অতীত ও ভবিষ্যৎ। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বাসভবনে সর্বানন্দ সোনোয়াল। রবিবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।
অসমবাসী যেমন দু’হাত ভরে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, ঠিক তেমন ভাবেই এ বার থেকে জনপ্রতিনিধিদের প্রতিটি পদক্ষেপে নজরও রাখবেন আম জনতা— এমনই মন্তব্য করলেন সর্বানন্দ সোনোয়াল। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, অসমের পরবর্তী মন্ত্রিসভায় ১০ জন সদস্য থাকবেন। তাতে বিপিএফ ও অগপ-র ২ জন করে মন্ত্রী থাকবেন।
আজ নবনির্বাচিত দলীয় বিধায়কদের বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আত্মতুষ্টি নয়, মানুষের জন্য ফাঁকি না দিয়ে কাজ করে যাওয়াই আপনাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত।’’ আজই বিধায়ক দলের নেতা নির্বাচিত হন সর্বা।
অসম জয়ের পরে দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক সেরে এ দিন সকালে গুয়াহাটি ফেরেন সর্বানন্দ ও হিমন্তবিশ্ব শর্মা। পরে বিজেপির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে যোগ দেন। এ বারের ভোটযুদ্ধে সর্বানন্দের প্রধান সেনাপতি হিমন্ত দলের নেতা হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করেন। আঙুরলতা ডেকা, অমরচাঁদ জৈন-সহ বিধায়করা তা সমর্থন করেন। উপস্থিত ছিলেন অসমের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাবরচাঁদ গেহলোট ও সহ-সভাপতি ওমপ্রকাশ মাথুর। এ দিনই কয়নাধারায় বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বাসভবনে যান সর্বানন্দ। গগৈকে রাজ্য মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর সর্বা বলেন, ‘‘আপনারা আমাকে নেতা নির্বাচিত করলেন বটে, কিন্তু এ এক আনুষ্ঠানিকতামাত্র। আমি আপনাদেরই এক জন। আমি নেতার মতো আচরণ করব না।’’ তিনি জানান, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে জানিয়েছেন— ‘অসমের সব প্রান্তের মানুষ বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছে। সেই ভালবাসার মান রাখতে হবে, দাম দিতে হবে। নিজেদের দোষে যেন এই জনসমর্থন হারাতে না হয়।’ পরোক্ষে তিনি এ-ও শুনিয়ে দেন, কংগ্রেস নেতারা যে অহংবোধের ফলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন, বিজেপি বিধায়করা যেন সেই পথে না এগোন। সর্বানন্দ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি সব সময় আমাদের সঙ্গে আছেন ও থাকবেন। আমরা যেন কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে অসমের সেবা করে যাই। মনে রাখবেন এখন থেকে আমাদের সব কাজ ও সিদ্ধান্ত মানুষ নজর রাখবে। আমাদের সব পদক্ষেপের হিসেব দিতে আমরা বাধ্য থাকব। কংগ্রেস অনেক দরকারি কাজ ফেলে গিয়েছে। সেই কাজ শেষ করা ও মানুষের মনে আমাদের প্রতি বিশ্বাস জিইয়ে রাখাই বড় ব্যাপার।’’ সর্বা জানান, দলের রাজ্যস্তরের প্রবীণ নেতা ও সাংসদরা যে ভাবে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে খেটেছেন তার তুলনা নেই। তাঁদের পরামর্শ মেনেই নতুন সরকার চলবে। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রাম মাধব, মহেন্দ্র সিংহদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের কাজ কিন্তু শেষ হয়নি। সবে শুরু হল।’’
এ দিন বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারি, সাংসদ বিশ্বজিৎ দৈমারি, রবিরাম ব্রহ্ম, চন্দন ব্রহ্ম বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। মন্ত্রিত্বের খসড়া তালিকা তৈরি করে অগপ নেতারাও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। সর্বানন্দ জানান, জোট শরিকদের মধ্যে এ বার এত ভাল বোঝাপড়া রয়েছে যে অসমের জন্য ভাল কাজ হবেই। অবশ্য সম্ভাব্য মন্ত্রিসভা প্রকাশ করা থেকে সংবাদমাধ্যমকে বিরত থাকতে বলে বিজেপি নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে কিছু সংবাদমাধ্যমে মন্ত্রীদের নাম এমনকী তাঁদের দফতরও প্রকাশিত হয়েছে। সব ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে বিজেপির তরফে বলা হয়, যথা সময়ে সঠিক নাম প্রকাশ করা হবে।
সরকারের প্রথম কাজ হিসেবে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, সীমান্ত পুরোপুরি সিল করা ও নাগরিকপঞ্জি উন্নীতকরণের কাজ দ্রুত শেষ করার উপরেই জোর দেন সর্বা। তিনি জানান, নির্বাচনের আগে কংগ্রেস অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ তুলেছিলেন। দাবি করেছিলেন, সরকার গড়লে তাঁরা অনুপ্রবেশ বন্ধ করবেন। তাই সীমান্ত পুরো বন্ধ করাই বিজেপির প্রথম কাজ হবে। সেই সঙ্গে নাগরিকপঞ্জির কাজ দ্রুত শেষ করার উপরেও জোর দেন তিনি।
এ দিন বিকেলে সর্বার নেতৃত্বে বিজেপি-অগপ-বিপিএফ প্রতিনিধিদল রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্যের সঙ্গে রাজভবনে দেখা করে সরকার গড়ার আর্জি জানান। তরুণ গগৈ পদত্যাগ করার পরই ত্রয়োদশ বিধানসভা ভেঙে দিয়েছেন রাজ্যপাল। এ দিন তিনি সরকারি ভাবে চতুর্দশ বিধানসভা তথা সরকার গঠনের জন্য বিজেপি জোটকে আহ্বান জানান। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— ২৪ মে খানাপাড়ার মাঠে বিকেল ৪টেয় শপথ নেবেন সর্বানন্দ। তার প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে মাঠে আসবেন বলে বিজেপি ও প্রশাসনের অনুমান।
এ দিকে, গগৈয়ের মতো কয়নাধারা পাহাড়ের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী আবাসে থাকবেন না বলে ঘোষণা করচেন সর্বানন্দ। তাঁর জন্য দিসপুরের মন্ত্রী আবাসেই উপযুক্ত ঘর খোঁজা চলছে। দিসপুর সূত্রে খবর, কংগ্রেসের মন্ত্রীরা গত কাল থেকেই সরকারি আবাস খালি করে দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এ দিনের মধ্যেই বেশির ভাগ প্রাক্তন মন্ত্রী-বিধায়কের ঘর খালি হয়ে যাবে। সেখানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নতুন মন্ত্রী-বিধায়কদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সম্ভবত প্রাক্তন মন্ত্রী ভূমিধর বর্মণের বাড়িতেই উঠবেন সর্বা, কারণ তার সামনে গাড়ি রাখার অনেকটা জায়গা রয়েছে।
সর্বানন্দ কয়নাধারায় না গেলেও, সরকারি নিয়মে ১৫ বছরের পছন্দের ঘর ছেড়ে এ বার তরুণ গগৈকেও দিসপুরের সাধারণ বিধায়ক আবাসে চলে আসতে হবে। একই সঙ্গে ঠিকানা বদল হবে তাঁর সাংসদ পুত্র গৌরব গগৈয়েরও। অবশ্য ক্ষমতা গেলেও, নির্বাচনের আগেই মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য স্বতন্ত্র সরকারি আবাস ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল। দলীয় সূত্রে খবর, দিসপুরের সরকারি আবাসের ছোট ফ্ল্যাট বা অসম ধাঁচের ছোট বাংলোয় না থেকে গগৈ অন্যত্রও নিজের মতো থাকতে পারেন। এ দিন গগৈ তাঁর গুয়াহাটির পুরনো ঠিকানা অজন্তা পথের হাউস নম্বর ৫৫-এ প্রায় ঘণ্টাখানেক কাটান। না হলে দিসপুরের ৫২ নম্বর ঘরটিও তাঁকে দেওয়া হতে পারে। বিরাট কনভয় নিয়ে ঘুরতে অভ্যস্ত গগৈ অবশ্য রাজ্যপালকে পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর থেকেই কনভয় ত্যাগ করেছেন। এ দিন তিনি সাধারণভাবেই ঘর দেখতে বেরিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy