Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লগ্নি ডেকেও সংস্কারে বাগড়া, তৃণমূলকে বিঁধলেন জেটলি

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সেটাই ঠিক নীতি। কিন্তু সংসদে তৃণমূল যে আর্থিক সংস্কারের বিরোধিত করছে, সেটা ভুল নীতি বলে আজ মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর সাবধানবাণী, জমি বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে লগ্নি টানার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৪:৩৫
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সেটাই ঠিক নীতি। কিন্তু সংসদে তৃণমূল যে আর্থিক সংস্কারের বিরোধিত করছে, সেটা ভুল নীতি বলে আজ মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর সাবধানবাণী, জমি বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে লগ্নি টানার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গ।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কাল সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেটের কড়া সমালোচনা করেছিল। আজ জবাবি বক্তৃতায় বিভিন্ন আর্থিক সংস্কারে, বিশেষ করে জমি বিলে তৃণমূলের বিরোধিতার সমালোচনা করলেন জেটলি। তৃণমূল সাংসদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি কলকাতায় গিয়েছিলাম। বাংলার বিনিয়োগ করার জন্য শিল্পপতিদের কাছে আপনাদের নেত্রীর আমন্ত্রণ শুনলাম। সেটাই ঠিক নীতি। আপনারা যা বলছেন, তা ঠিক নয়।”

জেটলির জবাব শুনে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। তাঁর প্রশ্ন, “জমি বিল ছাড়া তৃণমূল কোন আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে? অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে যদি কারও জমি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়, জাতীয় স্বার্থের কথা বলে যদি কারও মাথা থেকে ছাদ কেড়ে নেওয়া হয়, আমরা তা মেনে নেব না।” কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ ১৪টি দলের সাংসদরা আজ সংসদ থেকে মিছিল করে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন জমি বিলের বিরুদ্ধে। এই মিছিলের মূল উদ্যোক্তা ছিল তৃণমূল।

বাজেট বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় জমি বিলের বিরোধিতা করার জন্য তৃণমূলের সমালোচনা করেন জেটলি। তিনি মনে করিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী ওড়িশায় ক্ষমতাসীন বিজু জনতা দল শিল্পের স্বার্থেই এই জমি বিলের বিরোধিতা করছে না। জেটলি বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। তেমনই রাজ্যগুলির মধ্যে প্রয়োজন প্রতিযোগিতা। নতুন জমি বিল কোন রাজ্যে প্রযোজ্য হবে, তা রাজ্য সরকারের বিষয়। যদি পশ্চিমবঙ্গ বলে আমরা এই জমি বিল চাই না এবং ওড়িশা বলে আমরা এই বিল মেনে নিচ্ছি, সে ক্ষেত্রে লগ্নিকারীরাই ঠিক করবেন, তাঁরা কোথায় বিনিয়োগ করতে চান।” মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো অনগ্রসর রাজ্যও শিল্প-বন্ধু নীতি নিয়েই এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেন জেটলি। অভিষেকের জবাব, “মানুষের স্বার্থে যে কোনও সিদ্ধান্ত তৃণমূল সমর্থন করবে। বিজেপির রাজনৈতিক মোকাবিলা করতে আমরা তৈরি আছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করা।”

গত কাল অভিষেকের মূল অভিযোগ ছিল, ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহের মতো বিজেপি নেতারা যে সব কথা বলেছিলেন, ক্ষমতায় আসার পরে তাঁদের কাজের সঙ্গে তার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের ঋণ সমস্যার সমাধানে আর্থিক প্যাকেজের আশ্বাস তার অন্যতম। ২০১৪-র এপ্রিলে বিজেপির তৎকালীন সভাপতি রাজনাথ ওই প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দশ মাসেও কেন্দ্রীয় সরকার সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি।

জেটলি অবশ্য আজ অভিষেকের এই অভিযোগের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে পশ্চিমবঙ্গকে বাড়তি অর্থ দেওয়া হচ্ছে। সৌগত রায় এতে অভিযোগ তোলেন, সেই বাড়তি অর্থ তো বাম জমানার ঋণ শোধ করতেই চলে যাবে! তারও কোনও জবাব দেননি জেটলি। যা দেখে আজ অভিষেক বলেন, “আমি যে সব প্রশ্নের নির্দিষ্ট জবাব চেয়েছিলাম অর্থমন্ত্রীর কাছে, তার কোনওটিরই উত্তর মেলেনি।”

তৃণমূলের মূল অভিযোগ ছিল, মুখে রাজ্যকে বাড়তি আর্থিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলছে মোদী সরকার। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যকে বাড়তি অর্থ দেওয়া হচ্ছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। আসলে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দায় পুরোপুরি রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিষেকের এ-ও অভিযোগ ছিল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু কল্যাণের মতো বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ কমিয়েছেন জেটলি। জবাবে জেটলির যুক্তি, ইউপিএ-জমানায় শেষ বছরে বাজেটে বরাদ্দ হতো অনেক বেশি। পরে খরচ কাটছাঁট করা হতো। সেই আসল খরচের তুলনায় তিনি বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। তার সঙ্গে রাজ্যের খরচ যোগ করলে আগের থেকে সব প্রকল্পেরই বেশি অর্থ ব্যয় হবে। জেটলি বলেন, “রাজ্যকে যে বাড়তি অর্থ দেওয়া হচ্ছে, তা তো হাতখরচা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে না। সেই অর্থ উন্নয়নেই ব্যয় হবে। কেন্দ্রীয় সরকারও উন্নয়নেই ব্যয় করছে। কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে সামাজিক উন্নয়ন, পরিকাঠামো ও দারিদ্র দূরীকরণের নানা প্রকল্পে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হবে।” সৌগত রায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজ্যগুলি যে উন্নয়নেই ব্যয় করবে, কেন্দ্র কী ভাবে তা নিশ্চিত করবে? জেটলি হেসে জবাব দেন, “আপনার মুখ্যমন্ত্রীর উপর আমার আস্থা রয়েছে।” জেটলির বক্তব্য, যে বাড়তি অর্থ দেওয়া হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্যগুলি সার্বিক ভাবে কেন্দ্রের থেকেও বেশি আর্থিক শৃঙ্খলার পরিচয় দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীরাও মানুষের দ্বারাই নির্বাচিত। কাজেই তাঁরা বাজে খরচ করবেন, এমন ধরে নিয়ে কেন্দ্র কাজ করছে না। তাঁর পরামর্শ, বাড়তি অর্থ উন্নয়ন ও পরিকাঠামো তৈরিতেই ব্যয় করা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE