Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ঘরে যেন বুলডোজার চালিয়ে দিয়েছে কেউ

ভোর পাঁচটায় হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দে ঘুম ভেঙেছিল। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, ততই দেখেছি প্রলয়নাচন!

মেয়ে টিনার সঙ্গে শুভ্রা হাজরা চৌধুরী।

মেয়ে টিনার সঙ্গে শুভ্রা হাজরা চৌধুরী।

শুভ্রা হাজরা চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

ভোর পাঁচটায় হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দে ঘুম ভেঙেছিল। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, ততই দেখেছি প্রলয়নাচন! কখনও হুড়মুড় করে কাচ ভেঙে পড়ার শব্দ পাচ্ছি কখনও থরথর করে কেঁপে উঠছে ঘর। খাটে শুয়ে বুঝতে পারছি, সেটা নড়ছে! আমি শুধু এক মনে জগন্নাথদেবকে ডেকে চলেছি। বলছি, ‘‘প্রভু, রক্ষা করো।’’

এ ভাবেই শুক্রবার সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হোটেলের ঘরবন্দি হয়েছিলাম আমি ও আমার মেয়ে টিনা। দুপুরে যখন বেরোলাম, দেখলাম হোটেল যেন তছনছ হয়ে গিয়েছে। রিসেপশনও লন্ডভন্ড করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ফলস সিলিং ভেঙে মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে প্লাইউড, কংক্রিটের টুকরো। বিরাট অ্যাকোরিয়ামের উপরের ঢাকনা খুলে জলের মধ্যে পড়ে রয়েছে। ভিতরে খাবি খাচ্ছে রঙিন মাছগুলো।

আমি বর্ধমানের বাসিন্দা। মেয়ে বিদেশে থাকে। আমি একাই থাকি বাড়িতে। আমি জগন্নাথের একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই প্রতি দুমাস অন্তর আমি পুরী আসি, জগন্নাথ দর্শন করতে।

এ বার মেয়ে বেঙ্গালুরুতে এসেছিল কাজের সূত্রে। তাই ঠিক করি, মেয়েকে নিয়েই জগন্নাথের পুজো দেব। ৩০ এপ্রিল সকালে জগন্নাথ এক্সপ্রেসে ভুবনেশ্বর পৌঁছই। মেয়েও বেঙ্গালুরু থেকে ট্রেনে চেপে ভুবনেশ্বর আসে। সেখান থেকে দুজনে একসঙ্গে পুরী পৌঁছেছিলাম বেলা ৩টে নাগাদ।

একটা ঝড় আসছে শুনেছিলাম। তবে সে ঝড় তো আগেও হয়েছে। নীলাচলে বড় কোনও বিপদ হতে দেখিনি। তাই ঠিক করেছিলাম, ৪ মে, শনিবার জগন্নাথ এক্সপ্রেসে ফিরে যাব। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেখি, দলে দলে ফিরে যাচ্ছে পর্যটকেরা। প্রশাসন থেকেও সবাইকে পুরী ছাড়তে বলছে। বিপদ আঁচ করে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটতে যাই। কিন্তু পাইনি। বাসের টিকিট কাটতে গেলাম। তা-ও পেলাম না। অগত্যা হোটেলেই ফিরে এলাম। দু’জন মহিলা বিপদে পড়ায় হোটেলের কর্মীরাও থাকতে দিলেন।

আমরা ছিলাম একতলায় সামনের দিকের একটি ঘরে। জানলা দিয়ে সোজাসুজি সমুদ্র দেখা যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে হোটেলের কর্মীরা আমাদের সেখান থেকে সরিয়ে তিনতলার পিছনের দিকের একটি ঘরে নিয়ে গেল। একতলার সুন্দর ঘর ছাড়তে মেয়ে আপত্তি করেছিল। কিন্তু ওঁরা শোনেননি।

কেন যে সরিয়ে নিয়ে গেছিল, তা বুঝলাম শুক্রবার দুপুরে। ঝড় একটু কমতে নেমে দেখি, একতলায় যে ঘরটায় আমরা দুজনে ছিলাম সেটায় কেউ যেন বুলডোজার চালিয়ে দিয়েছে। সারা ঘর লন্ডভন্ড। জানলার শার্সি ভেঙে ছড়িয়ে রয়েছে। মেঝেতে জল, বালি থইথই করছে। মেয়ে বলছিল, ঝড় থামলে এই ঘরে ফিরে আসবে। সে কথা মনে পড়তেই দুর্যোগের মধ্যেও যেন হাসি পেল।

আগেই বলেছি, বারবার পুরী আসি। পরের দু’বারের টিকিটও কেটে রেখেছি। জানি, যত বিপদই হোক, ঈশ্বর রক্ষা করবেন। তবু এ বার যে ঝড় দেখলাম তা সারা জীবন মনে থাকবে।

(লেখিকা পুরীতে আটকে পড়া পর্যটক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Fani ফণী Bulldozer Odisha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE