পটনায় অরবিন্দ কেজরীবালকে স্বাগত জানাচ্ছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বৃহস্পতিবার শ্যামলী দে-র তোলা ছবি।
এসেছিলেন নীতীশ কুমারের হয়ে প্রচার করতে। কিন্তু নিজের ঢাকই পিটিয়ে গেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নীতীশের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে তিনি ব্যয় করলেন মাত্র পাঁচ মিনিট। আর ৪০ মিনিট ধরে বলে গেলেন গত কয়েক মাসে দিল্লিতে কী কী উন্নয়নের কাজ হয়েছে। পটনায় দাঁড়িয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে সে ভাবে প্রচার না করায় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
পটনায় আয়োজিত ‘কুশল লোকসেবা প্রণালী থেকে নাগরিকদের স্বশক্তিকরণ’ শীর্ষক সেমিনারের এ দিন প্রধান অতিথি ছিলেন কেজরীবাল। সেমিনারের সভাপতি ছিলেন নীতীশ। বিহার লোকসেবা আইন ২০১১ সংক্রান্ত সেই সেমিনারে বিহারের ভোটের কথা মাথায় রেখে কেজরীবাল বলেন, ‘‘নীতীশ কুমারজি বিহারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তা নিয়ে দিল্লিতেও আলোচনা হচ্ছে। ১১ কোটি মানুষ এখন পর্যন্ত লোকসেবার সুবিধা পাচ্ছেন। যাঁরা এই আইনকে মানুষের কাজে লাগিয়েছেন তাঁদের অভিনন্দন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার প্যাকেজ দিয়ে বিহারকে কেনার চেষ্টা করছে।’’ ডিএনএ বিতর্ক নিয়েও মুখ খোলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘বিহারের মানুষের ডিএনএ খারাপ বলা বিহারের অপমান। বিহারের মানুষ এর জবাব দেবেন।’’
ব্যস, ওই টুকুই। এর পরে কার্যত নিজের প্রচার শুরু করে দেন কেজরীবাল। বলেন, ‘‘দিল্লিতে আমরা ৭০টার মধ্যে ৬৭টি আসন কেন পেলাম সেটা দেখতে হবে। আগে শংসাপত্র তৈরি করতে মানুষের খুব সমস্যা হতো। দালালের সাহায্য নিতে হতো গরিবদের। সমস্ত শংসাপত্র তৈরি আমরা সহজ করে দিয়েছি। এখন শংসাপত্রের জন্য সাইবার ক্যাফে থেকেই
আবেদন করা যায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বর্তমান ব্যবস্থায় মানুষের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে। মানুষ পজিটিভ রাজনীতি চান।’’ দিল্লিতে নিজের কাজের ফিরিস্তি দেওয়ার পাশাপাশি কেজরীবালের দাবি, আগামী নির্বাচনে দিল্লিতে ৭০টি আসন তাঁরাই পাবেন। কেজরীবাল যখন এই সব কথা বলছেন, তখন গম্ভীর মুখে বসে থাকতে
দেখা যায় নীতীশকে। কেজরীবালের পরে বলতে উঠে তিনি দু’লাইন আরটিআই নিয়ে বলেন। বাকি গোটাটাই ছিল ২০০৫ থেকে রাজ্য সরকার কী করছে
তার ঘোষণা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে লোকসেবা-র উপরে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন তথ্যের অধিকার নিয়ে কাজ করা
সমাজকর্মী সুভাষচন্দ্র অগ্রবাল। তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের অধিকার সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে।’’
কেজরীবাল নীতীশের হয়ে সে ভাবে প্রচার না করায় আক্রমণ করেছে বিজেপি। দিল্লিতে সদর দফতরে দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি নীতীশ কুমার আজ কেজরীবালের সফরে ক্ষুব্ধ। কারণ নীতীশ ভেবেছিলেন কেজরীবাল এসে তাঁর গুণগান করবেন। কিন্তু উল্টে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী নিজের প্রশংসা করে গেলেন।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘নীতীশ বিহার মডেলের ঢাক পেটাতেন, সেখানে কেজরীবাল দিল্লি মডেলের পাঠ পড়ালেন।’’
২০১৩ সালে কেজরীবালের করা একটি টুইটকেও আজ সামনে এনেছে বিজেপি। লালুপ্রসাদ জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে কেজরী লিখেছিলেন, ‘‘কয়েকশো কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে জরিমানা মাত্র ২৫ লক্ষ টাকা। এটা কি কোনও চুক্তি!’’ বিজেপির বক্তব্য, সে সময় আদালতের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কেজরীবাল। দিল্লিতে কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। অথচ আজ সেই লালু-কংগ্রেসের জোটের সমর্থনেই ভোট প্রচার করছেন কেজরীবাল।
এ দিন পটনায় বিক্ষোভের মুখেও পড়েন কেজরীবাল। সকাল আটটা ৫০ মিনিট নাগাদ পটনা বিমানবন্দরে পৌঁছন। তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য হাজির ছিলেন কয়েকশো সমর্থক। ‘গুরু’ অণ্ণা হজারের দুর্নীতি-বিরোধী মঞ্চ থেকেই রাজনীতির পথ চলা শুরু হয়েছিল কেজরীবালের। হজারের কিছু সমর্থকই এ দিন আচমকা কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কেজরী-সমর্থকদের সঙ্গে তাঁদের মারপিট শুরু হয়ে যায়। কোনও মতে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
সেখান থেকে কেজরীবাল স্টেট গেস্ট হাউসে পৌঁছন। হাউসেযান নীতীশও। সেখান থেকে দু’জনে সেমিনারে হাজির হন। সেমিনার শেষে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে দুই নেতা গয়ার মহাবোধি মন্দিরে যান।
কেজরীবালের সফরের জন্য মন্দির ২টো থেকে চারটে পর্যন্ত সাধারণের জন্য বন্ধ ছিল।
এরই মধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের আশা কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশ তাঁদের হটিয়ে দেয়।
গয়া থেকে পটনা হয়ে দিল্লি ফিরে যান কেজরীবাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy