কার্বি আংলং জেলায় সম্প্রতি রাজধানী এক্সপ্রেসে কাটা পড়া দু’টি হাতিকে হিসেবে ধরে গত পাঁচ বছরে উত্তর-পূর্ব রেলের এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় ৪৮টি হাতির মৃত্যু হল। যদিও রেল কর্তৃপক্ষের দাবি নজরদারি বৃদ্ধি, ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির ফলে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি-মৃত্যু কমেছে। কিন্তু পশুপ্রেমীদের দাবি, হাতি করিডরে ১৫-২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলার কথা থাকলেও রাজধানীর মতো ট্রেনগুলি ৪০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে যায়। রেল সেই অভিযোগ অস্বীকার করছে।
রেল সূত্রে খবর, ২০১১ সালে ৭টি, ২০১২ সালে ৬টি, ২০১৩ সালে ১৯টি, ২০১৪ সালে ৫টি, ২০১৫ সালে ৯টি হাতি ট্রেনের ধাক্কায় বা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়। এর মধ্যে অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সে, আলিপুরদুয়ার রেল ডিভিশনে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের চিহ্নিত ২৭টি হাতি করিডরের মধ্যে ১৭টি-ই পড়ছে আলিপুরদুয়ারে, রঙিয়ায় দু’টি, চারটি করে করিডর রয়েছে লামডিঙ ও তিনসুকিয়ায়। রেল সূত্রে বলা হয়েছে, রেল লাইন ও হাতি করিডরের সংযোগকারী এলাকাগুলি সুরক্ষিত করতে অতীতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে লাইনে পাহারা বসানো, গতি নিয়ন্ত্রণ, সচেতনতা শিবির করার মতো বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে করিডরে স্বেচ্ছাসেবকদের নজরদারি আপাতত স্থগিত রয়েছে। করিডরের অনেক আগে থেকে প্রতিফলক দেওয়া সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বন দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লাইনের আশপাশের জঙ্গল সাফ করা হয়েছে। এর ফলে চালকদের দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে। লাইনের আশপাশে হাতির খাদ্য যাতে না থাকে তাও দেখা হচ্ছে। সচেতন করা হচ্ছে স্থানীয় গ্রামবাসীদেরও। করিডরের গুরুত্ব অনুযায়ী ট্রেনের গতি ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
রেলের বক্তব্য, এই ব্যবস্থায় কাজও হয়েছে। হাতিমৃত্যুর হার কমেছে। কিন্তু তারপরেও করিডরে হাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির দাবি, ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রেলের তরফে শিথিলতার ঘটনা ঘটছে হামেশাই। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আরণ্যকের দাবি, কার্বি আংলঙের সাম্প্রতিকতম ঘটনায়, রেল লাইনের ওই অংশে মাত্র ৮০০ মিটার এলাকায় করিডর রয়েছে। ট্রেন ধীরে চললে লেট হওয়ারও কথা নয়। কিন্তু তাতে দুর্ঘটনাটা এড়ানো যেত। তাদের বক্তব্য, লাইনের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, ট্রেনগুলি ওই অংশেও বেশ জোরেই চলে। সব হাতি করিডরে ট্রেনের গতি একেবারে কম রাখা বাধ্যতামূলক করার আর্জি জানিয়ে তারা কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইকে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছে। যদিও রেলের দাবি, ট্রেন গতি-বিধি মেনেই চলছিল। গ্রামবাসীরা পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোয় তারা আচমকা লাইনে উঠে আসে। এ নিয়ে রেল ও বন দফতর একটি তদন্ত কমিটিও গড়েছে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে জানানো হয়, এখন আলিপুরদুয়ার ডিভিশনে করিডরের আশপাশে হাতি থাকলে বনকর্মীরা কন্ট্রোল রুমে খবর দেন। তখন বনকর্মীরাই হাতি করিডরে ট্রেনকে এসকর্ট করছে। কিন্তু অসমে এখনও সেই ব্যবস্থা চালু করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy