নিবার্চনী প্রচারে অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার করিমগঞ্জে শীর্ষেন্দু সী-র তোলা ছবি।
শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়নি বিজেপি— বরাক উপত্যকার তিন জেলায় নির্বাচনী সমাবেশে আজ এমনই দাবি করলেন দলের সভাপতি অমিত শাহ।
এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে ভোট-পরবর্তী বোঝাপড়ার গুঞ্জনেও আজ তিনি জল ঢেলে দেন। অমিত জানান, আজমল-বাহিনীর সাহায্য ছাড়া আগামী ১০০ বছরে ক্ষমতায় আসা সম্ভব না হলেও বিজেপি তাঁদের শরিক হবে না। দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এ দিন হাইলাকান্দি জেলার আয়নাখাল চা বাগান, করিমগঞ্জ জেলার দুল্লভছড়া এবং কাছাড়ের ধলাই ও হাতিছড়ায় বক্তৃতা করেন। সব জায়গাতেই তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গত বছরের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা উল্লেখ করেন। বিজেপি শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘ওই লাইনেই সরকার শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে।’’ তাঁর বক্তব্য, এই বিষয়টি বিজেপির কাছে শুধু ঘোষণা বা প্রতিশ্রুতি নয়। শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদান দলের নীতি। কোনও মূল্যেই সেখান থেকে সরে আসা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।
নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে বিজেপি পিছু হটেছে বলে কয়েক দিন থেকেই অসমের বিভিন্ন জায়গায় চর্চা হচ্ছে। অভিযোগ, অগপ-র চাপের দরুন এ বারের ‘ভিশন ডকুমেন্টে’ এই ব্যাপারটি অনুচ্চারিত থেকে যায়। এমনকী, দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কালীনগরের সভায় এ নিয়ে একটি কথাও বলেননি। নীরব থাকেন ডিটেনশন সেন্টার, ডি ভোটার নিয়েও। স্থানীয় নেতাদের কাছে এ ব্যাপারে অবগত হয়েই অমিত শাহ এ দিন দলের অবস্থান জানিয়ে দেন। অগপ-র দাবি মেনে বিজেপি অবশ্য ‘ভিশন ডকুমেন্টে’ অসম চুক্তি অক্ষরে অক্ষরে পালনের কথা জানিয়েছে। অসম চুক্তি ও শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টিকে কী ভাবে মেলানো হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি অমিত। বরং শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা যত জোর দিয়ে বলেছেন, তার চেয়ে বেশি আওয়াজ তুলেছেন বাংলাদেশি বিতাড়ন নিয়ে। তিনি বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশকারীদের এ দেশে থাকতে দেওয়া হবে না।’’
ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হলে কংগ্রেস না বিজেপির দিকে ঝুঁকবে এআইইউডিএফ— এমন প্রশ্নে শুরু থেকে বদরুদ্দিন আজমল ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সময় এলে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।
মোদীর সরকার আরএসএস নিয়ন্ত্রিত, নাগপুর থেকে পরিচালিত হয় বলে কংগ্রেস বারবার অভিযোগ করে। সেই প্রসঙ্গেও বিজেপি সভাপতি সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, ‘‘নাগপুর ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শহর। ইতালির মতো বাইরের লোকেদের দ্বারা চলে না।’’ অমিত শাহের সব সভা চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায় হয়। তাই তাঁর বক্তৃতায় চা শ্রমিকদের আবেগকেও ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘‘অসমের বাগানগুলিতে শ্রমিকদের পানীয় জলের বন্দোবস্ত নেই, স্বাস্থ্য পরিষেবা বেহাল, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না। বিজেপির সরকার এলে সে সব সমস্যার সমাধান করা হবে।’’
হাইলাকান্দিতে দু’দিন আগে এক শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি আয়নাখালের জনসভায় গগৈ সরকারকে দোষারোপ করেন। ক্ষোভ জানান, এই রাজ্যে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য পরিবর্তন আবশ্যক বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিমানের নৈশ অবতরণ, কাছাড় কাগজ কল ফের চালুর ব্যাপারেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
হিমন্তবিশ্ব শর্মা এ দিন অমিতের সফরসঙ্গী ছিলেন। অমিতও সব জায়গায় বিজেপির সম্ভাব্য সরকারকে সর্বানন্দ-হিমন্তের সরকার বলে উল্লেখ করেন। হিমন্তবাবু আয়নাখালের সভায় গৌতম রায়ের বিরুদ্ধে মুখর হন। কাছাড় কাগজকল বন্ধ থাকার জন্যও গৌতমবাবুকে দোষারোপ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, গৌতমবাবুর সিন্ডিকেট-রাজের দরুন কাগজকলটি দাঁড়াতে পারেনি। হাইলাকান্দিতে প্রেমরাজ গোয়ালা নামে যে নির্দল প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, তিনি গৌতম রায়ের নির্দেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলেও মন্তব্য করেন হিমন্তবাবু। তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘পরিচিত কংগ্রেস নেতা প্রেমরাজ গোয়ালা বিজেপির ভোট কাটার জন্যই দাঁড়িয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy