ফের ৬ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বাড়ল। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১১৩ শতাংশ থেকে ওই ভাতা বাড়িয়ে ১১৯ শতাংশ করার বিষয়ে সিলমোহর দিয়েছে। এই সুবিধা পাবেন প্রায় এক কোটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগী।
গত এপ্রিল মাসেও সরকার মূল বেতনের উপর ৬ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাড়িয়েছিল। ১০৭ শতাংশ থেকে বেড়ে সে বারই ওই ভাতা ১১৩ শতাংশ হয়। এ বার আরও ৬ শতাংশ বেড়ে তা মূল বেতনের ১১৯ শতাংশ হল। তবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বাড়লেও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা এখন ৫৪ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াল। চার দিকের সমালোচনা এবং ক্ষোভের মুখে গত জানুয়ারি মাসে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৭ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলা হয়, ওই মাসের বেতনের সঙ্গেই কিস্তির টাকা পাবেন কর্মীরা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দ্র তাদের কর্মীদের ইতিমধ্যেই ১১৩ শতাংশ ডিএ দিয়েছে। এ দিনের ৬ শতাংশ ঘোষণা হওয়ায় অঙ্কটা ১১৯ শতাংশ হল। দেশের বেশির ভাগ রাজ্যই তাদের কর্মীদের হয় কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় অথবা দু’-এক কিস্তি পিছিয়ে। প্রতিবেশী অসম-বিহার-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিও কেন্দ্রীয় হারের সমান ভাতা দেয়, অথবা এক-আধ কিস্তি পিছিয়ে আছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন কেন্দ্র বছরে দু’বার ডিএ দিতে পারে, অথচ রাজ্য সরকার পারে না?
এ ব্যাপারে ক্ষোভ ছড়িয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যেও। ইতিমধ্যেই সিপিএম প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠন কোঅর্ডিনেশন কমিটি-র পক্ষে মনোজ গুহ বলেন, ‘‘দেশের বুকে নতুন রেকর্ড করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এত কম বেতন দেশের আর কোনও রাজ্যের কর্মীরা পান না। বামফ্রন্ট ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার সময়ে মহার্ঘভাতা বকেয়া ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ। তার মধ্যে ১০ শতাংশের ব্যবস্থা ভোট-অন-অ্যাকাউন্টসেই করে গিয়েছিলেন বিদায়ী অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। এই সরকার সেটাও সময়মতো দেয়নি।’’ এরই পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘আমরা দু’-এক দিনের মধ্যেই যৌথ মঞ্চ একসঙ্গে বৈঠকে বসব। তবে এ বার আমরা সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করব।’’
কেরল বা ত্রিপুরার মতো রাজ্যেও ডিএ এত বেশি কেন?
মনোজবাবু বলেন, ‘‘ত্রিপুরার সঙ্গে আমাদের রাজ্যের তুলনা চলে না। তা-ও ত্রিপুরার থেকে আমাদের বকেয়া বেশি। আর কেরল, তামিলনাড়ু, কর্নাটক বা তেলঙ্গানার সরকারি কর্মীদের বেতনই অনেক বেশি। এই চার রাজ্যে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিয়মিত বেতন পুনর্বিন্যাস হয়। তাই তাঁদের মহার্ঘভাতা কত বকেয়া আছে, তার হিসেব করলে হবে না।’’
কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর পক্ষে মলয় মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘উৎসবের নামে কোটি কোটি টাকা খরচে সরকারের কোনও কার্পণ্য নেই। যত অভাব-অনটন কর্মীদের মহার্ঘভাতা এবং বেতন বৃদ্ধির বেলায়।’’ যদিও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন-এর আহ্বায়ক সৌম্য বিশ্বাস বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আছে। তিনি যথাসময়েই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শাসক দলের কর্মী সংগঠনের সভায় থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সভায় যাতে তিনি এক কিস্তি মহার্ঘভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন, সে জন্য তাঁকে রাজি করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন সংগঠনের কেউ কেউ। কিন্তু শেষমেশ ওই সভাতেও মুখ্যমন্ত্রী বকেয়া ডিএ-র কিছুটা দেওয়ার কথা যদি ঘোষণা না করেন তা হলে সরকারি কর্মীদের মধ্যে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকবে বলে মনে করছেন ওই সংগঠনের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy