Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মাথা-নাক কাটার হুমকি দিয়ে ইস্তফা সুরজের

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজ্যে ‘পদ্মাবতী’কে স্বাগত জানানোয়, তাঁকেও নাক কাটার হুমকি দিতে ছাড়েননি ওই নেতা।

সুরজ পাল আমু।

সুরজ পাল আমু।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০৭
Share: Save:

দীপিকা পাড়ুকোনের মাথার দাম দশ কোটি টাকা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। হরিয়ানার বিতর্কিত বিজেপি নেতার হুমকি-তালিকা থেকে বাদ পড়েননি ‘পদ্মাবতী’-র পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালী ও অভিনেতা রণবীর সিংহও। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজ্যে ‘পদ্মাবতী’কে স্বাগত জানানোয়, তাঁকেও নাক কাটার হুমকি দিতে ছাড়েননি ওই নেতা। আজ হরিয়ানা বিজেপির মুখ্য মিডিয়া কো-অর্ডিনেটরের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সেই সুরজ পাল আমু।

সেটা যে দলের চাপের মুখে পড়ে, সুরজের কথাতেই তা স্পষ্ট। অভিমানী নেতা বলেন, ‘‘রাজ্য ও কেন্দ্রের বড় বড় নেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিল দল...। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাজের প্রতি দায়বদ্ধ, নিষ্ঠাবান কোনও নেতাকে চান না মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর।’’

বিজেপি সূত্রও বলছে, সুরজকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পদ্মাবতী-র ঐতিহাসিক তথ্য যাচাই করে, তা মুক্তির পক্ষে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সুরজ যে ধরনের ফতোয়া দিচ্ছিলেন, তাতে খুশি ছিল না বিজেপি। দলের মতে, গুজরাত ভোটের মুখে এ ধরনের ঘটনায় শুধু দেশের ভিতরে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছিল। সেই কারণেই দীপিকার মাথার দাম ঘোষণার পরে সুরজকে কারণ-দর্শানোর নোটিস ধরিয়েছিল দল। কিন্তু তাতেও মুখ বন্ধ করা যায়নি। এর পর মমতার নাক কাটার হুলিয়া দেন তিনি। আজ অবশ্য ইস্তফা দেওয়ার পরেই সুরজের নতুন নিশানা ফারুক আবদুল্লা। নতুন হুমকি— লালচকে ফারুককে চড় মারা তাঁর স্বপ্ন।

অনেকেই অবশ্য সুরজের ইস্তফাকে বিজেপির ‘সুর নরম’ হিসেবেই দেখছেন। মোদী সরকার যে পদ্মাবতী-প্রশ্নে কিছুটা হলেও নিজেদের অবস্থান থেকে পিছিয়েছে, তা বোঝা গিয়েছিল গত কালই। প্রথম বার মুখ খুলেছিলেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘সেন্সর বোর্ড নিশ্চয়ই সব দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে।’’ তবে এই বার্তাও বেশ পরিকল্পনা মাফিক। কারণ অমিত শাহের কথায় এটা টের পাওয়া গিয়েছে, গুজরাত ভোটের আগে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে নিষেধাজ্ঞা উঠছে না। আর বিরোধীদের দাবি, পদ্মাবতী নিয়ে যাবতীয় হইচই শুধুই গুজরাত ভোটের আগে মেরুকরণের কৌশল। রাজপুত ভোট টানতেই গুজরাতে নিষেধাজ্ঞা জারি।

ও দিকে, আদালতের পরে পদ্মাবতী বির্তক এ বার সংসদ চত্বরে। ওই সিনেমাকে ঘিরে বিবাদের কারণ জানাতে আগামিকাল পদ্মাবতীর পরিচালক, প্রযোজক, সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সচিবকে ডেকে পাঠিয়েছে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। পাশাপাশি আগামিকাল ওই ব্যক্তিদের সংসদীয় পিটিশন কমিটির সামনে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির দুই সদস্য তথা রাজস্থানের সাংসদ ওপি রাম ও সিপি জোশী কিছু দিন আগেই কমিটির কাছে ‘পদ্মাবতী’র মুক্তির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার দাবি জানান। আগামিকাল ওই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা। হাজির থাকবেন পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালী ও সেন্সর বোর্ডের প্রধান প্রসূন জোশী।

তবে সেন্সর বোর্ড ছবিটি দেখার আগেই এ ভাবে সংসদীয় কমিটি হস্তক্ষেপ করায়, খুশি নন অনেকেই। সেন্সর বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য অশোক পণ্ডিতের মতে, সেন্সর বোর্ড দেখে নেওয়ার পরে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বসা উচিত ছিল। তাঁর মতো বহু পরিচালকই মনে করেছেন, সংসদীয় কমিটি অনেকটা ‘সুপার সেন্সর বোর্ড’-এর কাজ করছে, যেটা মোটেই কাম্য নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE