Advertisement
০৯ মে ২০২৪

পুলিশের গুলিতেই ঝাঁঝরা তেলঙ্গানায় তরুণী ধর্ষণকাণ্ডের চার অভিযুক্ত

সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভিসি সজ্জনারের দাবি, ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে রাত সাড়ে তিনটের সময়ে মহম্মদ আরিফ (২৬), জল্লু শিবা (২০), জল্লু নবীন (২০) এবং চেন্নাকেশবুলু (২০) নামে ৪ অভিযুক্তকে শাদনগরের ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় ১০ জন পুলিশের একটি দল।

চার অভিযুক্ত। ফাইল চিত্র।

চার অভিযুক্ত। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:১২
Share: Save:

অভিযুক্ত চার জনকে বৃহস্পতিবারেই ৭ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছিল আদালত। তার পরে প্রথম রাতেই পশু চিকিৎসক তরুণীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলা গুটিয়ে দিল হায়দরাবাদ পুলিশ! শাদনগরে ধর্ষণের জায়গাতেই শুক্রবার ভোরে পুলিশের গুলিতে নিহত হল ৪ অভিযুক্ত।

সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভিসি সজ্জনারের দাবি, ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে রাত সাড়ে তিনটের সময়ে মহম্মদ আরিফ (২৬), জল্লু শিবা (২০), জল্লু নবীন (২০) এবং চেন্নাকেশবুলু (২০) নামে ৪ অভিযুক্তকে শাদনগরের ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় ১০ জন পুলিশের একটি দল। তাদের হাতকড়া খোলা ছিল। ভোরে পৌনে ছ’টা নাগাদ আরিফ ও চেন্নাকেশবুলু আচমকাই তদন্তকারী অফিসারের রিভলভার ছিনিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে। বাকিরাও পাথর ও লাঠি নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। সজ্জনার জানান, এই পরিস্থিতিতে তাদের সতর্ক করে কাজ হয়নি। তখন পুলিশ ‘গুলি চালাতে বাধ্য হয়’ এবং অভিযুক্তদের মৃত্যু হয়। কমিশনারের দাবি, দুই কনস্টেবলও মাথায় আঘাত পান। তবে কারও দেহে গুলি লাগেনি। সজ্জনারের কথায়, ‘‘আইন তার কর্তব্য পালন করেছে।’’

‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ সজ্জনারের এই দাবিকে পুলিশের ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে মনে করছেন অনেকে। এর ফলে কিছু মানুষ যেমন ‘ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত’ করার জন্য পুলিশের জয়ধ্বনি দিচ্ছেন, পাশাপাশি আইন হাতে তুলে নেওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে সরব অনেকে। জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মার কথায়, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হওয়া উচিত। হায়দরাবাদে দল পাঠাচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। প্রশ্ন উঠেছে, এই ৪ জন কি সত্যিই দোষী, না তাদের মেরে কাউকে আড়াল করল পুলিশ? তদন্তের জন্য অভিযুক্তদের দেহ সোমবার পর্যন্ত সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে তেলঙ্গানা হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন: ‘বেত মারল, ছুরি চালাল, তার পর আমার গায়ে পেট্রল জ্বালাল’

ভোরে এই ঘটনা ঘটলেও পুলিশ প্রায় ছ’ঘণ্টা দেহগুলি ঘটনাস্থলে ফেলে রাখে। এক দিকে, ধান ও টোম্যাটো খেত। অন্য দিকে, হাইওয়ে। তার মধ্যে ফাঁকা জমিতে পড়ে থাকা অভিযুক্তদের দেহ ঘিরে বহু লোক নাচানাচি করে, কমিশনার সজ্জনারের নামে জয়ধ্বনি দেয়। পাশের সেতু থেকে পুষ্পবৃষ্টি করে জনতা। অভিযুক্তদের ‘শাস্তি দেওয়ার জন্য’ পুলিশকে সাধুবাদ দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা ও দিদি। কিছু দিন আগে অবশ্য এই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তাঁরা। কারণ, পুলিশ এফআইআর নিতে চায়নি। তবে দক্ষিণের একটি সংবাদপত্রকে পুলিশের এক কর্তা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভাবমূর্তি উদ্ধার এবং বিক্ষোভ প্রশমনে ‘অন্য ধরনের’ কিছু করার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। তার পরে এই ঘটনা।

দুষ্কর্মের একটি বিবরণও এ দিন দেন পুলিশ কমিশনার। জানান, তরুণীর স্কুটি খারাপ হয়ে যাওয়ার পরে আরিফই বাকিদের ডেকে জড়ো করে। তরুণীকে হত্যার পরে সে-ই প্রথমে আগুন দেয় তার শরীরে। রাতে পুলিশ দাবি করে, পেশায় লরির খালাসি এই চার অভিযুক্ত কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানা জুড়ে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তাদের ধারণা।

ভেঙে পড়েছেন অভিযুক্তদের স্বজনেরা। চেন্নাকেশবুলুর স্ত্রী অভিযোগ করেছেন— পুলিশ ফাঁসিয়েছে তাকে। আর ছেলের মৃত্যুসংবাদে মানসিক ভারসাম্য খুইয়ে আরিফের বাবা কেবল হেসেই চলেছেন। মাথা নেড়ে বলছেন, ‘‘দোষীদের শাস্তি হোক, শাস্তি হোক!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Telengana Rape Case Hyderabad Encounter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE