দিল্লির করোল বাগের গলিঘুঁজিতে সোনার গয়নার দোকান। মালিক থেকে কারিগর, সিংহভাগই বাঙালি।
হাওড়া থেকে মেদিনীপুর— ঘর ছাড়া বাঙালিরা সারা বছর দুর্গাপুজোর কয়েকটা দিনের অপেক্ষায় থাকেন। পুজোর জন্য চাঁদা বা বিজ্ঞাপন দিতে কেউ-ই কার্পণ্য করেন না। এ ভাবেই করোল বাগ পুজোসমিতির দুর্গাপুজো ৭৬ বছরে পা দিয়েছে। কিন্তু এ বার সেই পুজোর আয়োজন করতে গিয়েই জেরবার হয়ে যাচ্ছেন করোল বাগের বাঙালিরা। কেন?
প্রথমে নোট বাতিল। তারপর জিএসটি। এই দুইয়ের ধাক্কায় নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় করোল বাগের ছোট ও মাঝারি মাপের গয়না ব্যবসায়ীদের। ফলে দুর্গাপুজোর চাঁদাতেও টান পড়েছে। পুজোর চারদিনের ভোগ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— সব দিক বজায় রেখে উৎসবের আয়োজন করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। পুজোসমিতির সম্পাদক দীপক ভৌমিক বললেন, ‘‘গয়নার ব্যবসার বেশির ভাগটাই হতো নগদে। নোট বাতিলের পরে বিক্রিবাটা বন্ধ ছিল। এখন ৫০ হাজার টাকার বেশি নগদ লেনদেনে প্যান বাধ্যতামূলক। তার উপর জিএসটি-র ঝঞ্ঝাট। পুজোর চাঁদা মিলবে কোথা থেকে?’’
আরও পড়ুন: মণ্ডপে মণ্ডপে দর্শণার্থীদের ঢল, সন্ধ্যা হতেই স্তব্ধ শহর
শুধু করোল বাগ নয়। গোটা দিল্লির পুজোর উদ্যোক্তারাই নোট বাতিল-জিএসটির ধাক্কায় ধরাশায়ী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতা থেকে এ বছর দিল্লিতে প্রায় ৪০০ জন শিল্পীর আসার কথা ছিল। খরচে কাটছাঁটের ফলে ১০০ জনের বুকিং বাতিল হয়েছে। বাঙালিপাড়া চিত্তরঞ্জন পার্কের নবপল্লী পুজোসমিতির সভাপতি উৎপল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘নোট বাতিল ও জিএসটি-র ধাক্কায় ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থা এবং ব্যবসায়ীরা মুশকিলে পড়েছেন। তাঁরাই আমাদের ভরসা ছিলেন। এ বারও চাঁদা বা ডোনেশন দিচ্ছেন, কিন্তু তা নেহাৎই ভদ্রতার খাতিরে। আমরাও অসুবিধেটা বুঝতে পারছি।’’
দিল্লির পুজো কমিটিগুলির বক্তব্য, মোদী জমানার গোড়া থেকেই তারা মুশকিলে পড়েছে। কারণ স্টেট ব্যাঙ্ক, সেইল, এনটিপিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির ডোনেশনই পুজোর তহবিল জোগাড়ে প্রধান ভরসা ছিল। কিন্তু মোদী ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন, কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য তহবিলের সিংহভাগই প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এ খরচ করতে হবে। উৎপলবাবু বলেন, ‘‘তার ফলে আগে যে সংস্থা ২ লক্ষ টাকা দিত, এখন তারাই ২০ হাজার টাকা দিচ্ছে।’’ নোট বাতিল বা জিএসটি-র আগে থেকেই এমন চলছে। করোল বাগের অলঙ্কার ব্যবসায়ী গোপীনাথ সামন্ত নিজে পুজো সমিতির সহ-সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘জিএসটি-র বিধিনিয়ম মানতে গিয়ে মাঝারি সংস্থাগুলোর এখন এমনই অবস্থা যে, ব্যবসা না হলেই ভাল। বিক্রিবাটা হলেই হিসেব রাখার ঝক্কি। বিদেশ থেকে সোনা আমদানি করতে গিয়েও চড়া হারে জিএসটি মেটাতে হচ্ছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy