Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বৈঠক এড়াল বেজিং, যৌথ সেনা মহড়াও

দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ফের শুরু হয়েছিল ভারত-চিন সামরিক প্রশিক্ষণের যৌথ মহড়া ‘হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড’।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০৪:০৪
Share: Save:

দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ফের শুরু হয়েছিল ভারত-চিন সামরিক প্রশিক্ষণের যৌথ মহড়া ‘হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড’। কিন্তু বেজিং-এর সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় চলতি বছরের যৌথ মহড়া পিছিয়ে গেল অনির্দিষ্টকালের জন্য। সূত্রের খবর, এই মাসে মহড়া শুরুর আগে দু’দেশের মধ্যে প্রাথমিক পরিকল্পনার জন্য বৈঠকে বসার কথা ছিল। চিন আপাতত তাতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে। নয়াদিল্লিতে ভারত, রাশিয়া ও চিনের মধ্যে বার্ষিক বিদেশমন্ত্রীদের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল এই মে মাসেই। তা-ও বয়কট করেছে বেজিং।

দু’দিন পরেই বেজিংয়ে শুরু হচ্ছে ২৮টি দেশকে নিয়ে মেগা প্রকল্প ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর)’-এর প্রথম সম্মেলন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভিতর দিয়ে এর রাস্তা যাবে বলে ভারত এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে প্রথম থেকেই। সেই আপত্তি উড়য়ে বেজিং এতগুলি দেশকে কাছে টানতে সক্ষম হওয়ায় যথেষ্ট চাপে ভারত। চিন্তা বাড়িয়েছে প্রতিবেশী নেপাল। মাঝে কাঠমান্ডু-নয়াদিল্লি সম্পর্কে খানিকটা তিক্ততা ও অবিশ্বাস তৈরি হলেও ফের পুরনো সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই সমীকরণও বিগড়ে দিয়েছে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘ওবিওআর’। এশিয়া ও ইউরোপকে জোড়ার ওই মহাসড়ক প্রকল্পে আজ যুক্ত হল নেপালও। এ বিষয়ে আজ চিনের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে তারা। নেপাল চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোয় সীমান্তে নিরাপত্তা সমীকরণ নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে ভারতকে।

এই মুহূর্তে বেজিংয়ে রয়েছেন বিজেপির সুধীন্দ্র কুলকার্নি। একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের পক্ষ থেকে তিনি চিনে গিয়েছেন। সূত্রের খবর, সরকারি ভাবে ওই সম্মেলন কার্যত বয়কট করলেও, পরিস্থিতি বিচার করে চিনের সঙ্গে কুলকার্নিকে দিয়ে ‘ট্র্যাক টু’ কূটনীতির দরজা খোলা রাখতে চাইছে মোদী সরকার।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামার অরুণাচল প্রদেশ সফর নিয়ে ঢাকঢোল পেটানোর মাধ্যমেই বেজিং-এর বিরুদ্ধে সুর এক ধাপে অনেকটাই চড়িয়ে দিয়েছিল মোদী সরকার। চিনও তার পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে পাল্টা তোপ দেগে চলেছে।

যে সময় নয়াদিল্লিতে রাশিয়া চিন ও ভারতে বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, ঘটনাচক্রে ঠিক এই সময়েই ওবিওআর-এর ফিতে কাটা হচ্ছে। যেখানে দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা, রাশিয়া, স্পেন-সহ ২৮টি দেশ তাদের প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে। ভারতকে যোগ দিতে অনুরোধ করা হলেও, নয়াদিল্লি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এই ধরনের উদ্যোগের। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ওই প্রকল্পের অন্তর্গত ৩ হাজার কিলোমিটার লম্বা চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের কথা ঘোষণা করার আগে এক বারও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।

তবে সাউথ ব্লক এটা ভাল করেই জানে যে, ওই করিডরে চিন বিনা কারণে ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে না। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যের পাশাপাশি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি তৈরি করাটাও চিনের অন্যতম লক্ষ্য। সূত্রের খবর, সুধীন্দ্র কুলকার্নি রবিবার চিনের ওই সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন। গত এক সপ্তাহ ধরেই চিনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন তিনি। ওবিওআর সম্মেলনে কোন দেশ কতটা উৎসাহ নিয়ে যোগ দিচ্ছে সে দিকেও নজর রাখবেন তিনি। যাবেন বেজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাসের কয়েক জন প্রতিনিধিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

China India Hand in Hand Joint Military Trials
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE