Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আওরঙ্গজেবের পরে কোপ শাজাহানে

আওরঙ্গজেবের পরে শাজাহান। ছেলের নামে থাকা রাস্তার নাম পাল্টে ফেলার পরে এ বার দাবি উঠল, বাবার নামে থাকা রাস্তার নামও পরিবর্তন করা হোক। এই দাবি তুলেছেন দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র অশ্বিনী উপাধ্যায়।

‘দ্য মাউন্টেন ম্যান’ সিনেমার পোস্টার। (ডান দিকে) শাহজহান রোড।

‘দ্য মাউন্টেন ম্যান’ সিনেমার পোস্টার। (ডান দিকে) শাহজহান রোড।

নিজস্ব সংবাদাদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

আওরঙ্গজেবের পরে শাজাহান। ছেলের নামে থাকা রাস্তার নাম পাল্টে ফেলার পরে এ বার দাবি উঠল, বাবার নামে থাকা রাস্তার নামও পরিবর্তন করা হোক।

এই দাবি তুলেছেন দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র অশ্বিনী উপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেছেন, শাজাহানের পরিবর্তে ওই রাস্তার নাম রাখা হোক বিহারের ‘মাউন্টেন ম্যান’ দশরথ মাঁঝির নামে। উপাধ্যায়ের যুক্তি, শাজাহান নন, মাঁঝিই হলেন প্রকৃত ভালবাসার প্রতীক। তরুণদের অনুপ্রেরণা। নাম পরিবর্তনের পিছনে উপাধ্যায় এই যুক্তি দিলেও, বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, গোটাটাই রাজনৈতিক গিমিক। সামনেই বিহার ভোট। সে কথা মাথায় রেখে বিহারের দলিত শ্রেণির ভোটব্যাঙ্কের অনুগ্রহ পেতেই পরিকল্পিত ভাবে এই পদক্ষেপ করেছে বিজেপি শিবির।

গত মাসেই আওরঙ্গজেব রোডের নাম পাল্টে করা হয়েছে এপিজে আব্দুল কালাম রোড। ইতিমধ্যে বেশ কিছু শিবিরের পক্ষ থেকে ফের ওই রাস্তার নাম আওরঙ্গজেবের নামে রাখার জন্য তদ্বিরও করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক মেটার আগেই রাজধানীর রাস্তার নাম নিয়ে নতুন বিতর্ক।

কী কারণে নাম পরিবর্তনের দাবি?

বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, সকলে শাজাহানকে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে মনে করেন। আসলে তিনি হলেন বাসনার প্রতীক। কিন্তু মাঁঝি হলেন সত্যিকারের ভালবাসার প্রতিচ্ছবি। সংকল্প, ত্যাগ ও নিষ্ঠার প্রতীক। তাঁর আরও যুক্তি, ‘‘শাজাহান রোডেই রয়েছে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)-র সদর দফতর। লক্ষ লক্ষ যুবক পরীক্ষা সূত্রে সেখানে যান। আর মাঁঝি এ দেশের তরুণদের কাছে প্রেরণাস্বরূপ। কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে কী ভাবে লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়, তা দশরথ মাঁঝির জীবন থেকে শেখা যায়।’’ বিজেপির দাবি, শাজাহান তাঁর একাধিক স্ত্রীর মধ্যে অন্যতমা, মুমতাজের স্মৃতিতে তাজমহল বানিয়েছিলেন। উল্টো দিকে, দশরথ ছিলেন একা। তাঁর পাশে কোনও সরকারি সাহায্য ছিল না। তা সত্ত্বেও স্ত্রীর স্মৃতিতে পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর কঠিন কাজ থেকে তিনি সরে আসেননি। অর্থের অভাব, পারিবারিক সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রেখে একা হাতে ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে পাহাড় ভেঙেছিলেন তিনি। দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় থাকলে যে লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব হয়, তার এক উদাহরণ দশরথ মাঁঝি। তাই তরুণদের মধ্যে সেই আত্মপ্রত্যয়ের বার্তা দিতেই শাজাহান রোডের নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে বিজেপি শিবির। বিজেপির এই মতকে সমর্থন করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। আরও এক ধাপ এগিয়ে তাদের দাবি, ‘‘যে ভাবে ব্রিটিশ শাসকদের নামাঙ্কিত রাস্তা পাল্টে ফেলা হয়েছে, ঠিক সে রকম মোগল সম্রাটদের নামে রাখা রাস্তারও অন্য নাম দিতে হবে।’’

বিজেপি-ভিএইচপি-র এই দাবি অত্যন্ত হাস্যকর বলে আজ মন্তব্য করেছেন জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজের অধ্যাপক আদিত্য মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘‘এটা কিছু অর্ধশিক্ষিত লোকের নিম্নমানের রাজনীতি। গত হাজার বছর ধরে ভারতে বিভিন্ন ধর্মের লোক একসঙ্গে বসবাস করছে। কিন্তু এখন সেই ঐক্যে পরিকল্পিত ভাবে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা চলছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ভারতে কি রাস্তার অভাব রয়েছে? নামকরণের চেয়ে বরং ক্ষুধা, দারিদ্র, কৃষক আত্মহত্যার মতো বিষয়গুলি নিয়ে বিজেপির চিন্তা করা উচিত!’’

বিষয়টির মধ্যে স্রেফ রাজনীতি দেখছে বিরোধী শিবির। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিহার নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। ওই রাজ্যের দলিত সম্প্রদায়ের ভোট পেতেই এখন এই দাবি তুলছে বিজেপি। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝিকে দিয়ে হচ্ছে না দেখে এ বার দশরথ মাঁঝির সাহায্য নিতে চাইছে বিজেপি শিবির। কংগ্রেসের মুখপাত্র অজয় মাকেনের কথায়, ‘‘বিহারবাসী যথেষ্ট বুদ্ধিমান। এই সব লোক-দেখানো প্রচারে দলিত ভোট বিজেপির ঝুলিতে আসবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE