Advertisement
E-Paper

সাধ্বী নিয়ে চেঁচিয়ে মুখ পুড়ল তাপসে

মুখের আগল ভাঙল বলে সাধ্বীর পরে রাগ করো! কিন্তু তাপস পাল, অনুব্রত মণ্ডল? “দিদি ওঁদের তো বকেননি! ওঁরা কি ক্ষমা চেয়েছেন!” কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির ইস্তফার দাবিতে আজও যখন কল্যাণ-কাকলি-ডেরেকরা হট্টগোল করে সংসদ অচল করলেন, তখন ঠিক এই প্রশ্নে বিঁধে তৃণমূলকে ধরাশায়ী করল বিজেপি। ঘটনাচক্রে তাপস-অনুব্রতর মন্তব্য নিয়ে দিল্লিতে যে দিন অস্বস্তিতে পড়তে হল দলকে, সে দিন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দলকে বেজায় বিড়ম্বনায় ফেললেন অশালীন মন্তব্য ও হাতের ভঙ্গি করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪১

মুখের আগল ভাঙল বলে সাধ্বীর পরে রাগ করো!

কিন্তু তাপস পাল, অনুব্রত মণ্ডল? “দিদি ওঁদের তো বকেননি! ওঁরা কি ক্ষমা চেয়েছেন!” কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির ইস্তফার দাবিতে আজও যখন কল্যাণ-কাকলি-ডেরেকরা হট্টগোল করে সংসদ অচল করলেন, তখন ঠিক এই প্রশ্নে বিঁধে তৃণমূলকে ধরাশায়ী করল বিজেপি। ঘটনাচক্রে তাপস-অনুব্রতর মন্তব্য নিয়ে দিল্লিতে যে দিন অস্বস্তিতে পড়তে হল দলকে, সে দিন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দলকে বেজায় বিড়ম্বনায় ফেললেন অশালীন মন্তব্য ও হাতের ভঙ্গি করে। ক’দিন আগেও তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।

তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের হুমকি, অশালীন মন্তব্য ঘিরে রাজ্যে জোর বিতর্ক চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। রাজ্যের সংস্কৃতি বিপন্ন এই বার্তা দিতে বিজেপির ডাকে বিশিষ্ট জন থেকে সাধারণ মানুষ পথে মিছিলও করেছেন সম্প্রতি। তা সত্ত্বেও সাধ্বী নিরঞ্জনের কুকথা নিয়ে বিজেপিকে চেপে ধরতে পিছপা নয় তৃণমূল। সংসদের লবিতে এ দিন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা হয় এ নিয়ে। পরে ঠিক হয়, দুই দলই কাল লোকসভায় সাধ্বী প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাবের নোটিস দেবে ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর জবাব চাইবে। সাধ্বী প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর জবাব চায় সিপিএম-ও।

খাস রাজধানীতে পরশু এক জনসভায় ‘রামজাদা’র নামে ভোট চাইতে গিয়ে বিপক্ষকে বেমক্কা বাজে কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন। নেতৃত্বের চাপে কাল সংসদের দুই কক্ষে এ জন্য ক্ষমা চান সাধ্বী। কিন্তু বিরোধীরা তাঁর অপসারণের দাবি থেকে সরতে নারাজ। বাকি বিরোধীদের সঙ্গে পেরে না উঠলেও এক তাপস-অনুব্রত ‘বাউন্সারেই’ তৃণমূলকে বসিয়ে দেয় বিজেপি।

সাধ্বী প্রশ্নে তখন লোকসভায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার, ইদ্রিস আলি-সহ তৃণমূল সাংসদরা গলা ফাটাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে স্লোগান দিচ্ছেন, “স্বচ্ছ ভারতে কালি মন্ত্রী!” এ সময় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু উঠে বলেন, “তাপস পাল যখন গর্হিত ভাষা ব্যবহার করেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেছিলেন? তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কি! বরং বলেছিলেন, আমি ওঁকে কী করব! খুন করব?”

কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “দিদির কেষ্টর কথা ভুলে যাচ্ছেন! বিরোধীদের ঘরে আগুন দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুনে বলেছিলেন, কেষ্ট ভাল সংগঠক। মাথায় অক্সিজেন একটু কম যায়!”

নদিয়ার এক গ্রামে গিয়ে নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ আখ্যা দিয়ে তাপস সিপিএম সমর্থকদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে তাঁদের মা-বোনকে ধর্ষণ করানোর হুমকি দিয়েছিলেন। লোকে ছি ছি করার পর কার্যত গা ঢাকা দেন। সংসদের গত অধিবেশনের গোটাটাই ডুব দেন তিনি। চলতি অধিবেশনে এলেও খুবই আলগোছে সংসদে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। লোকসভায় নিঃশব্দে ঢুকছেন, মাঝপথে বেরিয়ে যাচ্ছেন। দলের নাটুকে ধর্নাগুলিতে থাকছেন, কিন্তু এক্কেবারে পিছনের সারিতে। আজও ছিলেন মুখে কুলুপ এঁটে। উল্টে বেঙ্কাইয়ার পাল্টা চালের পরেই বিজেপির কয়েক জন মহিলা সাংসদ প্রায় তেড়ে যান তাপসের দিকে। লোকসভার তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তাপস পালের বিষয়টি বিচারাধীন। তাঁর ও সাধ্বীর মন্তব্য একই বন্ধনীতে ফেলা ঠিক নয়।

তাপসের প্রতি কোনও সহানুভূতি না থাকলেও কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “বিজেপি ফালতু যুক্তি দিচ্ছে। ও চুরি করেছে বলে আমিও চুরি করব! বাকি বিরোধীদের জবাব দিতে না পেরে বিজেপি এখন ল্যাজকাটাদের তাড়া করছে। তাপসের যুক্তি দিতে হলে সাধ্বীর বিরুদ্ধেও ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। দল ব্যবস্থা না নিলেও আদালত তাপস পালের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।” সাধ্বীর ক্ষেত্রে তাঁর দল ক্ষমা চাওয়াকে যথেষ্ট মনে করলেও দিল্লির তিলকনগর থানায় আজ একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য করার জন্য। তিসহাজারি আদালতের এক আইনজীবী সাধ্বীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনের ৩টি ধারায় মামলা করেছেন।

বেঙ্কাইয়া আজ স্পষ্ট জানিয়েছেন, ক্ষমা চাওয়ার পরে মন্ত্রিসভা থেকে নিরঞ্জনকে সরানোর প্রশ্ন নেই। যদিও বিজেপি ভালই জানে ব্যাপারটা এত সহজে মিটবে না। গত এক দশক তারা সংসদ অচল করে রাখার নীতি নিয়ে চলেছে। তাই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এই প্রথম একটা মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে সহজে মিটমাট করতে কোনও ভাবেই রাজি নয় কংগ্রেস, সিপিএম বা অন্য বিরোধীরা। তারাও বিভিন্ন বিল পাশ আটকাতে একই রাস্তা নিতে চলেছে। প্রকাশ্যে না বললেও ঘরোয়া আলোচনায় সেই কৌশলের কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। দলের এক মুখপাত্র বলেন, “বিজেপির অস্ত্র এ বার ওঁদের দিকেই ব্যুমেরাং করে ফেরানো হবে।”

প্রশ্ন হল, সাধ্বীর কুকথার বিরুদ্ধে তৃণমূল লড়বে কোন মুখে? তাদের তাপস-অনুব্রত মায় মমতার কুকথাই তো ব্যুমেরাং করে ফেরাচ্ছে বিজেপি!

sadhvi niranjan hate speech tapas pal parliament national news online national news BJP TMC west bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy