রাহুল গাঁধী এবং অরুণ জেটলি। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমশ ধারালো হচ্ছে রাহুল গাঁধীর আক্রমণ। জিএসটি নিয়ে মোদী সরকারকে বিঁধতে গত কাল এই করকে বিদ্রুপ করে বলেছিলেন ‘গব্বর সিংহ ট্যাক্স’!
আজ গব্বরের সংলাপকে হাতিয়ার করে আরও একধাপ এগোলেন রাহুল। জিএসটি নিয়ে আমজনতার ক্ষোভকে হাতিয়ার করে মোদীকে বিঁধে রাহুলের কটাক্ষ, ‘‘ইয়ে কামাই মুঝে দে দে!’’
জিএসটি নিয়ে এমনিতেই ত্রাহি-ত্রাহি রব। এই কর ব্যবস্থা নিয়ে ব্যবসায়ী এবং আমজনতার ক্ষোভ প্রতিদিন বাড়ছে। যার আঁচ টের পাচ্ছে বিজেপি সরকার। বিশেষত ব্যবসায়ীদের সিংহ ভাগই বিজেপির চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্ক। গুজরাত ভোটের আগে এ নিয়ে রীতিমতো জেরবার নরেন্দ্র মোদী সে রাজ্যে গিয়ে সুকৌশলে জিএসটি-র দায় কংগ্রেসের ঘাড়ে চাপিয়ে বলেছেন, ‘‘জিএসটি রূপায়ণে শরিক কংগ্রেসও।’’
মোদীর সেই কৌশলের মোকাবিলা করতে গিয়ে আজ রাহুল বলেন, ‘‘কংগ্রেসের জিএসটি ছিল ‘জেনুইন সিম্পল ট্যাক্স।’’ অর্থাৎ, প্রকৃতই সরল কর ব্যবস্থা। আর বিজেপির জিএসটি হল ‘গব্বর সিংহ ট্যাক্স’! রাহুলের বক্তব্য, কংগ্রেস জিএসটির পক্ষে থাকলেও সেটি তড়িঘড়ি রূপায়ণ না করার কথা বলেছিল। কিন্তু মোদী কার্যত গায়ের জোরেই তা চাপিয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীদের উপর। যার ফল ভুগতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকেই।
রাহুলের ‘ভাল জিএসটি’ ও ‘খারাপ জিএসটি’র প্রচার সামলাতে আজ আসরে নামতে হল অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে। কিছু দিন আগেও খোদ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানেন, যদি এই সমস্যার কেউ সমাধান করতে পারেন, সেটি বিজেপিই।’’ অমিত শাহের এই মন্তব্য আসলে বিজেপির অতি-আত্মবিশ্বাস হিসেবে দেখছে কংগ্রেস। যে ব্যবসায়ীরা বিজেপির চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্ক, তাদের মধ্যেই জিএসটি নিয়ে অসন্তোষ চরমে পৌঁছানোয় কংগ্রেসও এখন তাদের জিএসটি-বিরোধী প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছে।
এই অবস্থায় আজ রাহুলের কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘যে ব্যক্তিদের টুজি ও কয়লা দুর্নীতির অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, তাঁদের বৈধ কর হয়রান করবে।’’ মোদীর জিএসটিও যে আসলে ‘ভাল জিএসটি’, সেটি বোঝাতে জেটলি আজ এক দীর্ঘ ফিরিস্তি দেন। বলেন, ৭২ লক্ষ নথিভুক্ত ব্যবসায়ী জিএসটির আওতায় এসেছেন, আরও নতুন ২৮ লক্ষ ব্যবসায়ী এতে যোগ দিয়েছেন। জেটলি বোঝানোর চেষ্টা করেন, জিএসটি চালু হওয়ার পরে দুর্নীতি কমছে। অর্থনীতিতে কালো টাকা কমছে। কর ফাঁকি বন্ধ হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সরকারি হিসেবের মধ্যে আসছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সহযোগিতাও বাড়ছে। ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সেপ্টেম্বরের জিএসটি বাবদ ৯২,১৫০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে বলেও দাবি করেন জেটলি। তার উপরে কম্পোজিট স্কিমে যাঁরা আছেন, তাঁদের টাকা আসা এখনও বাকি।
কংগ্রেসের পাল্টা বক্তব্য, জুলাই মাসেই আদায় হয়েছিল ৯২,২৮৩ কোটি টাকা। ফলে সেপ্টেম্বরের হিসেব তার থেকে কম। ফলে অর্থমন্ত্রী কার্যত কবুলই করে নিচ্ছেন, ব্যবসা আসলে কম হচ্ছে। সরকার যতই দাবি করুক, বাস্তব ছবিটা কী, সেটি যে কোনও ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসা করলেই বুঝতে পারবেন। তার জন্য খুব বেশি কাঠখড় পোড়ানোর দরকার নেই। সব কিছু গায়ের জোরে বললেই তা সত্য হয়ে যায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy