বিহার ভোট পর্যন্ত জাতিগণনার রিপোর্ট প্রকাশ পিছিয়ে দেওয়ার নতুন ছুতো বের করল কেন্দ্র। গোটা দায় রাজ্যগুলির ঘাড়েই ঠেলে লালু-নীতীশের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
চলতি মাসের গোড়ায় মোদী সরকার দেশের প্রথম আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশ করে। কিন্তু বিহারের ভোটের কথা মাথায় রেখে জাতিগত তথ্য প্রকাশ করেনি। সরকারের আশঙ্কা, জনগণনা রিপোর্ট প্রকাশ হলে বিহারে লালুপ্রসাদ যাদব ও নীতীশ কুমার তার রাজনৈতিক ফায়দা তুলবেন। কারণ, জাতপাতের নিরিখে সমাজের নীচের স্তরের মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে কতটা পিছিয়ে তা সামনে চলে আসবে। ভোটের মুখে নতুন করে সংরক্ষণের দাবি উঠলে বিজেপি বেকায়দায় পড়বে। কিন্তু ওই তথ্য প্রকাশ না করে নিস্তার নেই। কারণ, নরেন্দ্র মোদী পিছিয়ে পড়া জাতের ‘শত্রু’ বলেই তথ্য প্রকাশ হচ্ছে না, এই দাবিতে লালু বিহারে পথে নেমেছেন। নীতীশের দলও তথ্য প্রকাশের দাবি তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে ঘটনার মোড় ঘোরাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেন। তার পরেই তথ্য প্রকাশ না করার জন্য ইউপিএ আমলে নেওয়া এক সিদ্ধান্তকে ঢাল করে নতুন যুক্তি দিয়েছে সরকার। তাতে গোটা দায়টি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলিরই উপরে। বৈঠকের পরে অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘ইউপিএ আমলে ২০১১ সালের ১৯ মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, জাতপাতের পরিমাপ একটি সাব কমিটি নির্ধারণ করবে। সেই হিসেবে আজ নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়ার নেতৃত্বে সাব কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৯-১০ মাস আগেই জাতপাতের শ্রেণি নির্ধারণ করার জন্য রাজ্যগুলিকে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। সিংহভাগ রাজ্য এখনও ৪৬ লক্ষ জাত, গোত্রের হিসেব শ্রেণিবদ্ধ করে পাঠায়নি।’’ জেটলি জানিয়েছেন, তারা পাঠালেই এই সাব কমিটি সেগুলি শ্রেণিবদ্ধ করে প্রকাশ করবে।
কিন্তু সে জন্য কত সময় লাগবে? পর নির্ভর করছে। বিহারে যাঁরা এই নিয়ে হইচই করছেন, তাঁরাও তো সুপারিশ কেন্দ্রের কাছে পাঠাননি।’’ কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকার যখন আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, সেই সময়ে সরকার রাজ্যের কাছ থেকে সুপারিশ চাওয়ার কথা বলেনি। আর এখানেই সরকারকে চেপে ধরছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের মতে, আসলে কেন্দ্র বিহারের নির্বাচনের আগে জাতিগণনার তথ্য প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছে বলেই এখন ইউপিএ জমানার সিদ্ধান্তের পিছনে মুখ লুকোচ্ছে।