অসমের ১২টি তৈলক্ষেত্র নিলাম করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আজও অব্যহত। আসু, কৃষকমুক্তি সংগ্রাম সমিতি, টাই আহোম সংগঠনগুলির সঙ্গে আজ গলা মিলিয়ে সরকারের সমালোচনায় নেমেছে আলফা স্বাধীন। সেই সঙ্গে কংগ্রেস এমনকী, শাসক জোটের শরিক অসম গণ পরিষদের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্তও তৈলক্ষেত্রে নিলামের বিরোধিতা করেন। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও বিজেপির তরফে জানানো হয় রাজ্যের সম্পদ বেহাত হওয়ার আশঙ্কা অমূলক।
আজ আলফা স্বাধীন বিবৃতি দিয়ে জানায়, রাজ্যের সম্পদ বাইরের হাতে তুলে দেওয়া ভারত সরকারের শোষণনীতির প্রমাণ। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে আলফা কাজ করবে। নিলামের প্রতিবাদে টাই-আহোম বন্ধের জেরে উজানি অসমে ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
অসম গণ পরিষদের বিধায়ক প্রফুল্ল মহন্ত বলেন, "দলের নীতি সবসময়ই রাজ্যের সম্পত্তি রক্ষার পক্ষে। আমরা তৈলসম্পদ বেহাত হওয়ার বিরোধী। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনা করুক।"
বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে স্মারকলিপি পাঠান। তিনি ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, অসমের মানুষ এর আগেও 'রক্ত দেব, তেল দেব না' স্লোগান তুলে আন্দোলন করেছেন। ছোট বা প্রান্তিক তৈলক্ষেত্রগুলি গেল, অয়েল, এইচপিসিএলের হাতে তুলে দিয়ে রাজ্যের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তেল ও গ্যাস আহরণ করা হোক। তাতে রাজ্যের হাতেই সম্পদ থাকবে, তার ব্যবহারও হবে।
বিজেপির তরফে অবশ্য যুক্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, তৈলক্ষেত্র নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অসমবাসীকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী খনিজ সম্পদ রাষ্ট্রের সম্পত্তি। ওই ১২টি তৈলক্ষেত্র ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে আবিষ্কার হলেও লাভদায়ক না হওয়ায় তৈলক্ষেত্রগুলি এত দশক ধরে পড়ে আছে। আগের সরকারগুলি কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বরং রাজ্যের ক্ষতিই হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, তৈলক্ষেত্রগুলি নিলাম করলে সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকা পেতে পারে। কিন্তু সরকারকে নিজে তৈলক্ষেত্রে আহরণের উদ্যোগ নিলে তৈলক্ষেত্রপ্রতি চার হাজার কোটি টাকা করে মোট ৪৮ হাজার টাকা খরচ হবে। কিন্তু লাভ তেমন হবে না। যোগ হবে হাজার হাজার কর্মীর বেতন। অন্য দিকে বেসরকারি সংস্থা খনন করলে থোক টাকা হাতে আসবে। সেই সঙ্গে যন্ত্রপাতি, পরিকাঠামো, কারখানা তৈরি, তেল তোলা, পরিবহণ, কর্মচারী মিলিয়ে অনেক মানুষের চাকরি হবে। নিয়োগ হবে সব মিলিয়ে প্রায় ষাট হাজার লোক। তৈরি হবে সহযোগী শিল্প। ১২ তৈল ক্ষেত্রের তেল রয়্যালটি ও ভ্যাটও অসম সরকারের ঘরে জমা পড়বে। কিন্তু তৈলক্ষেত্রগুলি ফেলে রাখলে গোটাটাই ক্ষতি।
অন্য দিকে নগাঁও জেলার রহায় এইমস তৈরি না করে চাংসারিতে এইমসের জন্য জমি দেওয়ার প্রতিবাদে এদিনও রহায় আন্দোলন চলছে। আজ সন্ধ্যা পাঁচটায় আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল চাংসারিতে ৫৭১ বিঘা দুই কাঠা জমি কেন্দ্রের হাতে এইমস গড়ার জন্য তুলে দেন। প্রতিবাদ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা রাজ্যে সাতটি স্থান দেখে চাংসারিকে নির্বাচন করেছেন। রাজ্যবাসীর অনেকদিনের স্বপ্নপূরণ হবে এইমস গড়া হলে। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এইমসে ৫০০ শয্যা, ১৮টি সুপার স্পেশালিটি বিভাগ ও প্রতি বছর ১০০ জন ছাত্রভর্তির ব্যবস্থা থাকবে। ২০১৯ সাল থেকে এইমস কাজ শুরু করবে। ২০১৭ সালে ডিফু মেডিক্যাল কলেজের কাজ শেষ হবে। এই সরকার আরও পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ গড়বে। রহায় এইমসের ধাঁচেই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও গবেষণা কেন্দ্র গড়া হবে। আরও একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হবে রহাকে। অবশ্য তাতে আন্দোলন থামেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy