সব মিলিয়ে দেখা গিয়েছে, কোনও স্টেশনে নতুন করে ট্রেন থামাতে গেলে খরচ দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬১১ টাকা।’’— মন্তব্য এক রেলকর্তার।

যাত্রীরা মেনে নিচ্ছেন, এই হিসেবে যুক্তি রয়েছে। কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন— রাজনৈতিক চাপেও তো হামেশা নিত্যনতুন স্টেশনে মেল-এক্সপ্রেসকে থামানোর সিদ্ধান্ত হয়। তখন আয়-ব্যয়ের এত চুলচেরা হিসেব কষা হয় তো? তা ছাড়া অনেক স্টেশনে নির্দিষ্ট ট্রেনে রেলের আসন সংরক্ষণের কোটাই বড়জোর চার-পাঁচটা। তবে সেখানে কী ভাবে ট্রেন থামছে, কী ভাবেই বা খরচ উঠছে, তা মাথায় ঢুকছে না অনেকের। মারকোনার অবরোধকারীদের কারও কারও কথায়, ‘‘মারকোনা না হয় ছেড়ে দিলাম। সব জায়গায় নিয়মটা খাটছে কিনা, রেল আগে তা খোলসা করুক।’’

রেল কী বলছে? তেমন ‘খোলসা’ জবাব মেলেনি। রেল কর্তাদের বক্তব্য: রেল সামাজিক দিকে প্রাধান্য দেয়। ট্রেন চালু করার আগে সব কিছু যাচাই করে ঠিক হয়, সেটি কোন কোন স্টেশনে দাঁড়াবে। অনেক জায়গায় খরচ না-ই উঠতে পারে। ‘‘কিন্তু এখন বোর্ডের কড়া নির্দেশ, নতুন করে কোথাও ট্রেন দাঁড় করাতে গেলে খরচের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে।’’— বলেন এক আধিকারিক।

ওঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেই ‘হিসেবের’ মারপ্যাঁচেই পড়ে গিয়েছে মারকোনা। রেল-সূত্রের খবর: দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব উপকূল রেলের সীমানাবর্তী স্টেশনটি নিয়ে কোনও জোনই এ যাবৎ সে ভাবে চিন্তা-ভাবনা করেনি। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা সীমানাবর্তী এলাকাটিতে প্রশাসনও ঢিলেঢালা। যে কারণে অবরোধের হুমকি শুনেও তারা বিশেষ নড়েচড়ে বসেনি।

পরিণাম যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। অশেষ ভোগান্তি পুইয়ে রেল-প্রশাসনের নির্লিপ্তির খেসারত দিয়েছেন আম-যাত্রী। তাঁরা সাবধান করে দিচ্ছেন, রেলের মাথারা অবিলম্বে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সুরাহায় নজর না-দিলে ভবিষ্যতে আবার অবরোধ হবে। তখনও গুণাগার দেবেন যাত্রীরাই।

কর্তারা শুনছেন?

Odisha Train Halt Markona Station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy