দিল্লিতে কাশ্মীর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক। ছবি: পিটিআই।
কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্বিমুখী কৌশলে ঘুঁটি সাজানো শুরু করল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
কাশ্মীরি যুবকদের মূলস্রোতে ফেরাতে চাকরির সুযোগ, আফস্পা প্রত্যাহারের ভাবনা কিংবা ছররা বন্দুকের ব্যবহার বন্ধ করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। সরকারের মতে, এই সব ইতিবাচক পদক্ষেপে মানুষের আস্থা অর্জন করা যেতে পারে। অন্য দিকে কাশ্মীরে অশান্তির মূল মস্তিষ্ক হুরিয়ত নেতৃত্বের থেকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিয়ে তাঁদের একঘরে করার চেষ্টা করছে মোদী সরকার।
কাশ্মীর সফর শেষে আজ দিল্লিতে বৈঠকে বসেছিলেন সবর্দলীয় প্রতিনিধিরা। সেখানে দলনির্বিশেষে কাশ্মীরে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালানোর পক্ষে সওয়াল করা হয়। কিন্তু জাতীয় সংহতি ও সুরক্ষার প্রশ্নে কোনও আপস না করতে কেন্দ্রকে সব রকমের পদক্ষেপ করার ছাড়পত্র দিয়েছেন নেতারা। এই প্রশ্নে কংগ্রেসকেও পাশে পেয়েছে সরকার।
সব দল এককাট্টা হওয়ায় তাঁরা যে প্যাঁচে পড়ে গিয়েছেন, তা বুঝতে পেরেই প্রতিবাদে সরব হয়েছে হুরিয়ত। সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করায় মোদী সরকার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে হুরিয়ত আদৌ শান্তির পক্ষে নয়। কাশ্মীর নিয়ে তাঁরা যতই আওয়াজ তুলুন না কেন, বিশ্বের সামনে এই কথাটা নয়াদিল্লি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে— সেটা এখন বুঝছেন হুরিয়ত নেতারা। কেন্দ্রের সেই আক্রমণ ভোঁতা করতে আজ তাই বিবৃতি দিয়ে হুরিয়ত শিবির জানিয়েছে, ‘‘নিজেদের ক্ষতি স্বীকার করে কাশ্মীরের মানুষ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মুখোশ খুলে দিচ্ছে। আর নয়াদিল্লি চাইছে দেশের মানুষকে বোকা বানাতে। হুরিয়তের দিকে আঙুল তুলে কাশ্মীরের আসল সমস্যা থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতে চাইছে।’’
হুরিয়ত এই দাবি করলেও, সীতারাম ইয়েচুরি-শরদ যাদবদের যে ভাবে সৈয়দ আলি শাহ গিলানির দরজা থেকে ফিরে আসতে হয়েছে— তা সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের কোনও সদস্যই ভাল ভাবে নেননি। তা স্পষ্ট হয়ে যায় দিল্লির বৈঠকে। কংগ্রেস-সহ প্রায় সব বিরোধী দলই কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে আলোচনার পাশাপাশি দরকারে হুরিয়তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য সুপারিশ করেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, হুরিয়ত নেতাদের সরকারি যে সাহায্য করা হয়, তা বন্ধ করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। বর্তমানে গৃহবন্দী থাকলেও চিকিৎসা, অর্থ, বিদেশ ভ্রমণ বা নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলিতে হুরিয়ত নেতাদের সরকারি সাহায্য দেয় নয়াদিল্লি। কিছু ক্ষেত্রে তা কমিয়ে দেওয়া আবার কোনও ক্ষেত্রে এ সব একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ আহির এ কথা জানান। হুরিয়তের মনোভাবে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জ্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘যাঁরা আলোচনায় আগ্রহী তাঁদের সঙ্গে কথা চালাক সরকার।’’
পাশাপাশি, সব দলের প্রতিনিধিরা পাঁচটি বিষয়ে পদক্ষেপ করতে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। এক, ছররা বন্দুকের ব্যবহার বন্ধ করা। কেননা, এ নিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিকল্প হিসেবে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পাভা শেল ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। দুই, ছররা বন্দুকের কারণে যাদের চোখ নষ্ট হয়েছে বা শরীরে অন্য ক্ষতি হয়েছে, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দেওয়া হোক। তিন, স্থানীয় মানুষদের উপর অত্যাচার করা নিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, তা হলে তার তদন্ত করতে হবে। চার, জনবসতি রয়েছে এমন জায়গায় সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা বা আফস্পা প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। পাঁচ, প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও স্থানীয় যুবকদের রোজগারের সুযোগ করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তাই দ্রুত কাশ্মীরি যুবকদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। সব দলের নেতাদের এই যৌথ দাবি খতিয়ে দেখার ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মোদী সরকার।
এরই মধ্যে অবশ্য বিরোধিতায় সরব হয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারছি না যে প্রতিনিধি দলের সফরে অন্তত কোনও একটি বিষয়েও
লাভ হয়েছে। প্রতিনিধি দল কেবল একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে ফিরে গিয়েছে। কিন্তু কাশ্মীর সমস্যা একই রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy