Advertisement
E-Paper

COVID-19: অস্ত্র পরিচ্ছন্নতা আর স্বাস্থ্যবিধি, করোনা ঢুকতেই পারেনি এই ‘অপদেবতার গ্রামে’

সুঅভ্যাসের সুফল বেশি করে দেখা গেল গত বছর। করোনা ছড়িয়ে পড়তেই স্বাস্থ্যবিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন শুরু করেন গ্রামের মানুষ।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত 

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২১ ০৫:২৭
অসমের কোভিডমুক্ত গ্রাম সিকদামাখার পরিচ্ছন্ন পথ।

অসমের কোভিডমুক্ত গ্রাম সিকদামাখার পরিচ্ছন্ন পথ। নিজস্ব চিত্র।

গ্রামের নাম সিকদামাখা। যার অর্থ ‘টিলার ফাঁদ’। লোকগান অনুযায়ী, চারপাশে টিলা ঘেরা এই গ্রামে অপদেবতা ও ভূতেরা ফাঁদ পেতে মানুষ ধরত! তাই অতীতে সিকদামাখা ছিল ভয়ের এলাকা। নামের সঙ্গে কুংসংস্কার জড়িয়ে থাকলেও ১৯৫৩ সালে তৈরি এই গ্রাম স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মূল মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছে কবেই। আর তারই জোরে প্রথম ঢেউ ঠেকিয়েছে। এখনও পর্যন্ত করোনার দ্বিতীয় ঢেউকেও আটকে রেখেছে গ্রামের বাইরে। সিকদামাখাই সম্ভবত অসমের একমাত্র করোনামুক্ত গ্রাম।

রহস্যটা কী?

দেশে তখনও বিজেপি সরকার আসেনি। নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ স্লোগান দূর অস্ত্। কিন্তু কার্বি আংলয়ের ছোট্ট গ্রামটি নিজেদের মতো করেই শুরু করেছিল স্বচ্ছতার উপাসনা। অসমের সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রামের তকমা জুটেছিল আগেই। পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি পালন আর শৃঙ্খলার তিন বর্মে এখনও সুরক্ষিত রয়েছেন টিওয়া জনজাতি অধ্যুষিত গ্রাম। ৯০ ঘর মানুষ। জনসংখ্যা ছ’শো।

মেঘালয়ের মাওলেনং বহু দিন ধরেই সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে পর্যটনের চাপ, গজিয়ে ওঠা হোটেল-রেস্তরাঁর উৎপাত তার পরিচ্ছন্নতায় থাবা বসিয়েছে। সিকদামাখার সে সব বালাই নেই। প্রচারের আলোর আড়ালেই ২০১০ সাল থেকে গ্রামের মানুষ নেন পরিচ্ছন্নতার ব্রত।

শুরুটা হয়েছিল এই ভাবে। আগে হাটবারে গ্রামের চারপাশে জমে থাকত ময়লা। ২০১০ সালে বড়দিনের আগে সেই ময়লার স্তূপ সাফ করতে করতে বিরক্ত গ্রামের মানুষ সাফাই অভিযানের কমিটি গড়ে ফেলেন। ২০১২ সালে, সেন্ট অ্যান্টনি ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে গ্রামে শুরু হয় পরিচ্ছন্নতার প্রতিযোগিতা। ফলও মেলে হাতেনাতে। পয়লা নম্বরে থাকতে সব পরিবারই কোমর বেঁধে নামে। রাস্তায় ঝাড়ু পড়তে থাকে ঘন ঘন। সব ময়লা জমা হয় বাঁশের ঝুড়িতে। প্রতিযোগিতাই পরিণত হয় অভ্যাসে। তাই গ্রামেকে প্লাস্টিক মুক্ত বা খোলা জায়গায় শৌচের অভ্যাস থেকে মুক্ত করতে প্রশাসনকে বেগ পেতে হয়নি। গ্রামবাসীরাই প্লাস্টিকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। পাকা শৌচালয় সব বাড়িতে।

সুঅভ্যাসের সুফল বেশি করে দেখা গেল গত বছর। করোনা ছড়িয়ে পড়তেই স্বাস্থ্যবিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন শুরু করেন গ্রামের মানুষ। সরকারি লকডাউনের পরোয়া না করে শুধুমাত্র চাষের কাজ ছাড়া বাকি সময় কেউ অযথা ঘোরাঘুরি করেননি। সকলের বাড়ির সামনে রাখা হয়েছে স্যানিটাইজ়ার। কার্বি স্বশাসিত পরিষদের সদস্য উপিং মাসলাই জানান, শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলেই কোভিড প্রোটোকল মেনে চলেছেন। ফাঁকা রাস্তা পেয়েও মাস্কবিহীন অবস্থায় ঘোরাঘুরি করেননি কেউ। আত্মনিয়ন্ত্রণের এই ব্রতেই কোভিডের প্রথম ঢেউ নির্বিঘ্নে পার করে, দ্বিতীয় ঢেউয়েও করোনামুক্ত এই গ্রাম।

Assam village Coronavirus in India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy