শুক্রবার ছাপতে গিয়েছিল। তখনও ছিল বাইশ। কিন্তু আজ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র অজয় মাকেন দাবি করলেন, গত ৭২ ঘণ্টায় নাকি আরও তিনটি সংযোজন হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৫টি ডিগবাজি!
কংগ্রেসের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী প্রচুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জিতেছেন। ক্ষমতায় আসতেই ভোল পাল্টে তিনি একের পর এক ডিগবাজি খাচ্ছেন। ইউপিএ জমানায় কালো টাকা উদ্ধার থেকে শুরু করে সরকারি ভর্তুকি-অনুদানের নগদ হস্তান্তর, কিংবা ডিজেলের মূল্য বিনিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়ে বিজেপি যে অবস্থান নিয়েছিল, মোদী এখন তার থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাচ্ছেন। এক-দুই-তিন করে সেই বিষয়গুলিই সাজিয়ে আজ সরকার-বিরোধী প্রচারের জন্য একটি পুস্তিকা প্রকাশ করল কংগ্রেস। নাম, ‘ছ’মাস হল পার, কেন্দ্রে ইউ টার্ন সরকার!’
এই বই-গঞ্জনার জবাবে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু পাল্টা বলেন, “ছ’মাস ক্ষমতার বাইরে থেকেই কংগ্রেস অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। সরকার সব প্রতিশ্রুতি পালন করছে।” যদিও ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারাও স্বীকার করছেন, বিরোধী হিসেবে যে ‘রোমাঞ্চের’ সুযোগ ছিল, সরকারকে অনেক দায়বদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতা মেনে কাজ করতে হয়। তা ছাড়া বিমা বিলের মতো বিষয় নিয়ে বিজেপির মধ্যেই মতান্তর ছিল।
ডিগবাজির কী কী নমুনা রয়েছে কংগ্রেসের বইয়ে? অজয় মাকেন মনে করান, রাজনাথ সিংহ বলেছিলেন, ক্ষমতায় আসার একশো দিনের মধ্যে বিদেশে গচ্ছিত সব কালো টাকা উদ্ধার করবেন। মোদী বলেছিলেন, সেই টাকা পরিবার পিছু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন। কোনওটাই হয়নি। রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছিলেন, কংগ্রেস দ্বৈত কর ব্যবস্থার ছুতো দিয়ে কালো টাকার মালিকদের আড়াল করছে। এখন কিন্তু বিজেপি সরকারও কালো টাকা উদ্ধার করতে না পারার জন্য দ্বৈত কর ব্যবস্থারই দোহাই দিচ্ছে। আর জনতা হতাশ মোদীর কথা মতো ১৫ লক্ষ টাকা না পেয়ে।
কংগ্রেসের এ-ও বক্তব্য, কালো টাকার কারবার বন্ধ করতে রামদেবের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এক হাজার টাকার নোট বাতিলের দাবি তুলেছিলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনিই ঘোষণা করেছেন, ভারতের হাজার টাকার নোট এ বার নেপালেও চলবে।
মোদীর আর্থিক নীতির প্রশ্নেও কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সীমা বাড়ানোর বিরোধিতা করেছিল। অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে যশবন্ত সিন্হা ওই বিলের বিরুদ্ধে মত দেন। সেই সঙ্গে ডিজেলের মূল্য বিনিয়ন্ত্রণ, রেলভাড়া বাড়ানো, আধার কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা হস্তান্তরের নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজরা। তাঁরাই এখন কংগ্রেস-গৃহীত নীতি নিয়ে চলতে চাইছেন। জেটলির দাবি ছিল, আয়করে ছাড়ের ন্যূনতম উর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হোক। কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী হয়ে এখন তিনি বলছেন, সেটা সম্ভব নয়। কংগ্রেসের বক্তব্য, স্রেফ রাজনীতি করতেই তারা কংগ্রেসের নীতির বিরোধিতা করত।
বিদেশনীতি নিয়ে বিজেপির অতীত আস্ফালনও চুপসে দেওয়ার লক্ষ্যে কংগ্রেস মনে করিয়ে দিয়েছে, বিরোধী পক্ষে থাকতে পাকিস্তান ও চিন উভয়ের বিরুদ্ধে কড়া কড়া মন্তব্য করত মোদীর দল। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তান ও চিন উভয়েই সীমান্তে একাধিক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটানোর পরেও মোদী সরকার নীরব। অরুণের দাবি ছিল, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী। আপত্তি করেন সুষমাও। মোদী সরকার সেই চুক্তিই স্বাক্ষর করতে চলেছে। মাকেনের দাবি, ডিগবাজির সর্বশেষ নমুনাটি মিলেছে রাজনাথের কথায়। গত বছর তিনি কটকে গিয়ে দাবি করেন, সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান সংক্রান্ত নথি প্রকাশ করতে হবে। তিনিই কাল জানান, তা সম্ভব নয়।
সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদমাধ্যমের আর্কাইভে বিজেপি নেতাদের সব কথাবার্তারই রেকর্ড রয়েছে। সেগুলিই ঝেড়েবেছে কংগ্রেসের এই বই। ফলে অভিযোগগুলি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যুক্তি-তর্কে খণ্ডন করতেও বেগ পেতে হচ্ছে বিজেপি নেতাদের। তবে ঘরোয়া আলোচনায় তাদের এক নেতা বললেন, “মনমোহন সরকার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছিল। নীতি তৈরি করেও সেগুলি রূপায়ণের দৃঢ়তা ছিল না। এখন এনডিএ সরকারের অন্যতম পুঁজিই হল মজবুত নেতৃত্ব। আর তা দিয়েই সুরাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে, আশা করছে বিজেপি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy