রাজনীতির তরজায় ধুয়ে গিয়েছে প্রায় পুরো বাদল অধিবেশনই। শেষ দিনেও পণ্য পরিষেবা করের (জিএসটি) মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ হওয়ার লক্ষণ নেই। সংস্কারের এই সলিল সমাধি ঠেকাতে এ বার মাঠে নামলেন খোদ শিল্পপতিরাই। তাঁদের আর্জি, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকুক। চলুক তর্ক-বিতর্ক। কিন্তু একই সঙ্গে চালু থাকুক সংসদও। যাতে পরপর বিল আটকে গিয়ে সংস্কার মুখ থুবড়ে না পড়ে। অন্তত পাশ হয় জিএসটি বিল। কারণ, শুধু তাতেই বৃদ্ধির হার ২% বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সংসদ চালুর আর্জি জানিয়ে অনলাইনে সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে বণিকসভা সিআইআই। তাতে সামিল আদি গোদরেজ, এস গোপালকৃষ্ণন, কিরণ মজুমদার শ, রাহুল বজাজ, সুমিত মজুমদারের মতো দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা। তাঁদের আবেদন, সংসদ চালান। দ্রুত সিদ্ধান্ত হোক জিএসটি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে। এর সমর্থনে ২০ হাজার সইও জমা পড়েছে ইতিমধ্যে।
অনেকে মনে করছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই শিল্পমহলের অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছিল। জমি বিল অন্ধকারে। এখনও আটকে জিএসটি। রাজনীতির লড়াইয়ে সংস্কারের কর্মসূচিই জলে যেতে বসেছে বলে উদ্বিগ্ন তাঁরা। আর সেই কারণেই এই মাঠে নামা।
কিন্তু শাসক দল ও বিরোধীদের এই রণংদেহি আবহে সেই আবেদনেও রং লাগছে রাজনীতির। অনেকে বলছেন,
সম্প্রতি সংসদ চালাতে এ ভাবে কখনও সক্রিয় হননি শিল্পপতিরা। তাই এই উদ্যোগকে মোদী সরকারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়ছে শিল্পমহল। কথা-পাল্টা কথার লড়াই বেঁধেছে এ নিয়েও।
কংগ্রেসের প্রশ্ন, বিজেপি যখন ইউপিএ জমানায় একের পর এক অধিবেশন অচল করেছিল, তখন এই শিল্পপতিরা ছিলেন কোথায়? জেডি(ইউ)-র শরদ যাদবের প্রশ্ন, ‘‘কর্পোরেট দুনিয়া কী ভাবে নাক গলাতে পারে সংসদের কাজে?’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘স্বাধীনতার পরে ৬৮ বছরে এই প্রথম পুঁজিবাদীরা বলছেন সংসদ চালাতে হবে। মোদী সরকার যে কর্পোরেটের সাহায্যে ক্ষমতায় এসেছে, তা প্রমাণিত।’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘শিল্পপতিরা প্রধানমন্ত্রীকে গিয়ে অভিযুক্ত মন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে বলছেন না কেন?’’
জবাবে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির যুক্তি, সংসদ চলার সঙ্গে সমাজের সব অংশের স্বার্থ জড়িত। তাই সংসদের বাইরের কেউ এ নিয়ে কথা বলবেন না, এই ভাবনা খারিজ করা দরকার। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা ভোট দিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন, তাঁরা কি চান না যে সংসদ চলুক?’’
শিল্পমহল এবং বণিকসভাগুলির দাবি, এই সক্রিয়তায় কোথাও রাজনীতির ছোঁয়া নেই। বরং দেশের অর্থনীতির স্বার্থই মাঠে নামতে বাধ্য করেছে তাঁদের।
শিল্পপতিদের মতে, আজ বহু দিন জিএসটি চালুর অপেক্ষায় তীর্থের কাকের মতো বসে আছেন তাঁরা। বিশেষত ছোট ও মাঝারি শিল্প। কারণ, ওই কর চালু হলে, ব্যবসার ঝক্কি কমবে। আলগা হবে লাল ফিতের ফাঁস। তৈরি হবে লগ্নি সহায়ক পরিবেশও। টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতির মাঝে বিদেশি বিনিয়োগের আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠবে ভারত। এ হেন জিএসটি-র পক্ষে ঐকমত্য তৈরি করতেই বহু সময় কেটে গিয়েছে। এখন তা হওয়ার পরে আবার সেটি আটকে রয়েছে রাজনীতির লড়াইয়ে। সেই কারণেই উদ্বিগ্ন হয়ে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে জোর দিচ্ছেন জমি বিল, বিদ্যুৎ আইন সংশোধন, শ্রম আইন সংস্কারের মতো বিষয়গুলির উপর।
সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিল্পমহল চায়, সংসদে কাজ হোক। তার প্রভাব সাধারণ মানুষের উপরও গিয়ে পড়ে।’’
এই প্রচেষ্টায় শেষমেশ লাভ কতটুকু হবে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। আলোচনা হলেও বুধবার ললিত মোদী বিতর্কে গরম থেকেছে সংসদ। বৃহস্পতিবারই অধিবেশনের শেষ দিন। কংগ্রেস সেখানে জিএসটি পাশ করাতে সাহায্য করবে, এখনও তেমন ইঙ্গিত নেই। এরপর ওই লক্ষ্যে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, তা-ও অনেক দূরের প্রশ্ন। আবার তা না হলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে আগামী এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করা। সই সংগ্রহের অভিযানের পরেও সংস্কারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তাই আপাতত মিটছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy