আরও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি। প্রশাসনের অন্দরমহল থেকে দুর্নীতির অবসান। এই দুই মিলিয়ে বিনিয়োগের আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা। আগামী বাজেট যে সেই দিশাতেই এগোবে, আজ তার ইঙ্গিত মিলল।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ঘোষণা, শিল্পের জন্য কাঁচামাল জোগাড় করতে কোনও শিল্পপতি বা বিনিয়োগকারীকে আর মন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারস্থ হতে হবে না। যে ভাবে নিলামের মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে কয়লা খনি বন্টনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অন্যান্য খনিজের ক্ষেত্রেও একই নীতি নেওয়া হবে। সংস্কারের পথে হেঁটে মোদী সরকার লোকসানে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণের কথা ভাববে বলেও জেটলি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে শিল্পপতিদের অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ জমি অধিগ্রহণ আইনেও রদবদল করা হবে বলে জেটলি জানিয়েছেন।
আজ মুম্বইয়ের শেয়ার বাজারের সূচক ২৮ হাজারের সীমানা ছাড়িয়ে রেকর্ড করেছে। অর্থ মন্ত্রকে বাজেটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শিল্পমহল মনে করছে, অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে বড় মাপের সংস্কারের চেষ্টার পাশাপাশি ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের রাস্তা আরও মসৃণ করতে হবে। শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা বলেন, “সংস্কারের ফল টের পেতে সময় লাগবে। কিন্তু শুধু একটা বা দু’টো বড় মাপের সংস্কার না করে লাগাতার সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।” বণিকসভা সিআইআই-এর সভাপতি অজয় শ্রীরামের যুক্তি, ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কতখানি সহজ, সেটা এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে মোদী সরকার এই বিষয়টিতে যথেষ্ট নজর দিয়েছেন বলেই শ্রীরামের মত।
দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া ইকনমিক সামিট’-এ আজ জেটলিও জানিয়েছেন, তিনিও একটা-দু’টো চোখ ধাঁধানো সংস্কারের বদলে ছোট ছোট পা ফেলে এগোতে চান। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, মনমোহন সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ বন্টনে কোনও স্বচ্ছতা ছিল না। কয়লা খনি বন্টনে নতুন নীতির ফলে ইচ্ছে মতো কোনও বেসরকারি সংস্থাকে কয়লা খনি পাইয়ে দেওয়ার যে ক্ষমতা রাজ্য সরকারের কাছে ছিল, তা চলে গিয়েছে। এই ধরনের ক্ষমতা চলে গেলে দুর্নীতির সম্ভাবনাও চলে যায়। বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চান। সেই কারণেই কয়লার মতো অন্যান্য খনিজ বণ্টনের ক্ষেত্রেও একই রকম স্বচ্ছ নীতি নেওয়া হবে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক গীতা গোপীনাথ মনে করছেন, মোদী সরকার এখনও পর্যন্ত যে সব ব্যবস্থা নিয়েছে, তা যথেষ্ট উৎসাহবর্ধক। কিন্তু অর্থনীতির হাল যে শোধরাচ্ছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে অনেকটা সময় ধরে বৃদ্ধির হার এক টানা বেশি হারে থাকা দরকার। তাঁর বক্তব্য, “সরকার সংস্কারের প্রক্রিয়া চালিয়ে গেলে ভারতকে ঘিরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেখা দেবে। সে ক্ষেত্রে শ্রম আইন এবং জমি অধিগ্রহণ আইনের সংস্কার জরুরি।”
মনমোহন সরকারের আমলে তৈরি নতুন জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইন নিয়ে শিল্পমহলে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের যুক্তি, ওই আইনে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া এতই জটিল করা হয়েছে যে নতুন কারখানা তৈরিতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে। জেটলি জানিয়েছেন, কেন্দ্র এই যুক্তির সঙ্গে একমত। তাঁর বক্তব্য, নতুন আইনের আগে জমির মালিকরা যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ পেতেন না।
তাই ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের যে বন্দোবস্ত হয়েছে, সেখানে কোনও বদল হবে না। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া কী ভাবে আরও সরল করা যায়, তার জন্য আইনের রদবদল খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy