কখনও সে জলে আধডোবা, কখনও আপনমনে কলা গাছ মুড়িয়ে মুখে ঢোকাতে ব্যস্ত। তাকে দেখতে প্রতিদিন গাড়ি চেপে, নৌকো করে আসছেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। শেষ পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারী ভারতের হাতিকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে আজ বাংলাদেশ পৌঁছলেন অসম বন দফতরের তিন প্রতিনিধি। কাজিরাঙা থেকে জলে পড়া হাতিটি গুয়াহাটি, ধুবুরি হয়ে বাংলাদেশের যমুনার চরে পৌঁছয়। মাসখানেকের যাত্রার ধকলে সে ক্লান্ত। বগুড়ায় জামালপুর এ ঝালুপাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে হাতিটি বাংলাদেশে এক ব্যক্তিকে পিষে মেরেছিল। কিন্তু আপাতত সে হয়ে উঠেছে দর্শনীয় বস্তু। বাংলাদেশ বন দফতরের
১৭ জনের দল হাতির উপরে নজরাদারি চালাচ্ছেন।
ভিসার সমস্যা ও অন্যান্য জটিলতা কাটিয়ে হাতিটি ফেরত আনতে আজ বাংলাদেশে পৌঁছান হস্তি বিশেষজ্ঞ কৌশিক বরুয়া, প্রাক্তন মুখ্য বনপাল রীতেশ ভট্টাচার্য, গোয়ালপাড়ার ডিএফও এস এ তালুকদার। বাংলাদেশ বন দফতরের উপ বন সংরক্ষক মহম্মদ সাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, আগামীকাল ভারতের প্রতিনিধিদল বেলা ১২টা নাগাদ জামালপুরে আসবে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে হাতি উদ্ধারের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ইনস্পেক্টর অসীম মল্লিক জানান, লোকালয়ের ৫০০ মিটার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে হাতিটি। ৫ টন ওজনের প্রাণীটির দৈনিক প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম খাবার খায়। বন্যার জল থাকলেও আখ ও কলাগাছের খেত থাকায় হাতিটি খাবার পাচ্ছে। বৃহস্পতিবারই তাকে সরিয়ে পাশের বড়রাস্তা বা মাঠে নিয়ে যাওয়া হবে। তার পর তাকে ঘুম পাড়ানি গুলি ছুঁড়ে অবশ করে চিকিৎসা করা হতে পারে। পশু চিকিৎসক সৈয়দ হোসেন জানান, হাতিটিতে ভারতে ফেরানোর ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রথমে তার শুশ্রূষা প্রয়োজন।
অবশ্য জলে থাকা হাতি দেখতে যে ভাবে নৌকা বোঝাই মানুষ ভিড় করছেন তাতে হাতিকে শুকনো ডাঙায় তোলা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলে থাকলে তাকে ঘুম পাড়ানি গুলি ছোঁড়া সম্ভব হবে না। পাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে তাকে মাঠের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হবে বলে জানান হোসেন। রাতে পুলিশ, প্রশাসন এবং বন দফতর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ঘুম পাড়ানোর পরে হাতিটিকে সড়কপথে জামালপুর হয়ে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তাকে বাংলাদেশ রাখার সিদ্ধান্ত হলে নিয়ে যাওয়া হবে গাজিপুর সাফারি পার্কে। হাতি নিয়ে যাওয়া হবে জানতে পেরে শেষ দিনে ঝালুপাড়ায় ছিল দশমীর মতোই ভিড়ের চাপ। ভিড় সামলাতে নাজেহাল হচ্ছেন বনকর্মীরা। এ ভাবে চলতে থাকলে মেজাজ বিগড়ে হাতিটি কাউকে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা বনকর্মীদের।