সাংবিধানিক পদ হলেও ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর লিঙ্গুইস্টিক মাইনরিটিজ’-কে (এনসিএলএম) কোনও পাত্তাই দিচ্ছে না অসম সরকার। গত তিন বছর ধরে কমিশন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইছে। রাজ্য সরকার তা কার্যত উপেক্ষাই করছে। জবাব দিচ্ছে না।
অসমের ভাষা-ভিত্তিক সংখ্যালঘুদের অবস্থান নিয়ে এক আলোচনায় সামনে এসেছে এই তথ্য। জননেতা তারাপদ ভট্টাচার্য জন্মশতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে কাছাড় কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক জয়দীপ বিশ্বাস বিষয়টিকে সামনে আনেন। তাঁর বক্তব্য, লিঙ্গুইস্টিক মাইনরিটি কমিশনের প্রধানের পদটি শুধু একটি চেয়ার বা চাকরি-মাত্র নয়। এটি সাংবিধানিক পদ। প্রতি বছর তাঁকে লোকসভা, রাজ্যসভা ও রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট পেশ করতে হয়। এনসিএলএম কমিশনার অধ্যাপক আখতারুল ওয়াইসি গত তিন বছর ধরে তাঁর রিপোর্টে অসম সরকারের অসহযোগিতার ব্যাপারে নালিশ করছেন। এ বার ৫২-তম রিপোর্টেও তিনি সেই একই কথার উল্লেখ করেন।
জয়দীপবাবু বলেন, ‘‘দেশভাগের বলি বাঙালিরা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শিকার হয়ে অসমে এসেছিলেন। আর এসে ভাষা-ভিত্তিক সংখ্যাগুরুদের আক্রমণের শিকার হলেন।’’ এ জন্য সংবিধানপ্রণেতা ও কংগ্রেস নেতাদেরই দায়ী করেন তিনি। জয়দীপবাবুর কথায়, ‘‘নেতারা তখন ভাষার স্পর্শকাতরতা বোঝেননি। আর আজও বিষয়টিকে যে তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তা লিঙ্গুইস্টিক মাইনরিটি কমিশনের রিপোর্টেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে!’’
কংগ্রেসের তৎকালীন নেতাদের দোষারোপ করেন প্রধান অতিথি, সর্বভারতীয় বাংলা ভাষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক নীতীশ বিশ্বাসও। তিনি জানান, তঞ্চকতার মাধ্যমে দেশভাগ করেছেন নেতারা। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, বাঙালিরা একত্র থাকলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি তাঁদের দখলে থাকবে। তাই দেশভাগের তত্ত্ব তৈরি করা হয় তখন। তাঁর কথায়, ‘‘সেই তত্ত্বের জেরেই আজও অসমের বাঙালিদের বিদেশি বলে সন্দেহের নজরে দেখা হয়।’’ এনআরসি, ডি-ভোটার, সব মিলিয়ে তিনি অশনিসঙ্কেত দেখতে পাচ্ছেন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য হিন্দু-বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
উদ্বাস্তু পুনর্বাসন আন্দোলনের নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক তারাপদ ভট্টাচার্যও এই জায়গাতেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি (সিআরপিসি)-র মুখ্য উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী, প্রাক্তন বিধায়ক মোস্তাফা শহিদুল ইসলাম, সারা অসম স্বর্ণশিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সভাপতি জগবন্ধু পাল ও নীলোৎপল চৌধুরী। স্বাগত ভাষণ দেন তারাপদ ভট্টাচার্যের বড় ছেলে, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য। পৌরোহিত্য করেন জন্মশতবর্ষ উদযাপন সমিতির সভাপতি মনুজেন্দ্র শ্যাম। এই উপলক্ষে ‘আগুনের পরশমণি’ নামে একটি স্মারকগ্রন্থও এদিন প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে এর আবরণ উন্মোচন করেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতীশকুমার ভট্টাচার্য। সুমিতা ভট্টাচার্য, সুচরিতা চৌধুরী ও বিশ্বজিত রায়চৌধুরীর সঙ্গীত এবং অনির্বাণজ্যোতি গুপ্তের আবৃত্তিতে অনুষ্ঠান পূর্ণ মাত্রা পায়।
স্মৃতিচারণায় হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী বলেন, তারাপদবাবু বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে গেলেও অসমিয়া-বিদ্বেষী ছিলেন না। হিন্দু-মুসলমান সমন্বয়ে তিনি বিশ্বাস করতেন। আজ বাঙালির সামনে এনআরসি, নাগরিকত্ব বিল ইত্যাদি নিয়ে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তারাপদবাবুর ভাবনাতেই তার উত্তর মিলতে পারে। নীতীশ বিশ্বাসও বলেন, ‘‘ বাঙালি ঐক্য গড়ে তোলা গেলেই পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসা সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy