Advertisement
০৬ মে ২০২৪
National News

হঠাৎ বন্ধুত্বের বার্তা, করিডরের নাম বদলাতেও রাজি চিন

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রবল টানাপড়েনের মধ্যে হঠাৎ ভারতকে বন্ধুত্বের বার্তা চিনের। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের জন্য চিন এবং ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক খুব জরুরি, বললেন চিনা দূত লুও ঝাওহুই। চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরেও (সিপিইসি) ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন চিনা দূত।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৭ ১৯:০০
Share: Save:

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রবল টানাপড়েনের মধ্যে হঠাৎ ভারতকে বন্ধুত্বের বার্তা চিনের। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের জন্য চিন এবং ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক খুব জরুরি, বললেন চিনা দূত লুও ঝাওহুই। চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরেও (সিপিইসি) ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন চিনা দূত। প্রয়োজন হলে ভারতের জন্য ওই করিডরের নামও বদলাতে প্রস্তুত বেজিং, জানিয়েছেন ঝাওহুই। দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত যে সমস্যা রয়েছে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে সে সমস্যাও দ্রুত মিটিয়ে ফেলা দরকার, মন্তব্য চিনা দূতের।

শুক্রবার একটি রুদ্ধদ্বার আলোচনা সভায় চিনা দূত লুও ঝাওহুই ভারত-চিন সম্পর্কের উন্নতির জন্য চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন। ওই রুদ্ধদ্বার আলোচনাসভায় কী কথা হয়েছে, তা সংবাদমাধ্যম শুরুতে জানতে পারেনি। কিন্তু লুও ঝাওহুই-এর সে দিনের ভাষণটিকে রবিবার ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করেছে চিনা দূতাবাস।

চার দফা প্রস্তাব:

‘‘প্রথমত, ভাল প্রতিবেশী হয়ে ওঠা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার লক্ষ্যে চিন-ভারত চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু হোক। দ্বিতীয়ত, চিন-ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য ফের কথাবার্তা শুরু হোক। তৃতীয়ত, সীমান্ত সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা হোক। চতুর্থত, গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা হোক, চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবিওআর) উদ্যোগ এবং ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিকে মিলিয়ে দেওয়া যায় কি না।’’

এতেই থামেনি চিন। ভারত-পাক সম্পর্ক সহযোগিতাপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতেও যে চিন প্রস্তুত, সে কথাও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। চিনা দূতের কথায়, দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্যা মেটা খুব জরুরি। দরকার পড়লে চিন মধ্যস্থতা করতে রাজি, বলে তিনি মন্তব্য করেন। কিন্তু ভারত-পাক সমস্যার অন্যতম মূল কারণ যে কাশ্মীর, সেই কাশ্মীরের বিষয়ে ভারত যে অন্য কোনও পক্ষের হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না, তা-ও চিনা দূত মাথায় রেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তান দু’পক্ষই যদি রাজি থাকে, তা হলেই চিন বিষয়টির মধ্যে ঢুকবে। না হলে এ বিষয়ে বেজিং হস্তক্ষেপ করবে না।

অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে বেজিং-এর সাম্প্রতিক অবস্থান মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি। তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধও চলেছে বিস্তর। কিন্তু চিন সে সব ভুলে হঠাৎ ভারতকে বন্ধুত্বের বার্তা দিল। —ফাইল চিত্র।

গোটা জম্মু-কাশ্মীরই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ— এ কথা একাধিক বার জানিয়েছে নয়াদিল্লি। পাক-অধিকৃত কাশ্মীর যে আসলে ভারতেরই, সে কথাও নয়াদিল্লি বহু বার জোর দিয়ে বলেছে। কিন্তু চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর ওই পাক-অধিকৃত কাশ্মীর হয়েই গিয়েছে এবং ভারত ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে নিজের আপত্তি জানিয়ে রেখেছে। চিনা দূত সে প্রসঙ্গেও ভারতের মন রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে যে চিন স্বীকৃতি দিয়ে দেয়নি, সে ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট করেই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লুও ঝাওহুই। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সার্বভৌমত্ব নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, চিন তাতে নিজেকে জড়াতে চায় না বলে চিনা দূতের মন্তব্য। তাঁর কথায়, ‘‘সিপিইসি-র নাম বদলে দেওয়ার বিষয়েও আমরা ভাবতে পারি। সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যে সব বিতর্ক রয়েছে, সেগুলিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চিন এবং ভারত আগেও সফল হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: পাক বাঙ্কার উড়িয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে ভারতীয় সেনা, ভিডিও ভাইরাল

ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক সাম্প্রতিক কালে মোটেই খুব মধুর নয়। এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি চিন বার বার আটকে দিচ্ছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার চেষ্টাও ভেস্তে দিচ্ছে চিন। তার মধ্যেই তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামাকে অরুণাচল সফরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল ভারত। চিন এর তীব্র বিরোধিতা করে। ভারত তা মানেনি এবং দলাই লামা সসম্মানেই অরুণাচল সফর করেন। তিব্বতি ধর্মগুরুকে ষড়যন্ত্রী আখ্যা দিয়ে চিন জানিয়ে দেয়, ভারতকে এর ফল ভুগতে হবে। ভারতও চিনকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা নয়াদিল্লি বরদাস্ত করবে না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যখন এমন তুমুল টানাপড়েন, ঠিক তখনই চিনা দূতাবাস যে ভাবে ভারতকে এক গুচ্ছ বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিল, তাতে কূটনীতিকদের অনেকেই বেশ বিস্মিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India-China CPEC International Relations
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE