Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
টেলিকম-দুর্নীতি

আত্মঘাতী গোল করছে কংগ্রেস, মত জেটলিদের

সংসদ অধিবেশনের আর দশ দিন বাকি। বিরোধী শিবিরে অনেকটা একঘরে হয়ে পড়া কংগ্রেস চাইছে টেলিকম ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাওয়া গরম করতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

সংসদ অধিবেশনের আর দশ দিন বাকি। বিরোধী শিবিরে অনেকটা একঘরে হয়ে পড়া কংগ্রেস চাইছে টেলিকম ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাওয়া গরম করতে। যাতে সরকারকে চেপে ধরাও যায়, আবার সেই সূত্রে অন্য বিরোধী দলগুলিকেও ফের কিছুটা কাছে টানা যায়। কংগ্রেসের এই পরিকল্পনা গোড়াতেই ভেস্তে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মোদী সরকারের মন্ত্রী। অভিযোগ ওঠার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রাক্তন ও বর্তমান টেলিকম মন্ত্রী শুধু নয়, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও মুখ খুললেন কংগ্রেসকে পাল্টা চাপে ফেলতে। আঙুল তুললেন বিগত ইউপিএ জমানার দিকেই। জেটলির মন্তব্য, ‘‘নতুন ভাবনার দিক দিয়ে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। তবে আত্মঘাতী গোল করার শিল্পটা তারা নিখুঁত ভাবে রপ্ত করেছে।’’ অর্থমন্ত্রীর মতে, কংগ্রেসের মুখপাত্র ৪৬ হাজার কোটি টাকার টেলিকম দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছেন, সেটা আত্মঘাতী গোল ছাড়া কিছু নয়।

কংগ্রেস গত কাল টেলিকম দুর্নীতির অভিযোগ তোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাতেই টেলিকম মন্ত্রক থেকে বলা হয়, কোনও দুর্নীতিই হয়নি। ৬টি টেলিকম সংস্থার বকেয়া পাই পাই উসুল করা হবে। কিন্তু তাতেও থামছে না কংগ্রেস। আজ ফের তারা একই অভিযোগ নিয়ে সরব হতেই আসরে নামেন টেলিকম মন্ত্রকের বর্তমান মন্ত্রী মনোজ সিন্হা, প্রাক্তন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ও জেটলি।

অভিযোগ উঠেছিল, ছ’টি টেলিকম সংস্থা ২০০৬ থেকে ২০১০-এর মধ্যে তাদের আয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা কম দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিএজি সংস্থাগুলির খাতা খতিয়ে দেখে এ বছরের মার্চে রিপোর্ট পেশ করেছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, তার পরেও টেলিকম মন্ত্রক সিএজির মূল্যায়নে ভরসা না রেখে মন্ত্রকে নতুন করে হিসেব কষে দেখছে। যাতে ৬টি টেলিকম সংস্থাকে আরও সুবিধা দেওয়া যায়। কংগ্রেসের দাবি, এটাই দুর্নীতি। এই ৪ বছরে সরকারের প্রাপ্য সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। পরের ৪ বছরের হিসেব জুড়লে অঙ্কটা দাঁড়াবে লক্ষ কোটি টাকার বেশি।

জেটলি-রবিশঙ্করদের প্রশ্ন, একে কি আদৌ দুর্নীতি বলা যায়? তাঁদের বক্তব্য, বিষয়টি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির বিবেচনাধীন। মন্ত্রক তবু সিএজি-র রিপোর্ট খতিয়ে দেখছে, যাতে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এখানে সরকারের ভুলটা কোথায়? বরং দুর্নীতি যা হয়েছে সে ইউপিএ আমলে। সেই সময় সরকার শুধু তা দেখে গিয়েছে। তৎকালীন টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বল বলে এসেছেন, সরকারের কোনও লোকসানই হয়নি।

রবিশঙ্করের বক্তব্য, টেলিকম মন্ত্রক সিএজি থেকে যাবতীয় নথি হাতে পেয়েছে জুন মাসের মাঝামাঝি। যেহেতু টেলিকম মন্ত্রকে বিশেষ অডিট চলছে, আর অনেক সময় দেখা যায় সিএজির মূল্যায়নের থেকেও মন্ত্রকের হিসেবে আরও বেশি রাজস্ব পাওয়া যায়, তাই মন্ত্রকও সব হিসেব খতিয়ে দেখছে।

রবিশঙ্করের যুক্তি উড়িয়ে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা আজ ফের বলেন, সিএজি-তে ভরসা না রেখে নতুন করে অডিট করার নেপথ্যেই দুর্নীতি লুকিয়ে আছে।

বিজেপির কাছে এটা স্পষ্ট, পণ্য ও পরিষেবা কর নিয়ে কংগ্রেস এখন একঘরে হয়ে পড়েছে। কংগ্রেস ছাড়া বিরোধী শিবিরের বেশির ভাগ দল এখন সরকারের পাশে। যে কারণে সনিয়া গাঁধী এ বারে ইফতার পার্টিরও আয়োজন করেননি। সংসদের বাদল অধিবেশনের মুখে কংগ্রেস এখন নতুন প্রসঙ্গ হাতড়ে বেড়াচ্ছে। যা নিয়ে হল্লা করা যায়। অচল করা যায় সংসদ। কিন্তু সেই লক্ষ্যে নিজেদের জমানায় ঘটা টেলিকম দুর্নীতির প্রসঙ্গকে অস্ত্র করাটা কংগ্রেসের বড় ভুল। তড়িঘড়ি পাল্টা আক্রমণে নেমে জেটলিরা আজ বুঝিয়ে দিলেন, মোদী সরকার মোটেই আত্মতুষ্টিতে ভুগছে না। সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arun Jaitley telecom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE