কৃষ্ণগোপাল ও দত্তাত্রেয়
দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে বিজেপির বিপুল জয়ের দুই ‘স্ট্রাইকার’ নিঃসন্দেহে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। কিন্তু নেপথ্যে ছিলেন আরও চার জন। এঁরা হলেন আরএসএস-এর দুই সহ-সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণগোপাল ও দত্তাত্রেয় হোসাবালে। এবং বিজেপির সহ-সংগঠন সম্পাদক শিবপ্রকাশ ও উত্তর প্রদেশের সংগঠন সম্পাদক সুনীল বনসল।
কৃষ্ণগোপাল এখন সঙ্ঘের সঙ্গে বিজেপির সমন্বয়ের কাজটি করেন। বিহার ভোটের পর দত্তাত্রেয় হোসাবালেকে লখনউয়ে নিয়ে যান সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত। গত এক বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের পাঁচটি অঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা কৌশল তৈরি করেছিলেন দত্তাত্রেয়। যার সফল রূপায়ণের কারণেই বিজেপি একক ভাবে তিনশোর বেশি আসনে জিতেছে বলে সঙ্ঘের নিজস্ব বিশ্লেষণে মনে করা হচ্ছে।
বিপুল জয়ের অঙ্কটা কী? সঙ্ঘের ভূমিকাই বা কী? কৃষ্ণগোপালের কথায়, ‘‘রাজনীতির সঙ্গে সঙ্ঘের যোগ নেই। তবু দেশের অনেক রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য সঙ্ঘমুক্ত ভারত বানানো। তখন তো সঙ্ঘ-কর্মীরা ভূমিকা নেবেনই। উত্তরপ্রদেশেও তাই হয়েছে।’’ কী ভাবে? কৃষ্ণগোপাল জানান, প্রতি হাজার জনসংখ্যা পিছু ১৫-২০ জন স্থানীয় প্রভাবশালীকে বাছা হয়। কৃষ্ণগোপালের কথায়, ‘‘তখন ভোটের নামগন্ধও ছিল না। কর্মীরা মানুষকে বোঝান, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, চামার, দলিতের চেয়েও বড় জাতীয়তাবোধ। নাগরিকদের ভোটব্যাঙ্কের দৃষ্টিতে না দেখে সমানাধিকারের কথা বলেছিল সঙ্ঘ। মানুষ তা গ্রহণ করেছে।’’
প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও এ বার বিশেষ কৌশল নেওয়া হয়েছিল। সঙ্ঘের এক নেতার কথায়, ‘‘অন্য সব দল ‘কমিউনিটি লিডার’ খুঁজেছে। বিজেপি যাঁরা ‘লিডার্স ইন দ্য কমিউনিটি’, তাঁদের খুঁজে খুঁজে প্রার্থী করেছে। যোগ্যতার ভিত্তিতেই মানুষ তাঁদের ভোট দিয়েছেন।’’
বিহারে দায়িত্বে ছিলেন দত্তাত্রেয়। বিহারের কথা মাথায় রেখে তাঁর প্রথম অঙ্ক ছিল, বিজেপি-বিরোধী ভোট যাতে এক জোট না হয়, তা নিশ্চিত করা। কৌশলে সফল সঙ্ঘ।
২০১৪-র ভোটের আগে রাজস্থান থেকে সুনীল বনসলকে লখনউ নিয়ে যান অমিত। লোকসভা ভোটের পর সুনীলকে উত্তরপ্রদেশের সংগঠনের পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরের আড়াই বছর ধরে সুনীল বুথস্তর পর্যন্ত সংগঠন গড়ে তুলেছেন। লোকসভা ভোটের পর উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা শিবপ্রকাশকে জাতীয় স্তরে নিয়ে আসেন অমিত। এ বার ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় শিবপ্রকাশকে। এখন শিবপ্রকাশের নামও সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উঠে আসছে।
সঙ্ঘের খবর, দলের হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীরা সামনে থেকে প্রচার করেছে। নেপথ্যে এই চার নেতা সমন্বয়ের কাজ করেছেন। প্রচারে ঢেউ উঠলেও সংগঠন পোক্ত না হলে তা ধরে রাখা যাবে না, সে কথা বুঝেছিলেন চার মূর্তি। তাই প্রচারে মানুষের মন বোঝার চেষ্টা করেন। ‘মাইক্রোলেভেল ভোট ম্যানেজমেন্টে’-এর পুরোটা এঁদের হাতেই হয়েছে। জয়ের পর এঁরা সামনে আসতে নারাজ। টিভি ক্যামেরা, লাইট, অ্যাকশন থেকে বহু দূরে নিজেদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান এই চার মূর্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy