(বাঁ দিকে) সনিয়া গান্ধী এবং (ডান দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
চলতি মাসের শেষভাগে ঐক্যের সন্ধানে পটনায় বৈঠকে বসার কথা বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির। তার আগে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে অতি দৃশ্যমান ‘অ্যালার্জি’ কিছুটা কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, উভয় পক্ষই, সাগরদিঘি বিধানসভার সাম্প্রতিক তিক্ততাকে (কংগ্রেসের বিধায়ক ‘ভাঙানোর’) আপাতত পিছনে রেখে মোদী সরকারকে হঠানোর লক্ষ্যে সমঝোতা এগিয়ে নিতে উদ্যোগী। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে খবর।
ওড়িশার রেল দুর্ঘটনাকে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ‘অন্তর্ঘাত’ হিসাবে আখ্যা দেওয়ার পর, গত রাতে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ লেখেন, ‘বিজেপিকে খুশি করে নিজের বাংলো ধরে রাখতে চেয়ে এক সাত মাসের রেলমন্ত্রী আষাঢ়ে গল্প ফেঁদেছেন।’ আজ সকালেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে সাকেত গোখলেকে দিয়ে জয়রামকে সমর্থন করে টুইট করানো হয়। সাকেত লেখেন, ‘জয়রাম যা বলেছেন ঠিক বলেছেন।’ সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতার নাম করে তাঁকে সমর্থন করার বিষয়টি আসন্ন বৈঠকের আগে তৃণমূলের দিকথেকে সদর্থক পদক্ষেপ। এক শীর্ষ পর্যায়ের তৃণমূল নেতার দাবি, “কংগ্রেসের তরফ থেকে কিছুটা উদার মনোভাব দেখা যাচ্ছে। এমন যদি চলতে থাকে, বিরোধী বৈঠকে ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাবে।” তাঁর এটাও দাবি, “ওড়িশার রেল দুর্ঘটনার পর কংগ্রেসের তরফ থেকে তৃণমূলকে পরিসর দেওয়া হচ্ছে সর্বাত্মক আক্রমণের নেতৃত্ব দেওয়ার।”
রাজনৈতিক শিবির বলছে, বিষয়টি এমন নয়, যে রাহুল গান্ধী বা জয়রাম রমেশ দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন পবন খেরা আর শক্তি গোহিলের মতো নেতা। অন্য দিকে, তৃণমূলের পক্ষে কেন্দ্রকে প্রথম তির শানিয়েছিলেন দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের দাবি, এটা নিছক কাকতালীয় নয়, বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সমন্বয় রয়েছে।
পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত বিরোধী দলের একমাত্র নেতা হিসাবে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকেই দেখা গিয়েছে গত কয়েক দিন বিবিসি-সহ ব্রিটেনের দু’টি এবং অস্ট্রেলিয়ার একটি (যেখান থেকে সদ্য সফর সেরে এলেন মোদী) সংবাদমাধ্যমে ওড়িশার রেল দুর্ঘটনা নিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করতে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, আমেরিকা সফরে রাহুল বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সম্মেলনে বক্তৃতা দিলেও এখনও পর্যন্ত বিদেশের কোনও চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেননি। এখন নিউ ইয়র্কে রয়েছেন ডেরেকও। সূত্রের খবর, রাহুলের মতানুসারেই তৃণমূলকে এ ক্ষেত্রে সব বিরোধী দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ডেরেকও দুর্ঘটনার বিষয়টিকে কেন্দ্রে রেখে আক্রমণ করেছেন বিজেপি সরকারকে। আজ অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, “এই সরকার জনসংযোগে ব্যস্ত। মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।” জনসংযোগের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “সম্প্রতি আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে মোদী নিয়ে গিয়েছেন নিজের রাজ্যে নিজের নামে তৈরি হওয়া স্টেডিয়ামে ক্রিকেট দেখাতে। পুরো বিষয়টিই তাঁর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট।”
কংগ্রেসের (এবং ডিএমকে)-র জন্য ১২ তারিখের পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি (পটনায়) পিছিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কোনও অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি তৃণমূল নেতৃত্বকে। বরং শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, ‘বিরোধী ঐক্যের জন্য কিছুটা সমঝোতা করতেই হবে।’ কংগ্রেস সূত্রের খবর, তারাও চাইছে তৃণমূল এবং আপ-এর সঙ্গে তিক্ততা কমিয়ে খোলা মনে বিরোধী বৈঠকে বসতে। সাগরিদিঘির তিক্ততা নিয়ে আলোচনায় বসলে কাঙ্ক্ষিত ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে না বলেই মনে করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
তবে ১২ জুনের বৈঠক নিয়ে গোড়া থেকেই তাদের সমস্যা ছিল বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। ওই সময় রাহুল আমেরিকায় এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে পূর্বনির্ধারিত কাজে ব্যস্ত। যদি আয়োজক রাজ্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ১২ তারিখেই অটল থাকতেন, তা হলে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পাঠানো হত অশোক গহলৌত এবং সলমন খুরশিদকে। যেখানে বাকি দলগুলির শীর্ষ নেতারা যাচ্ছেন, সেখানে কংগ্রেসের এই প্রতিনিধিত্ব খুবই লঘু হত বলেই তারিখ পিছনোর অনুরোধ করে রেখেছিল কংগ্রেস। আপাতত ২৩ জুনকে সামনে রেখে চললেও বৈঠকের স্থান নিয়ে এখনও খুঁতখুঁতে কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেস শাসিত হিমাচলের রাজধানী শিমলাতেই তাঁরা বিরোধী বৈঠকটি করতে চাইছেন। যদিও এ ব্যাপারে নীতীশ বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনড়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy