সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পালানিস্বামী সদাশিবমকে রাজ্যপাল নিয়োগ করা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার চালাবে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-কে সরাসরি আক্রমণ করার কৌশল নিচ্ছে তাঁরা।
জেটলি কেন?
অবসরের পর বিচারপতিদের সরকারি বা সাংবিধানিক পদে নিয়োগের প্রশ্নে আপত্তি তুলে গত বছর ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় নেমেছিলেন রাজ্যসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেতা জেটলি। তিনি নিজেও একজন আইনজ্ঞ। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজুকে সেই সময়ে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেছিল মনমোহন সরকার। সেই প্রসঙ্গে জেটলি বলেছিলেন, “আরও অনেক বিচারপতি তো ছিলেন, কিন্তু এঁর ওপরেই কেন প্রধানমন্ত্রীর মন গলল!” এর সঙ্গেই তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “অবসরের ঠিক আগে কোনও কোনও বিচারপতির দেওয়া রায় অনেক সময়েই তাঁদের অবসরোত্তর পদ বা কাজ পাওয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে। অবসরের পরে পদ পাওয়ার আকাঙ্খা বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।” তাই জেটলির প্রস্তাব, “কোনও বিচারপতির অবসরের পর অন্তত দু’বছর তাঁকে সরকারি বা সাংবিধানিক পদে নিয়োগ করা ঠিক নয়।” এ বিষয়ে জেটলি শুধু সভা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেননি, তাঁর ব্লগেও লিখেছিলেন। সদাশিবম সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন অমিত শাহ-র বিরুদ্ধে ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছিলেন। তা ছাড়া, তাঁর অবসর গ্রহণের এক বছরও কাটেনি। সেই কারণেই কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মা প্রশ্ন তুলেছেন, “সদাশিবমের কোন কাজে মোদী এবং শাহ খুশি হয়েছিলেন যে তাঁকে রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হল?” এ ব্যাপারে সরাসরি অমিত শাহ-র বিরুদ্ধে মামলা খারিজের প্রসঙ্গও তুলছেন কংগ্রেস নেতারা।
অন্য দিকে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ বলেছেন, “নিজের কথা কী ভাবে জেটলি বেমালুম ভুলে গেলেন, সেটাই আশ্চর্যের!” তাঁর কটাক্ষ, “তা হলে প্রধানমন্ত্রী এখন জেটলির পরামর্শও নিচ্ছেন না!” সরকারের ভিতরে মতভেদ উস্কে দিতে সলমনের মন্তব্য, “বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা বজায় রাখা নিয়ে জেটলির বরাবরের আগ্রহ রয়েছে বলেই জানি।”
ঘটনা হল, সদাশিবমকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত ঘোষণার দিন জাপানে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই দিনই জেটলি হাসপাতালে ভর্তি হন। ফলে জেটলিকে প্রশ্ন করার সুযোগ সংবাদমাধ্যম পায়নি। তিনিও এ ব্যাপারে মনোভাব স্পষ্ট করেননি। তবে বিজেপি সূত্র বলছে, এ সব নিয়ে দলেরই একাংশ অস্বস্তিতে। তাঁদের মতে, সদাশিবমকে রাজ্যপাল নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক স্তরে নিয়েছেন। হতে পারে জেটলি আপত্তি করলেও তিনি শোনেননি। কংগ্রেস নেতৃত্ব মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার আসন্ন ভোটের প্রচারেও সদাশিবমের নিয়োগের সঙ্গে অমিত শাহ-র সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইছেন। রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, আইনত প্রাক্তন বিচারপতিকে রাজ্যপাল পদে নিয়োগে কোনও বাধা নেই, তা বিরোধীরাও জানেন। এখানে নৈতিকতা ও বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। রাহুল চাইছেন, ‘নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে’ প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদে নৃপেন্দ্র মিশ্রের নিয়োগ, বর্তমান সেনা প্রধানের সমালোচনা করা সত্ত্বেও প্রাক্তন সেনা প্রধান ভি কে সিংহকে মন্ত্রিসভায় রেখে দেওয়া এবং সদাশিবমের নিয়োগ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সমালোচনা চালিয়ে যেতে। যাতে সরকারের ‘অনৈতিক’ কাজ সম্পর্কে মানুষের মনে ধারণা তৈরি হয়। মনে হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে মোদী নৈতিকতার ধার ধারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy