গোলাপি বল নিয়ে শহর জুড়ে উন্মাদনার মধ্যেই ইডেনে পা রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। অথচ ‘পরম মিত্র’ বাংলাদেশের সেই প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর কোনও তাগিদই দেখাননি বিজেপির শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁদের এমন ‘ব্যবহারে’ সেইসময়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। নাগরিক সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে এ দেশে টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবদুল মোমেন বৃহস্পতিবার পূর্ব নির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করায়, দুই দেশের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, নাগরিক সংশোধনী বিলের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যে ভাবে পড়শি দেশে অমুসলিমদের উপর নিপীড়নের কথা বলে বেড়াচ্ছেন, তাতে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না তো?
রাজনৈতিকদের এই আশঙ্কা অবশ্য নতুন নয়। নির্বাচনী প্রচারের সময় বিজেপি নেতারা যখন জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করে দেশ থেকে সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর কথা বলছিলেন, সেইসময় বাংলাদেশের তরফেই প্রথম উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বছর মার্চে মোদীকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান তিনি। আর সেখানেই আলোচনার ফাঁকে মোদীর সামনে এনআরসি প্রসঙ্গ পেড়ে ফেলেন হাসিনা। এত সংখ্যক মানুষকে ফেরত পাঠালে কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সেইসময় তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন মোদী।
কিন্তু তার মধ্যেই ১ অক্টোবর বাংলার একটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশেই এনআরসি হবে। তার আগে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করাবে সরকার। তার আওতায় মতুয়া-সহ ধর্মীয় কারণে পড়শি দেশ থেকে নিপীড়িত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন এবং ক্রিস্টানদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ’’ তার ঠিক পরেই দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। সেখানে ফের একবার এনআরসি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। সেইসময় তাঁকে আশ্বস্ত করার বদলে মোদী জানান, শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কী ভাবে তা এগোয় দেখা যাক।