Advertisement
০২ মে ২০২৪

চাকরি কই? মন্ত্রী বললেন হচ্ছে নিশ্চয়ই

রীতি-রেওয়াজ জলাঞ্জলি দিয়ে তার প্রায় সবই বলেছেন ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। শুধু কার্যত চুপ থেকে গিয়েছেন একটি বিষয়েই। চাকরি!

পীযূষ গয়াল কার্যত চুপ থেকে গিয়েছেন একটি বিষয়েই। চাকরি! ছবি: পিটিআই।

পীযূষ গয়াল কার্যত চুপ থেকে গিয়েছেন একটি বিষয়েই। চাকরি! ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৬
Share: Save:

অন্তর্বর্তী বাজেটে যা-যা বলার কথা ছিল না, রীতি-রেওয়াজ জলাঞ্জলি দিয়ে তার প্রায় সবই বলেছেন ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। শুধু কার্যত চুপ থেকে গিয়েছেন একটি বিষয়েই। চাকরি!

মোদী জমানার বিভিন্ন কৃতিত্বের কথা শুক্রবারের বাজেট বক্তৃতায় ফলাও করে দাবি করেছেন। কিন্তু ভুলেও চাকরি বা কাজের সুযোগ তৈরি সম্পর্কে পোক্ত কোনও পরিসংখ্যান তুলে আনার চেষ্টা করেননি। কখনও বলেছেন, কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) খাতায় দু’বছরে নতুন নাম উঠেছে দু’কোটি। কিন্তু তার মানে কি দু’কোটি চাকরি? সেই কথায় মন্ত্রী আর ঢোকেননি।

কখনও আবার সংসদে দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন, কাজের সংজ্ঞা বদলে যাচ্ছে সারা বিশ্বে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতেও অনেক চাকরিপ্রার্থী নাকি এখন ‘চাকরিদাতা’! বিরোধীদের কটাক্ষ, যে দেশে সাফাইকর্মী কিংবা করণিকের শূন্য পদের বিজ্ঞাপন বেরোলেও হাজার-হাজার পিএইচডি ডিগ্রিধারী, ইঞ্জিনিয়ারের আবেদন জমা পড়ে, সেখানে অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্য রসিকতা নয় কি?

আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী বাজেটেও ১২ বছরের স্বপ্ন ফেরি গয়ালের

বিরোধীরা বলছেন, আসলে দীর্ঘদিন চাপা দিয়ে রাখা কাজের বাজারের বেহাল দশার রিপোর্ট ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে আরও চাপে পড়ে দিয়েছে সরকার। ২০১৭-’১৮ সালে কাজের বাজারের হাল নিয়ে এনএসএসও-র সমীক্ষায় সিলমোহর দেওয়ার পরেও তা প্রকাশ না-করার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশন ছেড়েছেন দুই সদস্য। তার পরে সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, নোটবন্দির পরে দেশে বেকারত্বের হার সাড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ (৬.১%)। এই তথ্য ‘প্রামাণ্য নয়’ বলে কেন্দ্র এবং নীতি আয়োগ আসরে নামলেও, তা নিয়ে নাগাড়ে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন বিরোধীরা। আর সেই আক্রমণের ঝড়ের মুখে নড়বড়ে দেখাচ্ছে কেন্দ্রকে।

বৃহস্পতিবার এ প্রসঙ্গে নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার ও কমিশনের সদস্য অমিতাভ কান্ত বলেছিলেন, দেশে বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের উপরে, অথচ চাকরি হচ্ছে না! তা আবার হয় নাকি? এ দিন সেই সুর উঠে এল মন্ত্রীর গলাতেও। পীযূষও বাজেট বক্তৃতায় বার বার বলছিলেন, বৃদ্ধির হারের নিরিখে ভারত বিশ্বে দ্রুততম। সেখানে কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না, এ কথা মানা সম্ভব কি? একই যুক্তি পরিকাঠামোর ক্ষেত্রেও। দাবি, পরিকাঠামো যখন এমন বিদ্যুৎ গতিতে বাড়ছে, চাকরি তখন হচ্ছে নিশ্চয়ই। রাতে নিউ ইয়র্ক থেকে একই যুক্তি দিলেন অরুণ জেটলিও।

জেটলির দাবি, কর্মসংস্থান যদি না-ই হত, তা হলে দেশ জুড়ে সামাজিক অশান্তি তৈরি হত। জেটলির মতে, মোদী জমানায় কর্মসংস্থানের প্রশ্নে অশান্তির প্রকোপ ঘটেনি। তা হলে কর্মসংস্থান নিয়ে সরকারি পরিসংখ্যান চেপে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে কেন? জেটলির এ বার দাবি, েয রিপোর্টটি চেপে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেটি নাকি আদতে কোনও রিপোর্টই নয়! রিপোর্টের খসড়া মাত্র, যা প্রামাণ্য নয়। বরং পীযূষের থেকে একধাপ এগিয়ে গিয়ে জেটলির যুক্তি, বৃদ্ধির হারের কথা যদি বাদও দেওয়া হয়, যেটা বাদ পড়বে না, সেটা জমা পড়া করের পরিমাণ। জেটলির মতে, দেশে কাজ না থাকলে আদায় হওয়ার করের পরিমাণ বাড়ত না।

অর্থাৎ সরাসরি কর্মসংস্থানের নজির দেখাতে পারছেন না কেউই। এটা হলে ওটা হবে গোছের যুক্তিই তাঁদের ভরসা। সাদা চোখে যে চাকরি চোখে পড়ছে না, তা বিলক্ষণ জানে কেন্দ্র। সেই কারণেই কাজের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতির বড় অংশকে ২০৩০ সালের জন্য পিছিয়ে দিয়েছেন পীযূষ। মন্ত্রীর দাবি, সেই সময়ে গ্রামে ছোট শিল্প হবে। ডিজিটাল হবে গ্রাম। বিপুল কাজের সুযোগ নাকি তৈরি হবে। একই ছবির প্রতিশ্রুতি সেই সময়ের স্টার্ট-আপ, ছোট-মাঝারি শিল্পেও। বিরোধীদের কটাক্ষ, অন্তর্বর্তী বাজেটে ২০৩০ পর্যন্ত স্বপ্ন ফেরি করলেন মোদীর অর্থমন্ত্রী। অথচ চাকরি নিয়ে তিনি চুপ! চিদম্বরমের কথায়, ‘‘দু’টি শব্দ বাজেটে নেই। শিক্ষা ও চাকরি।’’ কমবয়সিদের ভোট টানার উপরে বাড়তি গুরুত্ব দেন মোদী। কিন্তু চাকরি নিয়ে এই প্রতারণার জবাব তাঁরাই ভোটযন্ত্রে দেবেন বলে বিরোধীদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Piyush Goyal Budget 2019 Union Budget Employment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE