Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Farmers

থালা-প্রতিবাদে প্রেরণা মোদী!

দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার সিংঘুতে টানা ৩০ দিন আন্দোলনে বসে থাকা কৃষকদের একটি দল বেরিয়ে পড়লেন থালা-বাটি-খুন্তি-টিনের ক্যানেস্তারা হাতে। বাজাতে থাকলেন প্রাণপণে।

নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ চলাকালীন ক্যানেস্তারা বাজিয়ে বিক্ষোভ এক কৃষকের। রবিবার নয়াদিল্লির গাজিপুর সীমানায়। পিটিআই

নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ চলাকালীন ক্যানেস্তারা বাজিয়ে বিক্ষোভ এক কৃষকের। রবিবার নয়াদিল্লির গাজিপুর সীমানায়। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:২৭
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রেডিয়ো-বার্তা ‘মন কি বাত’ তখন সবে শুরু হয়েছে। রবিবার ঘড়িতে ঠিক বেলা ১১টা। দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার সিংঘুতে টানা ৩০ দিন আন্দোলনে বসে থাকা কৃষকদের একটি দল বেরিয়ে পড়লেন থালা-বাটি-খুন্তি-টিনের ক্যানেস্তারা হাতে। বাজাতে থাকলেন প্রাণপণে। দাবি, প্রধানমন্ত্রীর ‘অনুপ্রেরণাতেই’ কেন্দ্রের কানে ‘কিসান কি বাত’ পৌঁছে দিতে এই পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা!

মুহূর্তে ফিরে এল আর এক রবিবারের স্মৃতি। সে দিন, ২২ মার্চ, বিকেল পাঁচটায় পাঁচ মিনিটের জন্য দেশের সবাইকে বাড়ির ছাদে, ব্যালকনিতে বা জানলায় এসে থালা, বাটি, শাঁখ, ঘণ্টা বাজাতে বলেছিলেন মোদী। কোভিডের বিরুদ্ধে ডাক্তার, নার্সের মতো যাঁরা একেবারে সামনে থেকে লড়ছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই ওই ‘থালি বাজাও’-এর ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবাদী কৃষকদের দাবি, নিজেদের সমস্যার কথা সরকারের কানে পৌঁছে দিতে মোদীর দেখানো সেই রাস্তাই এ দিন বেছে নিয়েছেন তাঁরা।

বছরের শেষ ‘মন কি বাত’। তাই স্বাভাবিক ভাবেই নানা প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে আসছিল প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায়। ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ মন্ত্রে নতুন বছরে সবাইকে দেশে তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহারের সঙ্কল্প করতে বললেন। বাদ গেল না সারা দেশে জঙ্গলে চিতার সংখ্যাবৃদ্ধির খুশির খবরও (যদিও আসলে বেড়েছে চিতাবাঘের সংখ্যা। চিতার নয়)। ঠিক তার আগে শিখ গুরুদের শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী। স্মরণ করলেন গুরু গোবিন্দ সিংহ ও গুরু তেগ বাহাদুরকে। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজল না। সিংঘু, টিকরি সীমানায় আন্দোলনে বসে থাকা পঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকেরা বরং আরও জোরে থালা পেটাতে শুরু করলেন।

আরও খবর: ভিন ধর্মে বিয়েতে বাধা, পুলিশের ভয়ে উত্তরপ্রদেশ ছাড়ল যুগলরা

আরও খবর: সোমবার ক্রিকেট মাঠে একই মঞ্চে থাকতে পারেন দাদা আর অমিত শাহ

শুধু দিল্লির সীমানায় অবরোধে নয়। সারা পঞ্জাব, হরিয়ানা জুড়েই প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সময়ে কৃষি আইনের প্রত্যাহারের দাবিতে থালা-বাটি-টিনের ক্যানেস্তারা বাজানো চলল। চাষিরা বললেন, অন্তত এতে যদি ক্ষোভের কথা কেন্দ্রের কানে যায়।

থালা প্রতিবাদে প্রেরণা

এ দিন মোদীর বক্তৃতার মধ্যেই খবর এসেছে, টিকরি সীমানায় পঞ্জাবের এক আইনজীবীর বিষ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে। কৃষক নেতাদের অভিযোগ, ফাজিলকা জেলার অমরজিৎ সিংহ নামে ওই আইনজীবী কৃষক আন্দোলনের জন্য আত্মবলিদান করেছেন। দাবি, তাঁর পকেট থেকে পাওয়া গিয়েছে ‘মোদী, দ্য ডিক্টেটর’-কে লেখা একটি সুইসাইড নোট। এর আগে করনাল গুরুদ্বারের সন্ত রাম সিংহও আত্মঘাতী হয়েছিলেন। পরে দিল্লির সীমানায় বিক্ষোভ থেকে ফিরে আত্মঘাতী হন ভাতিন্ডার এক কৃষকও।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য গুরু গোবিন্দ সিংহের আত্মবলিদানের কথা স্মরণ করেছেন। রেডিয়ো-বার্তায় বলেছেন, ‘‘এ দেশে আততায়ীদের থেকে, অত্যাচারীদের থেকে দেশের হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতি, রীতি-রেওয়াজকে রক্ষা করতে যাঁরা আত্মবলিদান করেছেন, আজ তাঁদের স্মরণ করার দিন। আজকের দিনে গুরু গোবিন্দজির দুই পুত্র সাহিবজাদে জ়োরাওয়ার সিংহ ও এবং ফতে সিংহকে প্রাচীরে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয়েছিল। আজকের দিনেই গুরু গোবিন্দ সিংহের মা, মাতা গুজরীও শহীদ হয়েছিলেন।’’

এক সপ্তাহ আগে, গত রবিবার, প্রধানমন্ত্রী আচমকা দিল্লির গুরুদ্বার রকাবগঞ্জে চলে গিয়েছিলেন। সে কথা মনে করিয়ে তিনি বললেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে গুরু তেগ বাহাদুরজির শহীদ হওয়ারও দিন ছিল। দিল্লিতে রকাবগঞ্জ গুরুদ্বারে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদনের, সেখানে মাথা ঠেকানোর সুযোগ পেয়েছি।’’

কিন্তু লাভ হল না। সিংঘু, টিকরিতে বসে থাকা চাষিদের সঙ্গে এ বার দিল্লি-গাজিয়াবাদ সীমানার গাজিপুরে উত্তরপ্রদেশের কৃষকেরাও ক্যানেস্তারা বাজানো শুরু করলেন। কৃষক সংগঠনের নেতা জগজিৎ সিংহ ডাল্লেওয়াল বলেন, ‘‘মোদীজি যদি মানুষের মনের কথা না-শোনেন, তা হলে আমাদের ওনার মন কি বাত-এর বিরোধিতা করতেই হবে।’’ রকাবগঞ্জের গুরুদ্বারের অদূরে যন্তর-মন্তরে পঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদরা ধর্নায় বসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’-এর সময়ে তাঁরাও থালা পেটাতে শুরু করেন।

রেডিয়োয় শোনা গেল, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘‘এ মাসেই গুরু গোবিন্দ সিংহের দ্বারা অনুপ্রাণিত বহু মানুষ মাটিতে শুয়ে থাকেন।’’ পঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদ রভনীত সিংহ বিট্টুর কটাক্ষ, ‘‘যত দিন কৃষকেরা নিজেদের দাবিতে এই প্রবল ঠান্ডায় রাস্তায় বসে রয়েছেন, তত দিন মোদী সরকারের পুরো মন্ত্রিসভারও উচিত বিছানা ছেড়ে মাটিতে শোওয়া।’’

২২ মার্চের পরে ২৭ ডিসেম্বর। ন’মাসের ব্যবধানে দেশ জুড়ে থালা ফের বাজল। তবে প্রথম বার যাঁর ডাকে, এ বার তাঁর বিরুদ্ধেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Protest Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE