নতুন মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু। নিজস্ব চিত্র।
পুল শিবিরে থাকা এক মন্ত্রীর স্পষ্ট কথা, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে অরুণাচলের রাজনীতি এক করে দেখা ঠিক নয়। এখানে রাজনীতির চেয়ে অর্থনীতি আর উপজাতির সমীকরণ বেশি শক্তিশালী। টুকির বিরোধিতা করে কংগ্রেস থেকে ৩০ জন বিধায়ক বহিষ্কৃত হলে বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হত। জারি হত রাষ্ট্রপতি শাসন। সে ক্ষেত্রে ফের লম্বা আইনি লড়াইয়ের পরে নির্বাচন হতই। কিন্তু বর্তমান সরকারের হাতে এখনও তিন বছর সময় রয়েছে। অর্থাৎ এই তিন বছরে কেন্দ্রের বিস্তর টাকা রাজ্যে আসবে। অনেক সড়ক ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। এই অবস্থায় মন্ত্রিত্ব ও বিধায়কপদ চলে গেলে কারও লাভ নেই। তাই আপোসের রাস্তাই ছিল সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত।
এআইসিসির কাছেও অরুণাচল ধরে রাখা মর্যাদার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পুল শিবির যখন নেতৃত্ববদল চেয়েছিল, তখনই তা মেনে নিলে এই অস্থিরতাই হত না। তা না করে যে ভুল করেছিল হাইকম্যান্ড তা শুধরে নেয় গত রাতে।
কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে নিশি-আপাতনি-মিশমি-সহ বিভিন্ন উপজাতির প্রতিনিধিদের মধ্যে লড়াই চলতে থাকে। গত কাল রাতে প্রস্তাব দেওয়া হয়, বিদ্রোহীদের আগের দাবি মেনে সরে যাবেন নিশি উপজাতির টুকি। টুকি শিবির দাবি করে, সম্মানের প্রশ্নে, টুকি যদি মুখ্যমন্ত্রী না থাকেন, তবে ইদু-মিশমি উপজাতির পুলকেও মুখ্যমন্ত্রী করা চলবে না। তখনই উঠে আসে মুক্তোর বিধায়ক পেমার নাম। তাঁর বাবা তিব্বতি উৎসের মন পা উপজাতির প্রতিনিধি দোর্জি খান্ডু সকলের কাছে প্রিয় ছিলেন। ২০১১ সালে চপার দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর পর থেকে পেমা বাবার আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। টুকির আমলে তিনি ছিলেন পর্যটন ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। বিদ্রোহ করে পুলের সঙ্গে এলেও তিনি মন্ত্রিত্ব পাননি। পুলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ছিল অম্লমধুর।
হিন্দু কলেজের স্নাতক, ৩৭ বছরের পেমা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে বলেন, "জটিলতা শেষ। পুরো কৃতিত্ব সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীর। তাঁরাই আমাদের ফের এক ছাতার তলায় আনলেন। এখন সকলেই রাজ্যের উন্নতিতে সর্বসম্মতভাবে কাজ করব।" কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আগের বিদ্রোহকে নিছক 'মন কষাকষি' বলে ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী হতে চলা পেমা। প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খান্ডু থুঙ্গনের পরে ফের এক যুব মুখ্যমন্ত্রী পাচ্ছে অরুণাচল।
পদত্যাগ করার পরে টুকি বলেন, "রাজ্যের ঐক্য, উন্নয়নের পরিবেশ বজায় রাখতেই পদত্যাগ করলাম। কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ করাই আমার লক্ষ্য ছিল। পুল ও আমার কোনও ঝগড়া নেই। সবাই একসঙ্গে কাজ করব। আজকের ঘটনা বিজেপির সব অপচেষ্টার পরাজয় ও কংগ্রেসের জয়।"
নাবাম রিবিয়াকে স্পিকার পদ থেকে অপসারণ করতেই বিধানসভা অধিবেশন এগিয়ে এনেছিলেন রাজ্যপাল জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়া। তা থেকেই সাংবিধানিক সংকটের সূত্রপাত। রিবিয়ার করা মামলাতেই জিতে স্বপদে ফেরেন টুকি। ক্ষমতায় ফিরল কংগ্রেস। রিবিয়া এদিন রাজখোয়ার বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, "বিজেপি আর রাজখোয়া হাত মিলিয়ে সব ঝামেলা সৃষ্টি করেছিল। এমন রাজ্যপাল অন্যান্য রাজ্যে থাকলে ভারতের সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে।"
অরুণাচল দখলে গিয়ে হাত ও মুখ পোড়ানোর পরে গোটা ঘটনায় নিজেদের ভূমিকা অস্বীকার করে বিজেপি। এ দিন রাজ্যের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বলেন, "অরুণাচলে যা হয়েছে- তা কংগ্রেসের নিজের অন্তর্দ্বন্দ্ব। আমরা শুধু পিপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন জানিয়েছি মাত্র।" রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার প্রসঙ্গে রিজিজু বলেন, "রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবণতি হওয়ায়, রাজ্যপালের পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।"
আরও পড়ুন...
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে চান মুখ্যমন্ত্রী