Advertisement
০২ জুন ২০২৪
Geeta Press

গীতা প্রেস-বিতর্কে পালে হাওয়া মেরুকরণেরই

রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে সোমবার গীতা প্রেস জানিয়েছে, তারা গান্ধী শান্তি পুরস্কারের অর্থ গ্রহণ করবে না। গান্ধী শান্তি পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি টাকা।

Geeta Press

গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৩ ০৮:৪৪
Share: Save:

কংগ্রেস গোরক্ষপুরের গীতা প্রেসকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার দেওয়ার নিন্দা করায় ফের মেরুকরণের রাজনীতির সুযোগ পেয়ে গেল বিজেপি।

রবিবার খোদ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন পুরস্কার কমিটি সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, এ বারে গান্ধী শান্তি পুরস্কার পাবে গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস। তার পরেই কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছিলেন, ‘‘এটা একটা প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। (ভি ডি) সাভারকর বা (নাথুরাম) গডসেকে পুরস্কৃত করার সমতুল।’’ কারণ গান্ধীর প্রতি গীতা প্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সদর্থক ছিল না। গীতা প্রেসের সঙ্গে হিন্দু মহাসভা এবং আরএসএস-এর সম্পর্কই অনেক কাছের। কংগ্রেসের এই সমালোচনা নিয়ে আজ মোদী সরকারের মন্ত্রী থেকে বিজেপির নেতারা কংগ্রেসকে বিঁধেছেন। প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেছেন, ‘‘গীতা প্রেস ভারতের সংস্কৃতি, হিন্দুদের বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত। তার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ তুলছে, তারা মুসলিম লিগকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে।’’ বিজেপির অভিযোগ— কংগ্রেস বরাবরই হিন্দু সনাতনী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এই রমেশই বলেছিলেন, অযোধ্যার বাবরি মসজিদের তালা খোলা ভুল ছিল।

এই রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে সোমবার গীতা প্রেস জানিয়েছে, তারা গান্ধী শান্তি পুরস্কারের অর্থ গ্রহণ করবে না। গান্ধী শান্তি পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি টাকা। আজ সংস্থার পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়ে তারা সম্মানিত। কিন্তু কোনও রকম অনুদান না নেওয়ার নীতিতে অটল থেকেই এই পুরস্কারমূল্য গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত।

গীতা প্রেসের প্রকাশিত গীতা দেশের অধিকাংশ বাড়িতেই দেখা যায়। সেই গীতা প্রেসের সমালোচনা করার কী প্রয়োজন, তা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের বহু নেতার মতে, এই সমালোচনা না করলেও চলত। বিজেপি এতে কংগ্রেসকে হিন্দু-বিরোধী হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ পেয়ে গেল। যদি কংগ্রেসকে এই মতাদর্শগত লড়াই করতেই হয়, তা হলে তা নিয়ে স্পষ্ট রণনীতি তৈরি হওয়া প্রয়োজন। মাঝেমধ্যে এ সব মন্তব্য করে লাভ হবে না। ভোটের রাজনীতিতে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণণের মতে, ‘‘গীতা প্রেস বিজেপির আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কিছু বললে হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত লাগবেই।’’

‘অহিংস এবং অন্যান্য গান্ধীবাদী পথে সামাজিক এবং মানবিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের’ জন্য নামাঙ্কিত পুরস্কার কেন গীতা প্রেস পাবে, প্রশ্ন অবশ্য তাই নিয়েই। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, গীতা প্রেস হিন্দু মহাসভা, আরএসএস, জনসঙ্ঘের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল এতে কোনও ভুল নেই। গীতা প্রেস হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে, মুসলিম, দলিতদের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। আরজেডি সাংসদ মনোজ কুমার ঝা-র যুক্তি, ‘‘গীতা প্রেসকে পুরস্কৃত করতে হলে অন্য ভাবে করা যেত। গান্ধীর সঙ্গে তাদের নাম জড়ানোর যুক্তি কী?’’

পাল্টা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষি লেখি লিখেছেন, ‘‘গীতা প্রেসের পুরস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস সমন্বয়ী সমাজের মূল্যবোধকেই অস্বীকার করছে। গীতা প্রেসের প্রতিষ্ঠাতা হনুমান প্রসাদ পোদ্দার বিপ্লবী ছিলেন। ব্রিটিশরা তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। গোবিন্দবল্লভ পন্থ তাঁর নাম ভারতরত্নের জন্য সুপারিশ করেছিলেন। গীতা প্রেসের পত্রিকা কল্যাণ-ই দলিতদের মন্দির প্রবেশে অধিকারের সপক্ষে সর্বপ্রথম কলম ধরেছিল।’’ প্রাক্তন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ কংগ্রেসের মধ্যে ‘মাওবাদী’ মনোভাব দেখা যাচ্ছে বলে কটাক্ষ করেছেন। জয়রাম রমেশ গীতা প্রেসকে নিয়ে অক্ষয় মুকুলের লেখা একটি বই সামনে আনছেন। সেখানে তথ্য সহকারে দেখানো হয়েছে, গান্ধীর প্রতি প্রথমে শ্রদ্ধা থাকলেও ক্রমশ হনুমান প্রসাদের অবস্থান পরিবর্তিত হয়। এমনকি ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে গান্ধী-হত্যার পরে এপ্রিল মাসের আগে কল্যাণ-এর কোনও সংখ্যায় সে বিষয়ে একটি লাইনও লেখা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE