Advertisement
E-Paper

জামিয়া-শাহিনের কাছে দিল্লির ভোটই কষ্টিপাথর

দিল্লি-ভোটের পরেও প্রতিবাদের এই ‘জোশ’ থাকবে? ছিটকে আসে উত্তর, ‘‘আলবাৎ! এই লড়াই তো যাতে আমার পরের প্রজন্মও এ দেশে ভোট দিতে পারে, সেই জন্য।’’

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৪২
শাহিন বাগে প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।

শাহিন বাগে প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।

টানা ৫২ দিন রোজ সকালে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ান হাজি মহম্মদ জ়াহিদ। রোজ প্ল্যাকার্ড পাল্টায়। এই বিশ্বাসে যে, সারা দেশ রুখে দাঁড়ালে নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হবে সরকার।

দিল্লি-ভোটের পরেও প্রতিবাদের এই ‘জোশ’ থাকবে? ছিটকে আসে উত্তর, ‘‘আলবাৎ! এই লড়াই তো যাতে আমার পরের প্রজন্মও এ দেশে ভোট দিতে পারে, সেই জন্য।’’ কোনও ব্যক্তি নন, এই যুদ্ধ আসলে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের চেষ্টার বিরুদ্ধে বলে তাঁর দাবি।

জ়াহিদ যেখানে দাঁড়িয়ে এ কথা বলছেন, তার থেকে কিলোমিটার দু’য়েক দূরেই শাহিন বাগ। মহিলাদের আন্দোলনের জন্য যে অখ্যাত জায়গাকে এখন কার্যত এক ডাকে চেনে সারা দেশ। সেই শাহিন বাগে আবার গত ৫১ দিন টানা আসছেন মহম্মদ ইজাজ়। পা চলে না। তাই ভরসা হাতে প্যাডল ঠেলা গাড়ি। দিল্লি ভোটের কথা তুলতেই তিনি বললেন, ‘‘কখনও শুনছি, রাস্তা আগলে বসে থাকার জন্য আমাদের উপরে বেজায় চটে বাকি দিল্লি। আবার কেউ বলছেন, শাহিন বাগই নাকি জাগিয়ে দিয়েছে সারা দেশকে। এখানকার ধাঁচে প্রতিবাদ হচ্ছে বহু জায়গায়।’’ তিনি মনে করেন, এর কোনটা সত্যি, সেই উত্তর খোঁজায় কিছুটা কষ্টিপাথর হবে দিল্লি-ভোটের ফল। আজিজ়রা দেখতে চান, শুধু ধর্মের ভিত্তিতে দেশের রাজধানীর মানুষকে সত্যিই ভাগ করা গেল কি না।

কেজরীবাল যতই সস্তা বিদ্যুৎ-জল-ভাল স্কুলের কথা বলুন, দিল্লি ভোটের মুখে বিজেপি নেতাদের নিশানায় মূলত জামিয়া ও শাহিন বাগ। ইব্রাহিম বলছিলেন, ‘‘কখনও মন্ত্রী আমাদের দেশদ্রোহী ঠাওরে গুলি মারার স্লোগান তোলেন।
কখনও সত্যিই গুলি করতে বন্দুক তোলে দুষ্কৃতী। জীবনের নিরাপত্তাই নেই, তো ভোট।’’

তার মানে কি সত্যিই দিল্লি ভোটে উদাসীন জামিয়া আর শাহিন বাগ?

সম্ভবত না। রাগ আর ক্ষোভের গনগনে আঁচ টের পাওয়া যায় যখন সালমা খাতুন বলেন, ‘‘লোকসভায় অনেক ভোট পেয়ে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে এই সরকারের। একে শিক্ষা দেওয়া জরুরি।’’

মহল্লায় এক পাক ঘুরলেই চোখে পড়ে, কত জনের মাথায় আম আদমি পার্টির নির্বাচনী প্রচারের টুপি। নরেন্দ্র মোদী কিংবা অমিত শাহ যে এই তল্লাটে আদৌ জনপ্রিয় নন, তা বুঝতে আসারও দরকার পড়ে না। কিন্তু দু’জায়গাতেই কিছু জনের সঙ্গে কথা বলে একটা কথা টের পাওয়া যায়। তা হল, এই দিল্লি-ভোটে বাকি দেশের আয়নায় নিজেদের মুখ দেখতে চান প্রতিবাদকারীরা। জরিপ করতে চান, যাঁরা সিএএ-র বিরোধিতায় শামিল হচ্ছেন না প্রতিবাদে, অন্তত দিল্লিতে তাঁরা কোন দিকে? ৩০ জানুয়ারি গুলি খাওয়া জামিয়ার পড়ুয়া কিংবা ঠায় ঠান্ডায় ছেলে কোলে বসে থাকা
শাহিন বাগের মায়ের প্রতি তাঁদের সহানুভূতি কতটা?

তার মানে এই নয় যে, আন্দোলনে চিড় ধরেনি কোথাও। পরতে পরতে ঢুকে নেই রাজনীতি। শাহিন বাগ ১ ফেব্রুয়ারি গুলি চলার কথা যত ফলাও করে বলছে, ততটাই এড়িয়ে যেতে চাইছে তার কিছু দিন আগে মঞ্চের কাছে বন্দুক হাতে যুবকের প্রসঙ্গ। ‘প্রকৃত’ প্রতিবাদকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সংখ্যা এক থেকে বেড়ে তিন। মঞ্চে যাঁরা বক্তৃতা দিতে আসছেন, কট্টর ধর্ম কিংবা কটূ রাজনীতিও তার মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। থামাতে হচ্ছে বলেকয়ে। কেউ কেউ নিজেরাই সন্দিগ্ধ, দিল্লি ভোট মিটলে, আন্দোলনের এই ঝাঁঝ থাকবে তো?

ভোটের মুখে দাঁড়ানো জামিয়া কিংবা শাহিন বাগের অধিকাংশ জনও সম্ভবত এর নিশ্চিত উত্তর জানেন না। জানেন না, তাঁরা অনেক বড় কোনও রাজনীতির দাবার বোড়ে হয়ে উঠছেন কি না। তবে আপাতত রাস্তা রোখার রাগ শিকেয় তুলে দিল্লিবাসী ধর্মীয় বিভাজনের পথে দেওয়াল তোলেন কি না, সে দিকেই নজর তাঁদের।

Shaheen Bagh Jamia Millia CAA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy