Advertisement
০৭ মে ২০২৪

আন্দামান-নিকোবরকে মেলাবে সমুদ্রট্রেন

পাহাড়ের রানি দার্জিলিঙের অন্যতম আকর্ষণ টয় ট্রেন। সমুদ্রঘেরা আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ট্রেন-সফর কতটা চমকপ্রদ হবে?

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৮
Share: Save:

পাহাড়ের রানি দার্জিলিঙের অন্যতম আকর্ষণ টয় ট্রেন। সমুদ্রঘেরা আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ট্রেন-সফর কতটা চমকপ্রদ হবে?

জবাব মিলবে অচিরেই। কারণ, জলপথের পাশাপাশি এ বার ট্রেনেও পোর্ট ব্লেয়ার থেকে সরাসরি নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের বাইরে নতুন ওই রেলপথের অনেকটাই যাবে সমুদ্রের উপর দিয়ে। রেলের এই নতুন কর্মসূচি ‘জাতীয় প্রকল্প’-এর স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে ইতিমধ্যেই।

রেল সূত্রের খবর, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এখন কোনও রেল যোগাযোগ নেই। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে কার নিকোবর পর্যন্ত প্রস্তাবিত ২৪০ কিলোমিটার লাইনটিই হবে দ্বীপভূমির প্রথম রেল প্রকল্প। পুরো পথেই পাতা হবে ব্রডগেজ লাইন। সমুদ্রের উপরে তৈরি করতে হবে বেশ কয়েকটি সেতুও। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৪১৩ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা। আন্দামান প্রশাসন অর্ধেক খরচ দিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রক।

রেলের ভাঁড়ারের অবস্থা কহতব্য নয়। তার মধ্যেও এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে লাভজনক হবে না ধরে নিয়েই। কেন? রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, মূলত দু’টি কারণে দ্বীপভূমিতে রেল প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। প্রথমত, সামরিক দিক থেকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। রেলপথে সামরিক কর্মকাণ্ড ও নজরদারি সহজতর হবে। কেন্দ্রীয় সরকার যে দ্রুত এই প্রকল্পে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে, তার মূলে আছে এই সামরিক তাগিদ। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তির উৎকর্ষের চমকপ্রদ পরীক্ষা। প্রযুক্তি কী দুঃসাধ্য সাধন করতে পারে, সেটা দেখাতে পারলে তার টানে পর্যটক সমাগমও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের সমীক্ষা হয়েছিল ২০১৪ সালে।

কিন্তু তার রিপোর্ট ফাইলবন্দি হয়েই পড়ে ছিল। এ বছর সেটি ফের পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে। তার পরেই অর্থ মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত মেলে।

সমুদ্রের উপরে সেতু গড়ে রেললাইন পাতার কাজ এই প্রথম হচ্ছে না। অনেক আগেই তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে রামেশ্বরম পর্যন্ত সেতুপথে রেললাইন চালু হয়েছে। সেই রেলপথের দৈর্ঘ্য ৪০৭ কিলোমিটার। তার মধ্যে সমুদ্রের উপরে ১৯১৪ সালে তৈরি পাম্বান সেতুর দৈর্ঘ্য দু’কিলোমিটার। জাহাজ চলাচলের জন্য সেই সেতু দু’ভাগ হয়ে উপর দিকে উঠে যায়। জাহাজ চলে যাওয়ার পরে দু’টি অংশকে আবার জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়। পাম্বান সেতুতে এক বার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। ১৯৬৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সমুদ্র এমনই অশান্ত হয়ে উঠেছিল যে, প্রায় ২৫ ফুট উঁচু ঢেউ ওঠে। তাতে সেতুর বেশ কিছুটা অংশ ভেঙে যায়। তখন পাম্বান-ধনুষ্কোটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি ছিল সেতুর উপরেই। সেটিও পড়ে যায় সমুদ্রে। সলিলসমাধি ঘটে ১০০ যাত্রীর। তার পর থেকে অবশ্য ওই লাইনে কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।

কন্যাকুমারী-রামেশ্বরম সেতুপথে রেললাইন পাতার দীর্ঘদিন পরে, ২০০৯ সালে দক্ষিণ মুম্বইয়ে বান্দ্রা-ওরলিতে সমুদ্রের উপরে ৫.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের সড়কপথ তৈরি হয়েছে। সেটি শুধু এ দেশের নয়, সারা বিশ্বেরই অন্যতম আকর্ষক রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত। তার পরেই সমুদ্রবক্ষে রেললাইন পাতার প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে চলেছে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। প্রকল্পটি আপাতত লাভজনক না-হলেও রেলকর্তাদের আশা, ওই সমুদ্রট্রেনই পর্যটক টানবে। সরকারি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এখন বছরে সাড়ে চার লক্ষ পর্যটক আন্দামানে যান। রেলকর্তাদের বক্তব্য, রেল প্রকল্প শেষ হলে এই সংখ্যা বেড়ে হবে ছ’লক্ষেরও বেশি। তা ছাড়া যাতায়াতের পথ সুগম করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা। প্রস্তাবিত রেল প্রকল্প পর্যটনের সঙ্গে সঙ্গে দ্বীপবাসীর সেই চাহিদাও পূরণ করবে বলে আশা করছে আন্দামান-নিকোবর প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Andaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE