Advertisement
০৪ মে ২০২৪
National

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ভিডিও সরকারের হাতে তুলে দিল সেনাবাহিনী

নিয়ন্ত্রণরেখার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ভারত গত সপ্তাহে যে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল, তার সবক’টি ভিডিও, মানচিত্র, গোটা অভিযানের গ্রাফিক্স বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে জমা দিল ভারতীয় সেনাবাহিনী।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ১৬:২০
Share: Save:

নিয়ন্ত্রণরেখার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ভারত গত সপ্তাহে যে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল, তার সবক’টি ভিডিও, মানচিত্র, গোটা অভিযানের গ্রাফিক্স বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে জমা দিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। আর দেশের মানুষের কৌতূহল মেটাতে সেই সব ভিডিও প্রকাশ্যে আনা হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বটা সেনাবাহিনীর তরফে মন্ত্রিসভার ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হল। ও দিকে, জমানো শীতে দু’দেশের মধ্যেকার সড়কপথগুলি তুষারে ঢেকে যাওয়ার আগেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বা পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা আবার ভারতে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে বা বড়সড় হামলা চালাতে পারে। মন্ত্রিসভার এ দিনের বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন সেনা অফিসাররা।

মন্ত্রিসভার সংশ্লিষ্ট কমিটি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে এ দিনের বৈঠকে পঞ্জাব, রাজস্থান ও জম্মু-কাশ্মীরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলার হালও সেনাবাহিনীর তরফে তুলে ধরা হয় সবিস্তারে। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়ে দেশের রাজনীতিক মহলের একাংশে যে সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে ওই ভিডিওগুলি এখনই প্রকাশ্যে আনাটা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ আলাপ-আলোচনা হয় এ দিনের বৈঠকে। সেখানে পক্ষে ও বিপক্ষে দু’রকম মতামতই উঠে আসে। কেউ কেউ বলেন, ওই ভিডিওগুলি এখনই প্রকাশ্যে এনে বিরোধী ও সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আবার কেউ কেউ বলেন, ওই ভিডিওগুলি প্রকাশ্যে আনলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের কৌশল ও পদ্ধতি-প্রকরণ শত্রুরাও জেনে ফেলবে। সেটা দেশের নিরাপত্তা ও আগামী দিনে এমন ধরনের ‘স্ট্রাইক’ আবার চালানোর পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা অফিসাররাও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র ভিডিওগুলি এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে আনার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানান।

ওই ভিডিওগুলি প্রকাশ্যে আনার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীও। তিনি বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আর গোয়েন্দা অফিসাররা এখন মুখিয়ে রয়েছেন, ভারত ওই ভিডিওগুলি প্রকাশ্যে আনে কি না, তা দেখতে। ভারত সেটা করলে তাদের বড্ড উপকার হবে। ভারত কী ভাবে অভিযান চালিয়েছিল, সেটা তাদের জানা হয়ে যাবে। ওরা এটাই চাইছে। যাতে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যাদি থেকেই পাক গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স’ (আইএসআই) সব খবরাখবর পেয়ে যায়।’’

একই সুর শোনা গিয়েছে আরেক অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল জেজে সিংহের গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বাসটা তো নিজের কাছে। আমি নিজে যদি বিশ্বাস করি, আমি কাজটা সৎ ভাবে করেছি, তা হলে সেই কাজটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে আমি নিজে তা প্রমাণ করতে যাব কেন? আর সেটা প্রমাণ করতে গিয়ে নিজের দেশের নিরাপত্তাকে বিপন্নই বা করব কেন? প্রমাণ করার জন্য ওই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র ভিডিওগুলি যদি প্রকাশ্যে আনতে হয় আর প্রকাশ্যে আনা সেই ভিডিওগুলি দেখে যদি আমাদের শত্রু দেশের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা অফিসাররা আমাদের সেনা-অভিযানের প্রকৌশল ও পদ্ধতি-প্রকরণের হাল-হদিশ জেনে যায়, তা হলে কেনই বা আমরা ভিডিওগুলি প্রকাশ্যে আনব?’’

বুধবারই একটি সর্বভারতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বরের রাত থেকে গত ২৯ সেপ্টেম্বরের ভোর পর্যন্ত ভারত কী ভাবে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল। উরির ভারতীয় সেনা-ছাউনিতে পাক সেনাবাহিনীর হামলার দশ দিন পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর চালানো ওই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ কম করে ৫০ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে।

আরও পড়ুন- নিয়ন্ত্রণ রেখার ও পারে ১০০ পাক জঙ্গি! হামলার অপেক্ষায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE