এ যেন সেই ‘ভরা সংসার’। কংগ্রেস নেতাদের দেখতে, তাঁদের কথা শুনতে প্রায় হুড়োহুড়ি অবস্থা। রাজীব ভবনের নীচতলায় দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। ব্যালকনিও হাউসফুল। দু’দিন আগেও কংগ্রেস ভবনে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল একেবারে হাতে গোনা। আজ রাজীব ভবনে প্রতিনিধি সম্মেলন সেরে প্রদেশ সভাপতি রিপুণ বরা, বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া-রা কংগ্রেস অফিসে গেলে উতসবের মেজাজ ধরা পড়ে সেখানে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ব্লক পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সব দেখে উৎফুল্ল দলের প্রদেশ নেতৃত্ব। খুশি আয়োজকরাও। প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিংহ মাইক্রোফোনে বলেই ফেলেন, ‘‘টাকাপয়সা খরচ না-করে এ বার যে উপস্থিতি তা আশাব্যঞ্জক।’’ প্রদেশ সভাপতি রিপুণ বরা বক্তৃতা শুরুই করেন এ ভাবে, ‘‘আপনাদের হাসি-খুশি মুখ দেখে মনে হচ্ছে, বরাক উপত্যকায় কংগ্রেসের মনোবল অটুট রয়েছে। এখান থেকেই শুরু হল কংগ্রেসকে শক্তিশালী করে তোলার অভিযান।’’
গত কালই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে নিযুক্তি পেয়েছেন রিপুণ বরা। আজ শিলচরে আসেন প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিতে। বরাকবাসীর আবেগের কথা খেয়াল রেখে এনআরসি, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে দলীয় অবস্থান জানান। রাজ্যে বিজেপি সরকারের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উদ্দেশে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ নিয়ে অহেতুক কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টিই তাঁদের লক্ষ্য। কেউ বলেন, ১৯৫১ সাল, কারও মন্তব্য, ১৯৪৭। কিন্তু আসাম চুক্তিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ভিত্তি করতে বলা হয়েছে। এনআরসি-তেও তা মেনে নেওয়া হয়েছে। ফলে ৭১-ই যে সর্বজনগ্রাহ্য, তা জোর দিয়ে শোনান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। এনআরসি নিয়ে আজও যে কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার সঙ্গে কথা বলেছেন, তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওআই লেখা নিয়ে আশঙ্কার কারণ নেই। এনআরসি প্রকাশিত হলে সেখানে ওআই বা এনওআই কিছুই লেখা থাকবে না। এমনকী, কে কবে বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে এসেছেন, এরও উল্লেখ থাকবে না।’’
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সংসদে কংগ্রেসের অবস্থান কী হবে, তা স্থির করার দায়িত্ব রিপুণ বরা বরাকের কংগ্রেস নেতাদের উপরই ছেড়ে দেন। তিনি তিন জেলা কমিটির উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা সর্বসম্মতভাবে স্থির করুন, আমাদের কী কী বলা দরকার, কী কী করা প্রয়োজন। আমরা এই ইস্যুতে সে সব পালনের চেষ্টা করব।’’ সাংসদ সুস্মিতা দেবের কথায়, ‘‘নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতে নরেন্দ্র মোদীর দল নাগরিকত্ব সংশোধনীর নামে যা-খুশি একটা বিল নিয়ে এসেছে। তাতে এখানকার মানুষের কোনও লাভ হবে না।’’ তাই তাঁরা এখন আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখছেন।
প্রাক্তন বিধায়ক বীথিকা দেবের আক্ষেপ, নাগরিকত্বের আশায় সবাই মিলে সবানন্দ সোনোয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী করলেন। তিন মাসেই তিনি এখন বাঙালি বিতাড়নের চক্রান্ত করছেন। সর্বানন্দের আবেদনেই যে আইএমডিটি বলে অসমের এক বিশেষ আইন বাতিল করে দিয়েছিল সু্প্রিম কোর্ট, তারও উল্লেখ করেন বীথিকাদেবী। এর পরই তাঁর সংযোজন, তাঁর কাছে বাঙালির আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে! বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া প্রাঞ্জল বাংলায় তাঁর বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা আন্দোলনে বিজেপি বা তৎকালীন জনসঙ্ঘের কোনও ভূমিকা ছিল না। তারা বরং ব্রিটিশেরই সমর্থক ছিলেন। কিন্তু এখন এরাই কেন্দ্রে-রাজ্যে স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে।’’
প্রতিনিধি সম্মেলনে দুই বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ ও রাজদীপ গোয়ালা, প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায় উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন জেলার বিভিন্ন আসনের পরাজিত প্রার্থীরাও। তাঁদের সবাই অবশ্য প্রাক্তন বিধায়ক। তাই রুমি নাথকে বক্তৃতার সুযোগ না দেওয়া হলে তিনি অনেকটা জোর করেই মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। বলেন, ‘‘সবাই তো আমরা হেরে বসে রয়েছি। সবাই প্রাক্তন। গৌতম রায়ের মতো মানুষ হেরে গিয়েছেন।’’ এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি দোষ্ঠী কোন্দল বন্ধের পরামর্শ দেন। না হলে যে লোকসভা নির্বাচনেও লোকসান হতে পারে, সতর্ক করে দেন তিনি। সম্মেলনে পৌরোহিত্য করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy