Advertisement
০৪ মে ২০২৪

টিকিট বিলিতে প্রাধান্য, নরম অখিলেশ

বাবা জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করবেন না তাঁকে। তবু ক’দিন আগের সেই বিদ্রোহী মেজাজে দেখা যাচ্ছে না অখিলেশ সিংহ যাদবকে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১৭
Share: Save:

বাবা জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করবেন না তাঁকে। তবু ক’দিন আগের সেই বিদ্রোহী মেজাজে দেখা যাচ্ছে না অখিলেশ সিংহ যাদবকে!

কোন মন্ত্রবলে সম্ভব হল সেটা!

সেটা আর কিছুই নয়, ভোটের টিকিট বণ্টনে অখিলেশের মতামতই প্রাধান্য পাবে— ছেলেকে এই আশ্বাস দিয়েছেন বাবা মুলায়ম সিংহ যাদব। যে কোনও ভাবে দল ও পরিবারে ভাঙন ঠেকানোই তাঁর লক্ষ্য। বাবার এই রফা-সূত্রেই কিছুটা হলেও নরম হয়েছে ছেলে।

গত কাল সকাল-দুপুর দু’দফায় মুলায়মের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন অখিলেশ। তার পর থেকে প্রকাশ্যে মুলায়ম বা কাকা শিবপাল সিংহ যাদবের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য দূরে থাক, শিবপাল-শিবিরের নেতার বিরুদ্ধে নতুন করে কোনও পদক্ষেপ করেননি অখিলেশ। বরং ঘনিষ্ঠ নেতা ও অনুগামীদের জানিয়েছেন, আগের ঘোষণা মতোই আগামী ৩ নভেম্বর তিনি রথযাত্রায় বেরোবেন। তবে ৫ নভেম্বর দলের রজত জয়ন্তী সমারোহেও তিনি থাকবেন। কাকা শিবপাল ওই অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক। প্রধান অতিথি অবশ্যই মুলায়ম। কিন্তু বিশেষ অতিথি হিসেবে নাম রয়েছে অখিলেশেরও। ওই রজত জয়ন্তী সমারোহেই জনতা পরিবারের পুরনো সদস্যদের এক মঞ্চে নিয়ে এসে বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির মহাজোটের ডাক দিতে চাইছেন মুলায়ম। অখিলেশ আগে জানিয়েছিলেন, দু’দিন আগেই রথযাত্রায় বেরোবেন বলে ৩ তারিখের ওই সমারোহে তিনি থাকবেন না। মানভঞ্জনের পরে এখন তিনি অনুগামীদের জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর রথযাত্রার পাশাপাশি এই রজত জয়ন্তী সমারোহকে সফল করার কাজেও ঢিলেমি দিলে চলবে না।

তবে বাবা-ছেলের সম্পর্কের চিড় যে চিরতরে মুছে গিয়েছে, এমনটা কিন্তু মনে করছেন না, দলের অখিলেশ-ঘনিষ্ঠ নেতারা। অখিলেশ আসলে দেখতে চাইছেন বাবা কথা রাখেন কি না। টিকিটি বিলির প্রশ্ন আসবে পরে। তার অনেক আগেই রথযাত্রায় বেরিয়ে বাস্তবের জমিতে নিজের জনপ্রিয়তা মেপে নিতে পারবেন। রথযাত্রায় বেরিয়ে যদি তিনি বোঝেন, রাজ্য জুড়ে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়ার জোরই বেশি, সে ক্ষেত্রে অখিলেশকে সংগঠনের উপরে ভরসা করেই ভোটে যেতে হবে। সেই সংগঠনের চাবিকাঠি এখনও শিবপালের হাতে। একেবারে বুথ-স্তর পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের তিনি চেনেন। আর রথযাত্রায় বেরিয়ে নিজের পক্ষে জোরদার হাওয়া রয়েছে বুঝলে আলাদা দল গড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে অখিলেশের পক্ষে। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস বা অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি তাঁর সঙ্গে থাকবেন নাকি মুলায়ম-শিবপালদের সঙ্গে থাকবেন— তা-ও যাচাই করে নেওয়া সম্ভব হবে অখিলেশের পক্ষে।

সমাজবাদী পার্টির বর্তমান বিধায়কদের বেশির ভাগই অখিলেশের অনুগামী। অখিলেশ-শিবিরের আশঙ্কা, কাকা শিবপাল তাঁদের বাদ দিয়ে নিজের লোকদের টিকিট দেবেন। শিবপালের সঙ্গে রয়েছেন অমর সিংহও। প্রকাশ্যেই যিনি বলছেন, অখিলেশকে তিনি স্নেহ করলেও মুখমন্ত্রী হিসেবে মুলায়মই তাঁর প্রথম পছন্দ। এই সব মাথায় রেখেই রফা বৈঠকে অখিলেশের প্রধান দাবি ছিল, তাঁকেও ভোটের প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষমতা দিতে হবে। মুলায়ম ছেলেকে আশ্বাস দিয়েছেন, সেই দাবি তিনি পূরণ করবেন।

দলের নেতাদের মতে, অখিলেশ ছাড়া মুলায়মের বিকল্প নেই। সংগঠনের দায়িত্ব তিনি ভাই শিবপালকে দিতেই পারেন। কারণ সংগঠন মজবুত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রয়েছে তাঁর। কিন্তু ভোটে তাঁকে দলের মুখ করা অসম্ভব। শিবপাল ও তাঁর নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টির গুন্ডাবাহিনীর কুখ্যাতি কিছু কম নয়। মুলায়মেরও বয়স হয়েছে। পরিবারের অন্দরমহলে দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে প্রতীককেও ক্ষমতা দেওয়ার দাবি উঠেছে। কিন্তু প্রতীকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা শূন্য। হঠাৎ করে অখিলেশের জায়গায় তাঁকে নিয়ে আসা সম্ভব নয়।

সমাজবাদী পার্টির এক নেতার বিশ্লেষণ, ‘‘গ্রামের মানুষ বড় ছেলেকেই আসল উত্তরাধিকারী মনে করে। প্রতীককে উত্তরাধিকারী বাছলে গ্রামের মানুষ তা ভাল ভাবে নেবে না। তখন আলাদা দল গড়লে ভোটে তাঁদের সহানুভূতি পাবেন অখিলেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ticket distribution candidates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE