Advertisement
০২ মে ২০২৪

এক দিনে পৌনে দু’কোটি কর, নোট-সঙ্কটে ‘পৌষমাস’ পুরসভার

কালো টাকা রুখতে প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের দাওয়াইয়ে একধাক্কায় কয়েক গুণ বাড়ল গুয়াহাটি পৌর নিগমের (জিএমসি) কর আদায়। শহরবাসীর কাছ থেকে কর আদায় করতে সাধারণত হিমসিম হতো জিএমসি।

নোট-নিজস্বী। বৃহস্পতিবার করিমগঞ্জে। — উত্তম মুহ

নোট-নিজস্বী। বৃহস্পতিবার করিমগঞ্জে। — উত্তম মুহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩৭
Share: Save:

কালো টাকা রুখতে প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের দাওয়াইয়ে একধাক্কায় কয়েক গুণ বাড়ল গুয়াহাটি পৌর নিগমের (জিএমসি) কর আদায়। শহরবাসীর কাছ থেকে কর আদায় করতে সাধারণত হিমসিম হতো জিএমসি। বেশিরভাগ সময়ই করের টাকা আদায় না হওয়ায় উন্নয়নের কাজ থমকে যেত। কর বাকি রাখা ব্যক্তি বা সংস্থাগুলির কাছে বার বার নোটিস পাঠালেও লাভ হতো না।

কিন্তু ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা হতেই বদলে যায় ছবিটা। সম্প্রতি পুরসভা ঘোষণা করে, ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত পুরনো নোটেই কর নেওয়া হবে। এর পরেই পুরসভায় লম্বা লাইন জমে যায়।

জিএমসি কমিশনার সঞ্জীব গোঁহাই বরুয়া জানান, ১১ নভেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুরসভায় পাঁচ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার কর জমা পড়েছে। যা কার্যত নজিরবিহীন। সোমবার কর জমা পড়ে এক কোটি ৬২ লক্ষ টাকা। এক দিনে এত টাকার কর জমা গত ৪৫ বছরের মধ্যে হয়নি বলে জানান তিনি। গত কাল সংগ্রহ হয়েছে এক কোটি ২০ লক্ষ টাকার কর। সঞ্জীববাবু জানান, অনাদায়ী করের জন্য নিয়ম করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে হতো। বাড়ি বা দোকানে কর আদায় করতে পাঠানোর মতো লোকবল পুরসভার নেই। অন-লাইনে কর আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও শহরের মাত্র ১.২ শতাংশ মানুষ অন-লাইনে কর দিতেন।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে উলটপুরাণ! মানুষ প্রতি দিন নিজেই কর দিতে পুরসভায় আসছেন। গত কয়েক বছরের বকেয়া কর তিন-চার দিনে মিলেছে। অবশ্য এখনও ৫৫-৬০ কোটির ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু বড়ুয়ার বক্তব্য, এ বার আদায় হওয়া করের টাকায় পুরসভা বকেয়া তেল ও বিদ্যুতের বিল মেটাতে পারবে। পুরসভার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ১০ কোটি টাকার। কমিশনারের মতে, ওই টাকার একটা অংশ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা হবে। পুরসভায় যেখানে খুশির বন্যা, সেখানে উত্তর-পূর্ব বিশেষ করে অসমে ছোট গয়নাশিল্পীরা সমস্যায় পড়েছেন। বিয়ের মরসুম হলেও তাঁদের ব্যবসা কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। গয়নার কয়েকটি বড় শো-রুমেও ক্রেতা হাতেগোণা। অবশ্য এ দিন বিয়ের বাজারের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা তোলার অনুমতি মেলায় ক্রেতা বাড়তে পারে বলে দোকান মালিকদের আশা।

নিখিল অসম স্বর্ণশিল্পী সমিতির বক্তব্য, এ বছর পুজোর সময় থেকেই বাজার মন্দা ছিল। কিন্তু গত পাঁচ দিনে ব্যবসা কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। পুরনো ৫০০ বা ১ হাজার টাকার নোট নিয়ে গয়না কিনতে আসা ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই অবস্থা শিলং, ইম্ফলেও। ইম্ফলে প্রায় সব গয়নার দোকান বন্ধ। সমিতি জানায়, উত্তর-পূর্বে প্রায় ৪ হাজার ছোট গয়নার দোকান রয়েছে। তার মধ্যে অসমেই রয়েছে তিন হাজার দোকান। তাঁদের অনেকেই নিজেদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট তৈরি করছেন বা বসাচ্ছেন কার্ড সোয়াপ করার যন্ত্র। মিজোরাম হয়ে মায়ানমারের চোরাই সোনার বাজারও ধাক্কা খেয়েছে। গুয়াহাটির ফাস্ট ফুডের দোকানগুলিরও অবস্থা শোচনীয়। খুচরো না থাকার ধাক্কায় অধিকাংশ ছোট খাবারের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। ফ্যান্সি বাজারের কাপড় বা বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকানগুলিতে সব লেনদেন নগদ ও খুচরো টাকায় হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানকার কেনাবেচাও কমে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetization Currency note Municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE