প্রতীকী চিত্র।
রাতদিন মুখ গুঁজে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে ডুবে থাকার জন্য আজকের প্রজন্মকে কম বকুনি খেতে হয় না বড়দের কাছে। জবাবে তারাও এখন বলতে পারে, এ সব করেও সরকারি কাজ পাওয়া যায়! কারণ, নরেন্দ্র মোদীর সরকার এখন নয়া মগজাস্ত্রের সন্ধান শুরু করেছে। আপনি কি সরকারের জন্য কাজ করতে চান— এই মর্মে বিজ্ঞাপনও দিয়েছে সরকার। সরকারি ওয়েবসাইট ‘মাই গভ’-এর পক্ষ থেকে তাতে বলা হয়েছে, সরকারের নানা মন্ত্রক, দফতর ও সংস্থায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পারদর্শী ব্যক্তিদের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। তার জন্য বায়ো-ডেটাও চেয়েছে সরকার।
কারা পেতে পারেন এই কাজ ? বলা হয়েছে, যাঁরা সফল ভাবে টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কড্ইন, কোরা, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন ও তাতে পারদর্শিতা অর্জন করেছেন অথবা নিজের ব্লগের মাধ্যমে জনতার মতামতকে একজোট করছেন, এমন ব্যক্তিদের ‘সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে নিয়োগ করা হবে। ‘সোশ্যাল মিডিয়া’র সঙ্গে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছে গবেষক, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, অ্যাপ ডেভেলপারদের কাছ থেকেও। ‘সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ’ ছাড়়া কিন্তু বাকি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বেধে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যাঁর যত বেশি, তার ভিত্তিতে স্থির করা হবে, তাঁকে কোথায় নিয়োগ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী ক’দিন আগে ‘মাই গভ’-এর সঙ্গে যুক্ত নাগরিকদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেছেন। তাঁদের বেশ কয়েক জনকে পুরস্কৃতও করা হয়েছে। সরকার এ বার এই প্ল্যাটফর্মকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণ প্রজন্মই বেশি সক্রিয়। তাদের আরও বেশি করে কাছে টানাও সরকারের লক্ষ্য। যদিও বিজেপি সূত্রের মতে, এর পিছনে একটি কৌশলও রয়েছে। সেটা যতটা না সরকারি কাজে নাগরিকদের সামিল করার জন্য, তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক।
মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে পৌঁছে দেওয়ার পিছনে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি বড় ভূমিকা ছিল। গত লোকসভা ভোটে মোদীর রাজনৈতিক কৌশল যিনি ছকে দিয়েছিলেন সেই প্রশান্ত কিশোর ছিলেন এর নেপথ্যে। মোদীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে প্রশান্ত এই কাজটি করতেন। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর অনেকটা রাজনৈতিক নেতাদের ধাঁচেই শিবির বদল করেছেন প্রশান্ত। বিহারে নীতীশ কুমারকে মোদীর দলের বিরুদ্ধেই লড়িয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। এখন তিনি রাহুল গাঁধীর পথপ্রদর্শক।
প্রধানমন্ত্রী নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই সক্রিয়। সব সময় মন্ত্রী-সাংসদদেরও তা করার পরামর্শ দেন। কিন্তু পরের লোকসভা ভোটের বৈতরিণী পার হওয়ার জন্য মোদীরও চাই প্রশান্তর মতো কাউকে। যিনি মোদী-মাহাত্ম্য নতুন করে মেলে ধরতে পারবেন। গত বার মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সরকারে আসার কাজের থেকেও দ্বিতীয় দফায় কাজটি আরও কঠিন। কারণ, মোদীকে এ বার ‘অচ্ছে দিন’-এর মতো কোনও আশার লণ্ঠনকে সামনে রাখলেই চলবে না। নিজের সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে লড়াইটি করতে হবে। দলের বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যে টিম রয়েছে, তা দিয়ে সে কাজটি হওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই এখন থেকে হন্যে হয়ে নতুন মগজাস্ত্র খুঁজছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিজেদের সঙ্গে জোড়া যায়।
এখনও পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি আবেদনপত্র সরকারের ঝুলিতে জমা হয়েছে। সমস্ত আবেদন খতিয়ে দেখাও শুরু হয়েছে। আবেদন করার জন্য আর ১৫ দিন সময় রয়েছে। কে বলতে পারে, শিকে ছিঁড়বে কার ভাগ্যে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy