রাজ্যে বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি স্কুলগুলি অধিগ্রহণের বর্তমান পরিস্থিতি, সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধানসূত্র-সহ শ্বেতপত্র প্রকাশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তিনি জানালেন, যোগ্যতা থাকা স্কুল, মাদ্রাসা, টোলগুলি অধিগ্রহণ করা হলে রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত প্রায় ৮০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। তা মেটাতে বসানো হবে কর, উপকর, টোল, শিক্ষা-সেস।
শ্বেতপত্রে মন্ত্রী জানান, উপযুক্ত পরিকল্পনা, পরিকাঠামো ছাড়া ও কেন্দ্রীয় নীতি না মেনে আগের সরকার স্কুল-কলেজ অধিগ্রহণ করায় সমস্যা বেড়েছে। রাজ্যের উপরে অতিরিক্ত টাকার বোঝার সঠিক হিসেবও শিক্ষা দফতর দিতে পারেনি।
হিমন্ত জানান, ২০১১ সালের স্কুল অধিগ্রহণ আইন লাগু হওয়ার আগে পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৪৭৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৩৫৫ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি সরকারিকরণ হয়েছে। বেতন বাবদ খরচ হচ্ছে ৬ হাজার ২২৫ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, টেকনিক্যাল কলেজগুলি জুড়লে খরচের পরিমান দাঁড়ায় ৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ২০১১ সালে অধিগ্রহণ আইন রূপায়নের সময় ৬০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি সরকারি করার কথা বলা হয়েছিল। দেখানো হয়, আনুমানিক খরচ ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। যা ভুল। ইতিমধ্যে ৫৭ হাজার ১৩১ জন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি সরকারিকরণ হয়েছে। কিন্তু এখনও যোগ্যতাপ্রাপ্ত ৬ হাজার ৬০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৩ হাজার ৬৬৮ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর অধিগ্রহণ বাকি। আরও ১৬২টি মাদ্রাসার ১ হাজার ৬৯৬ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী, ১ হাজার ৩৭০টি স্কুল-কলেজের ১২ হাজার ১৪১ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সরকারি চাকরির দাবি জানাচ্ছেন। সরকারিকরণ দাবি করে ৬৮৩টি মামলা ঝুলছে। ফলে রাজ্য সরকারের ঘাড়ে বিরাট খরচ চাপতে চলেছে। এমনিতেই রাজ্যের মোট বেতনের ৪০ শতাংশ শিক্ষা দফতরেই ব্যয় হয়। হিমন্তের হিসেবে, এ ভাবে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ সব সরকারি কর্মীকে বর্ধিত বেতন দেওয়ার টাকা থাকবে না।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, অনেক বেসরকারি স্কুলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা আইন, শিক্ষা অধিকার আইন, ইউজিসি আইন-সহ বিভিন্ন আইনে বেঁধে দেওয়া ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, পরিকাঠামো, শিক্ষকদের যোগ্যতা, সংরক্ষণের বিভিন্ন নীতি মানা হয়নি।
অধিগ্রহণের জট ছাড়াতে হিমন্তর দাওয়াই— আগের আইন বাতিল করে নতুন আইন আনা হচ্ছে। ২০০৬ সালের পর গজিয়ে ওঠা স্কুল-কলেজকে অধিগ্রহণের আওতায় আনা হবে না। সংরক্ষণ নীতি কার্যকর করতে হবে দফায়-দফায়। শিক্ষা আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা থাকা শিক্ষকরাই পূর্ণ শিক্ষক হবেন ও বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন পাবেন। বাকিদের দ্রুত ওই যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। প্রতি কিলোমিটারে একটি নিম্ন প্রাথমিক, তিন কিলোমিটারে একটি উচ্চ প্রাথমিক, পাঁচ কিলোমিটারে একটি মাধ্যমিক ও সাত কিলোমিটার পরিধিতে একটিই উচ্চমাধ্যমিক স্কুল থাকবে। একাধিক স্কুল থাকলে তাদের মিলিয়ে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy