বরফরাজ্য: বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশের ছিটকুল। আটকে পড়া এক পর্যটকের ক্যামেরায়।
সামনে বরফ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করছে জেসিবি। পিছনে আস্তে আস্তে চলছে পরপর গাড়ি। গাড়িতে টানা চার দিন আটকে থাকা পর্যটকের দল। রাস্তা পরিষ্কার করে পর্যটকদের উদ্ধার করা, তাঁদের জল ও খাবার দেওয়ার কাজ তত্ত্বাবধান করছেন ‘ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ বাহিনী’-র জওয়ানরা। শনিবার সকালে হিমাচল প্রদেশের ছিটকুল থেকে রওনা হয়ে সাংলার পথে মাত্র আট কিলোমিটার পথ পেরোতেই গড়িয়ে গেল দুপুর।
হিমাচল প্রদেশে বেড়াতে গিয়ে ছিটকুলে প্রবল তুষার ঝড়ে টানা চার দিন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন বয়সের ৭০ জন পর্যটক। কার্যত বরফের নীচে চাপা পড়ে যাওয়া ছিটকুলে মেলেনি খাবার, জলও। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। অবশেষে শুক্রবার দুপুরে ‘ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ বাহিনী’ গিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেয়। আবার শুক্রবার রাত থেকে কিছুটা দাপট কমে ঝড়েরও। শনিবার জেসিবি দিয়ে রাস্তার বরফ কেটে কোনওমতে ছিটকুল থেকে বার করে আনা হয় পর্যটকদের।
২৯ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কলুপুকুর, নতুন পুকুর, বিজয়নগর, দত্তপুকুর, বিড়া, গুমার ৭০ জন বাসিন্দা বেরিয়ে ছিলেন হিমাচল প্রদেশ ভ্রমণে। দলে ৮৫ বছরের পুষ্প সিকদার যেমন আছেন, তেমনই আছে সৌমী, দিয়া, নীলাভর মতো ছোটরা। ৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার পর্যটক দল দুপুরে পৌঁছয় ছিটকুলে। আর বিকেল থেকে শুরু হয় দুর্যোগ।
পরিবারের ১৭ জনকে নিয়ে আটকে পড়েছিলেন কলুপুকুরের সুকান্ত সিকদার। শনিবার তিনি ফোনে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে আবহাওয়া হঠাৎ খারাপ হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে গোটা ছিটকুল শহর বরফে ঢেকে যায়। টানা তিন ধরে চলে অঝোরে তুষারপাত। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সমস্ত দোকানপাট, হোটেল সবই বরফে ঢাকা ছিল। সুকান্তবাবুর
কথায়, ‘‘সে এক সাংঘাতিক পরিস্থিতি। নেই পানীয় জল। নেই খাবার। অনেকে অসুস্থ হয়েও পড়েন। কিন্তু ওষুধও মেলেনি। বারাসতে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।’’
আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হতে বরফ কেটে রাস্তা বার করার কাজ শুরু হয়। শনিবার সকালে ছিটকুল থেকে রওনা হয়ে ২৪ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সন্ধ্যায় সাংলা পৌঁছয় দলটি।
স্ত্রী মিতা ও সাড়ে তিন বছরের তনুষকে নিয়ে যাওয়া বিড়ার অমিত বিশ্বাস এ দিন বলেন, ‘‘শনিবার রাতে কালকা থেকে আমাদের হাওড়া ফেরার ট্রেন ছিল। সেটা পেলাম না। শনিবার রামপুরে গিয়ে রাত কাটাব। রবিবার কালকা অথবা চণ্ডীগড়ে গিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করব।’’ মুম্বই থেকে ছিটকুল বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন রিয়া চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বাঙালি পেয়ে আমরা এই দলের সঙ্গে ফিরছি। না হলে কী হতো কে জানে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy